দেশজুড়ে

এবার কহিনুর পাগলীর দায়িত্ব নিলেন ব্যাংকার শামীম

ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুরের ডোমরাকান্দি কৃষি কলেজের রাস্তার পাশে যাত্রী ছাউনির ভেতরে উলঙ্গ এক পাগলীর বসবাস। দীর্ঘ দুই আড়াই মাস ওই রাস্তার পাশ দিয়ে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় বিষয়টি চোখে পড়ে রুহুল আমিন নামের এক দন্ত চিকিৎসকের। মাঝে মধ্যে যাত্রী ছাউনির কাছে দাঁড়িয়ে দেখতেন পাগলীর অসহায়ত্ব।

Advertisement

নিজের কাছে খারাপ লাগলে ওই মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর কাছে গিয়ে কথা বলার চেষ্টা করতেন। কিছু খেতে চাইলে পাশের দোকান থেকে খাবার কিনে এনে দিতেন। মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীর জন্য কিছু করার ইচ্ছা থাকলেও আর হয়ে ওঠেনি।

এরই মধ্যে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয় ঢাকায় কর্মরত যমুনা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার শামীম আহম্মেদের সঙ্গে। যিনি বিগত দিনে বেশ কয়েকজন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে নিজের দায়িত্বে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করিয়েছেন। শামীম আহম্মেদের ফেসবুক প্রোফাইলে মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চিত্র দেখে বিষয়টি তাকে জানান।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রুহুল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফরিদপুরে আসেন শামীম আহম্মেদ। রুহুল আমিনের বাড়ি ফরিদপুর সদর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের আকইন গ্রামে।

Advertisement

রুহুল আমিন বলেন, আমি কাজে যাওয়া আসার সময় ২৫-২৮ বছর বয়সী ওই মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে নোংড়া আর্বজনার মধ্যে পড়ে থাকতে দেখতাম। নাম ঠিকানা জিজ্ঞাসা করলে নিজের নাম কোহিনুর, বাবার নাম মনছুর, মায়ের নাম ছালেকা, বাড়ি সিরাজগঞ্জ, তারা দুই ভাই ও দুই বোন- এমন অসম্পূর্ণ কিছু তথ্য দিত।

তিনি আরও বলেন, গত দুদিন আমার বাড়িতে থেকে শামীম ভাই ওই মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর খোঁজ খবর নেন এবং তাকে দেখতে যান। তাকে হাত-মুখ ধুইয়ে দেন। খাওয়া-দাওয়া করান। তার সেবা দেখে আমি আশ্চর্য হই। তিনি ওই মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর সুচিকিৎসার দায়ভার নিতে চান।

শামীম আহম্মেদ জাগো নিউজকে বলেন, আমার কর্মস্থল ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্নস্থান থেকে বেশ কয়েকজন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে ঢাকায় এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে পেরেছি। হাসপাতালে কিছুটা চিকিৎসার পরে নিজের বাসার পাশে বেতনভুক্ত বুয়া (কাজের লোক) রেখে তাদের সেবার ব্যবস্থা করে থাকি। ফেসবুকে ফরিদপুরের রুহুল আমিন ভাইয়ের দেয়া ছবি ও তথ্য জেনে ওই মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে নিতে এসেছি।

কোহিনুরকে ঢাকায় নেয়ার বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়ে ব্যক্তি উদ্দ্যোগে তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়ার কথা বলতে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে যান শামীম আহম্মেদ। জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে বিষয়টি গ্রহণ করে ওই নারীর জন্য কিছু কাপড়ের ব্যবস্থা করেন। মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর শরীরে কিছু আঘাত ও ক্ষত থাকায় প্রাথমিক চিকিসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থাও করেন জেলা প্রশাসক।

Advertisement

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, জেলা প্রশাসক আমাকে ফোন করে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীর চিকিৎসার এবং শুক্রবার সকাল পর্যন্ত হাসপাতালে রাখার ব্যবস্থা করতে বলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে হাসপাতালে আনা হলে তার পায়ে পুরনো ফ্যাকচার ছিল সেখানে ব্যান্ডিজসহ প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।

এস.এম. তরুন/আরএআর/এমএস