বিরল রোগে আক্রান্ত সাতক্ষীরার মুক্তামণির ডান হাতের রক্তনালীর টিউমারের অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ড. সামন্ত লাল।
Advertisement
শনিবার সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের দ্বিতীয় তলার অপরাশেন থিয়েটারে মুক্তার অস্ত্রোপচার শুরু হয়।
পরে অস্ত্রোপচার শেষে সাংবাদিকদের তা সফল হওয়ার কথা বলেন সামন্ত লাল।
তিনি বলেন, মুক্তার হাত রক্ষা করে মাংস কেটে ফেলা সম্ভব হয়েছে। তার হাত ঠিক আছে।
Advertisement
অস্ত্রোপচার পর মুক্তার জ্ঞান ফিরেছে এবং সে চিকিৎসকদের কথায় সাড়া দিচ্ছে বলেও জানান সামন্ত লাল।
বার্ন ইউনিটের ৩ তলায় অপারেশন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ বার্ন ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক আবুল কালাম বলেন, অপারেশন থেকে পোস্ট অপারেটিভ (অপারেশন পরবর্তী) অবস্থা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাকে ৫-৬ সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করা হবে। অপারেশনের পর তার রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এটি মুক্তার প্রথম অপারেশন ছিল, তার আরও বেশ কয়েকটি অপারেশন লাগবে। প্রতি সপ্তাহে ১টা করে অপারেশন করা হবে। আপাতত তার হাতের টিউমারের সবটুকু মাংস কাটা হয়েছে। বুক ও ঘাড়ে এখনও রোগটি আছে। সেগুলো আস্তে আস্তে চিকিৎসা করা হবে।
মুক্তাকে ঝুঁকিমুক্ত কখনোই বলা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে আজকের অপারেশনের কারণে ঝুঁকি আগের থেকে অনেকটা কমে গেছে।
Advertisement
অপারেশন সফল করতে ওয়ার্ড বয় থেকে প্রফেসর পর্যন্ত সবার অবদান ছিল বলেও জানান আবুল কালাম।
এরআগে শনিবার সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে মুক্তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয় বলে জানান তার বাবা ইব্রাহীম হোসেন।
তার আগে ৫ আগস্ট মুক্তার ডান হাতের বায়োপসি সম্পন্ন হয়।
এরপর ৮ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকরা জানান, মুক্তার হাতের একাধিক অপারেশনের প্রয়োজন রয়েছে। তার দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা দরকার। একপর্যায়ে তার বাম হাত কেটে ফেলতে হতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনের আগে অবশ্য তার চিকিৎসা নিয়ে বাবা-মার সঙ্গে কথা বলেন চিকিৎসকরা। হাত কাটার আশঙ্কার কথা জানান। উত্তরে মুক্তার বাবা ইব্রাহীম হোসেন ও মা আসমা খাতুন বলেন, আপনারা মুক্তার জীবন রক্ষায় যা যা প্রয়োজন করুন।
সংবাদ সম্মেলনের পর ইব্রাহীম হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, মুক্তার চিকিৎসা নিয়ে আমরা খুব সন্তুষ্ট। এখানে অনেক বেশি যত্ন নেয়া হচ্ছে যা আগে কোথাও নেয়া হয়নি। ডাক্তারদের উপর আমার ভরসা আছে। জীবন রক্ষার জন্য তারা যা করতে চান এতে আমার কোনো আপত্তি নাই। আমরা শুধু আমাদের মেয়েকে চাই।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিরল চর্মরোগে আক্রান্ত সাতক্ষীরার শিশু মুক্তাকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। গত ৯ জুলাই জাগো নিউজে ‘লুকিয়ে রাখতে হয় মুক্তাকে’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর মুক্তার চিকিৎসা দেয়ার দায়িত্ব নেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তার যাবতীয় চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নেন।
এআর/এনএফ/এমএস