জাতীয়

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয় : আইনমন্ত্রী

বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছ থেকে জাতীয় সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেয়া সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বতিলের যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে বলেও জানান আনিসুল হক।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ৯ দিন পর এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানালেন আইনমন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, ‘আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছেন সে রায়ের সঙ্গে আমাদের দ্বিমত থাকলেও রায়ের প্রতি আমার শ্রদ্ধা রয়েছে। আমি অত্যন্ত বিনীতভাবে বলতে চাই যে শ্রদ্ধেয় আপিল বিভাগ যে যুক্তিতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করেছে সেই যুক্তি আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘আমরা যেহেতু এই রায়ে সংক্ষুব্ধ তাই আমরা নিশ্চয়ই চিন্তা-ভাবনা করছি যে, এই রায়ের রিভিউ করা হবে কি না। আমরা এখনও কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হইনি। কারণ রায়ের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো এখনও নিবিড়ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।’

আনিসুল হক বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি, আমাদের নিরীক্ষায় প্রধান বিচারপতির রায়ে যে সব আপত্তিকর এবং অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য আছে সেগুলো এক্সপাঞ্জ করার উদ্যোগও আমরা নেব।’

ষোড়শ সংশোধনী দ্বারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আরও সুদৃঢ় ও স্বচ্ছ হওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল দাবি করে আনিসুল হক বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রকে সুদৃঢ় করার গণতন্ত্রের মৌলিক মন্ত্র চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স পদ্ধতিতে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার উদ্দেশ্যে ষোড়শ সংশোধনী পাস করি।’

তিনি বলেন, ‘ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত গণপরিষদের পাস করা সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে কোনো বিচারপতিকে অপসারণ করা হয়নি। কিন্তু ১৯৭৭ সালের সামরিক শাসনের মাধ্যমে সংশোধিত ৯৬ অনুচ্ছেদ থাকার পরও সুপ্রিম কোর্টের অনেক বিচারককে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে রাজনৈতিক কারণে।’

Advertisement

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পদ্ধতি অত্যন্ত অস্বচ্ছ ও নাজুক বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী।

বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কাছ থেকে জাতীয় সংসদের হাতে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস হয় ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। যে বিধানটি ১৯৭২ সালের সংবিধানেও ছিল।

সংবিধানের এই সংশোধন মৌল কাঠামোতে পরিবর্তন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করবে- এমন যুক্তিতে ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ৫ নভেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়।

ওই রিটের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর রুল জারি করেন। ২০১৬ সালের ১০ মার্চ মামলাটির চূড়ান্ত শুনানি শেষে ৫ মে রায় দেন আদালত। রায়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করা হয়। চলতি বছরের ৩ জুলাই ওই রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের সেই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় ১ আগস্ট।

আরএমএম/এনএফ/পিআর