তথ্যপ্রযুক্তি

ভার্চুয়ালি কাছে আনলেও বিচ্ছিন্নতা বাড়াচ্ছে ফেসবুক

ফেসবুক এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এর মাধ্যমে পুরো পৃথিবীই বলতে গেলে মানুষের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। দিনকে দিন আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে ফেসবুক। বর্তমানে পৃথিবীর অন্তত ২০০ কোটি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করছে।

Advertisement

তবে ফেসবুকের সামাজিক গুরুত্ব, জনজীবনে প্রভাব ও বিচিত্রতা নিয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিও কম নয়। ফেসবুক মানুষকে ভার্চুয়ালি এক প্লাটফর্মে দাঁড় করালেও প্রকৃতঅর্থে আরও বেশি বিভেদ তৈরি করে চলেছে- এমনটাই মত অনেকেরই।

সম্প্রতি গালফ নিউজের ওয়েব এডিটর মাইকেল কোয়েৎজির লেখা এক নিবন্ধে উঠে এসেছে ফেসবুকের আরও কিছু নেতিবাচক দিক।

তিনি লিখেছেন, ছয় মাস আগে যখন তিনি ফেসবুক ব্যবহার বন্ধের ঘোষণা দেন; তখন তার বন্ধু-স্বজনদের অভিব্যক্তি ছিল- যেন তিনি অক্সিজেন গ্রহণ বন্ধ করছেন। অনেকেই জানতে চান, ফেসবুক বন্ধ করে তিনি সবার সঙ্গে সংযুক্ত, বিশ্বের খবরাখবর, চলমান ঘটনা কীভাবে পাবেন।

Advertisement

কিন্তু মোবাইল ফোনে ফেসবুকিং ধূমপান বা অন্যান্য আসক্তির মতোই বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে বলেও জবাব দেন কোয়েৎজি। সেইসঙ্গে ফেসবুক ব্যবহার ছাড়াই দিব্যি ভালো আছেন, অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক কি সামাজিকতা আরও অটুট আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ফলে ফেসবুক ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে কখনোই দুঃখ হয় না তার।

তার মতে, ফেসবুক সর্বরোগের মহৌষধের মতো। এতে বন্ধুদের খবর, ছবি, ঘটনাবলী সব জানা গেলেও বাস্তবতা ভিন্ন। ফেসবুকে একই ঘটনার ৫০ রকমের ভিডিও পাওয়া যায়, কিন্তু ওই ঘটনা নিয়ে দুই বন্ধুর একমত পাওয়া কঠিন- উপলদ্ধি তার।

ফেসবুক ব্যবহারের আগে ও পরের স্মৃতি রোমন্থন করে তার যুক্তি- এর আগের সময়টাই জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রেখেছে। ফেসবুক জীবনমানের উন্নয়ন ঘটায় না বলেই মানেন তিনি।

ফেসবুক একত্রে অনেকের সমাবেশ ঘটায়, ভাবনার জানান দেয়। ঘটনাপ্রবাহ জানায়। কিন্তু একইসঙ্গে এটা তৈরি করে চলছে বিভক্তি। যেখানে মুহূর্তে একজন বন্ধুকে ‘ব্লক’ করার সুযোগ থাকে। ফলে প্রকৃত বন্ধুত্বের কাছে ফেসবুকীয় বন্ধুত্ব অনেকটাই মেকি।

Advertisement

ফেসবুক মানুষকে বাস্তবতা থেকে দূরে ঠেলে দেয়। বাস্তবতার বদলে মানুষকে ফেসবুকের নিউজ ফিডের আদলে চালিত করে। কিন্তু ফেসবুকের বাইরের জীবন আরও আকর্ষণীয় ও মজবুত বলে মনে করেন কোয়েৎজি।

কোয়েৎজির বক্তব্যকে সমর্থনও করে বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত কিছু গবেষণা। ফেসবুকের অনেক ইতিবাচক দিক থাকলেও বিপরীত দিকটাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এটা মানুষকে আবেগী, অনেকটা নেশাগ্রস্তের মতো করে তুলছে। বিশেষ করে তরুণ সমার্জকে উদ্ভাবনবিমুখ ও অলস করার পেছনে ফেসবুক অনেকাংশে দায়ী।

ফেসবুক বিপুলসংখ্যক মানুষকে বাস্তবতা থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তি উন্নয়নের যুগে ফেসবুকে ভার্চুয়ালি মানুষকে কাছে আনলেও মূলত অদৃশ্য বিচ্ছিন্নতা বাড়াচ্ছে বলে মনে করেন অনেকে।

এসআর/এনএফ/আইআই