মসজিদ আল্লাহর ঘর। সুন্দর মসজিদ নির্মাণে রয়েছে অন্য রকম তৃপ্তি। তাইতে পৃথিবীতে মুসলমানরা তাদের সবচেয়ে প্রিয় স্থান মসজিদকে যুগে যুগে অনন্য সুন্দর স্থাপনা হিসেবে নির্মাণে অর্থ শ্রম ও সময় ব্যয় করেছেন।
Advertisement
বিশ্বব্যাপী তৈরি হওয়া মসজিদগুলোর দিকে তাকালেই যার প্রমাণ পাওয়া যায়। বর্তমান বিশ্বের সেরা স্থাপনাগুলোর মধ্যে মসজিদ আল-হারাম শ্রেষ্ঠ স্থাপনা হওয়াই যার জলন্ত প্রমাণ।এতদিন স্থাপত্য শিল্পীদের বিশেষ দৃষ্টি ছিল মসজিদের বাহিরের অংশ সৌন্দর্য বর্ধনে। এবার বহিরাংশের সৌন্দের্যের পাশাপাশি মসজিদের ভেতরের অনন্য সুন্দর দৃশ্য চিত্রিত হয়েছে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক আবহে। এ মসজিদটি হলো তুর্কীর কেরিশির (Kırşehir) শহরে।
এ মসজিদটিকে নির্মাণে স্থানীয় লোকেরা তাঁর ভেতরের ছাদকে আকাশের অবয়বে অংকন করেছেন। মসজিদের ফ্লোর বা মেজে’তে স্থাপন করেছেন দেখতে ঘাসের মতো কার্পেটে।মসজিদের ভেতরে রয়েছে সুবিশাল ঝুলন্ত ঝাড় বাতি। যা মসজিদের সৌন্দর্যকে আরে বাড়িয়ে দিয়েছে। মসজিদের মধ্যে সুবিশাল মিম্বারটি তৈরি হয়েছে বাঁশ ও কাঠের বেড়ায় আর ঘাসের ডিজাইনকৃত কার্পেটে আচ্ছাদিত হয়েছে মিম্বারের প্রতিটি ধাপ। তাওহিদের কালিমা খচিত মিম্বারের একটি গেটও রয়েছে।
যা তারা কুরআনুল কারিমের একটি আয়াতকে অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
Advertisement
এ মসজিদটি ১৯১০ সালে তুর্কীর কেরিশির শহরের ইয়েনসি এলাকায় অটোমান খিলাফতের অধীনে নির্মিত হয়েছিল। মসজিদটি প্রথমে অটোমান খিলাফতের আমির সুলতান আবদুল হামিদের নামে নামকরণ করা হয়। উইকেপিডিয়ার তথ্য মতে মসজিদটি ২১ জুলাই ১৯০৫ সালে নির্মিত হয়।মসজিদটি দীর্ঘদিন অবহেলা ও অযত্নে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। পরবর্তীতে একই জায়গায় মসজিদটি সংস্কার করে তার নাম দেয়া ‘হামিদি ক্যামি মসজিদ’।
বর্তমানে মসজিদটির ভেতরের শৈল্পিক মোটিফগুলো আজারবাইজানের একজন স্থপতির দ্বারা অংকন করা হয়। যা গতবছর (২০১৬) সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এ মসজিদে স্থানীয় অধিবাসীরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। শহরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ মসজিদটির সৌন্দর্য দেখতে এবং নামাজ আদায় করতে উপস্থিত হয়।একজন দর্শনার্থীর বক্তব্য হলো- ‘নামাজ আদায় করার সময় মনে করছিলাম যে আমি জান্নাতের বাগানে নামাজ আদায় করছি।’
মসজিদের ইমাম সেফ ইকিনচি বলেন, ‘আমি যখন এ মসজিদের ইমাম হিসেবে নিযুক্ত হলাম। তখন থেকেই আমি মসজিদটির ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করি এবং বর্তমান প্রকল্পের যে কারুকার্য হয়েছে সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ শুরু করি।তিনি বলেন, ‘যারা মসজিদের ভেতরের পরিবেশকে প্রাকৃতিক আকৃতিতে অংকন করেছেন তারা আমাকে বলেছেন যে, তারা সুরা বাকারার ২২নং আয়াত দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন। আর তাহলো-‘আল্লাহ্ তোমাদের জন্য পৃথিবীকে বিছানা এবং আকাশকে ছাদ হিসাবে সৃষ্টি করেছেন এবং আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করে তার দ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফল-মূল উৎপাদন করেছেন। সুতরাং তোমরা জেনে শুনে কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করো না। অর্থাৎ উপসনা পাওয়ার একমাত্র হকদার তিনিই।’ইমাম আরো বলেন, ‘মসজিদের ভিত্তি তৈরি করেছি। অতঃপর অংকন শুরু করেছি। চিত্রাংকনে আমরা মসজিদের ভেতরের অংশে ছাদে আকাশ থেকে পানি বর্ষণের চিত্র অংকন করেছি। মেহরাবের ওপর একটি জলপ্রপাত স্থাপন করেছি।
দেয়ালের প্রতিটি জানালার মাঝখানে গাছগুলো আঁকা হয়েছে। আমরা প্রকৃত পক্ষে কুরআনের আয়াত থেকে অনুপ্রেরণা লাভ করে মসজিদের ভেতরের দৃশ্যগুলো অংকন করেছি।’স্থানীয় বাসিন্দা ও মসজিদের সাবেক ইমাম জানান, ‘অটোমান সাম্রাজ্যের খলিফা সুলতান হামিদ মসজিদ এ স্থানেই নির্মিত ছিল; যা দীর্ঘ অবহেলা ও অযত্নে ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংসপ্রায় অবস্থায় ছিল, আমরা একই জায়গায় মসজিদটির সম্পত্তিতেই তা পুনঃনির্মাণ করেছি।’তিনি আরো বলেন, ‘যখনই মসজিদটিতে নামাজের জন্য প্রবেশ করি তখন আমাদের দেহ ও মন অন্যরকম অনুভূতি ও প্রশান্তি লাভ করে। আত্মিক প্রশান্তিতে আমরা নামাজ আদায় করি।’
Advertisement
এমএমএস/জেআইএম