প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স আহরণের প্রায় ৬৫ শতাংশ আসে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া ও কুয়েত থেকে। বিদায়ী অর্থবছরে (২০১৬-১৭) এই পাঁচ দেশ থেকেই রেমিট্যান্স কম এসেছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক রেমিট্যান্স প্রবাহে।
Advertisement
রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি, জনশক্তি রফতানিতে ভাটা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাসের কারণে এমনটি হয়েছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। এ ছাড়া এসব দেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ প্রেরণের প্রবণতা বাড়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীরা দেশে মোট এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পাঠিয়েছেন। যা আগের অর্থবছরে (২০১৫-১৬) ছিল এক হাজার ৪৯২ কোটি ৬২ লাখ মার্কিন ডলার। সে হিসেবে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স কমেছে ২১৬ কোটি ১৭ লাখ ডলার বা ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। প্রতি ডলার ৮০ টাকা হিসাবে এ অঙ্ক দাঁড়ায় ১৭ হাজার ২৯৪ কোটি টাকায়।
জানা গেছে, প্রবাসী আয়ের প্রায় ২৫ শতাংশই আসে সৌদি আরব থেকে। গত অর্থবছরে সেখান থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহ সবচেয়ে বেশি কমেছে।
Advertisement
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সৌদি আরব থেকে ২২৬ কোটি ৭২ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে। যা আগের অর্থবছরে ছিল ২৯৫ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। ফলে শুধু সৌদি থেকেই গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ৬৯ কোটি ডলার।
রেমিট্যান্স আহরণে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। গত অর্থবছরে দেশটি থেকে ২০৯ কোটি ৩৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ২৭১ কোটি ১৭ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত অর্থবছরে আরব আমিরাত থেকে রেমিট্যান্স কমেছে ৬১ কোটি ৮২ লাখ ডলার।
একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স কমেছে ৭৩ কোটি ৫৫ লাখ ডলার বা ৩০ শতাংশ। গত অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ১৬৮ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ২৪২ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে মালয়েশিয়া থেকে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১১০ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। যা আগের অর্থবছরে ছিল ১৩৩ কোটি ৭১ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত অর্থবছরে মালয়েশিয়া থেকে রেমিট্যান্স কম এসেছে ২৩ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। এ ছাড়া গত অর্থবছরে কুয়েত থেকে রেমিট্যান্স কম এসেছে ৬৬ লাখ ডলার।
Advertisement
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রবাসী আয় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে গত কয়েক বছর ধরে এ খাতে নেতিবাচক প্রবণতা চলছে। যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত।
এ অবস্থায় প্রবাসী আয় বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে রেমিট্যান্স প্রেরণে ব্যাংকের ফি কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি দেশের ২০ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই সভায় তাদের কাছে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর উপায় নিয়ে পরামর্শ চাওয়া হয়। তবে রেমিট্যান্স প্রেরণে ব্যাংকের চার্জ যৎসামান্য থাকায় ফি কমানোর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপ প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, ২০১৬ সালে মোট প্রবাসী আয়ের ৪৯ দশমিক ২৮ শতাংশই অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক পরিমাণ এসেছে ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে। এ হার ২০১৩ সালে ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। ওই বছরে প্রবাসী আয়ের ৬৭ দশমিক ৩২ শতাংশ এসেছিল ব্যাংকিং চ্যানেলে, বাকি ৩২ দশমিক ৬৮ শতাংশ এসেছিল অবৈধ উপায়ে।
এসআই/এমএমজেড/এমএআর/আরএস/আইআই