ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হোমিওপ্যাথিতে (এনআইএইচ) তিন দশক ধরে উচ্চপদে কর্মরত শ্যামলেন্দু ভৌমিক। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তিনি নাকি ভারতীয় নন। অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে তদন্তে নেমেছে সিবিআই। গত ৩০ জুন শ্যামলেন্দু ভৌমিকের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির তিনটি ধারা, দুর্নীতি দমন আইনের দু’টি এবং নাগরিকত্ব আইনের একটি ধারায় মামলা করা হয়।
Advertisement
শ্যামলেন্দু ভৌমিক বেহালার বাসিন্দা। গত ১২ জুন এনআইএইচের এক কর্মকর্তা সিবিআইকে একটি চিঠি দেন। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৫ সালে কলকাতার রসা রোডের এক বাসিন্দা অভিযোগে দাবি করেছিলেন, শ্যামলেন্দু বাংলাদেশের বাসিন্দা। তিনি রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার আবেদনও করেননি। অথচ ভারতে আসার পর ১৯৮৩ সালের ১৯ জানুয়ারি তিনি হিন্দুস্থান পার্কের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আঞ্চলিক দফতরে চাকরিতে যোগ দেন।
ওই অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ১৯৮৭ সালের এপ্রিলে তিনি এনআইএইচের জুনিয়র অ্যাকাউন্ট্যান্ট পদে নিযুক্ত হন। যদিও রসা রোডের ওই বাসিন্দার দাবি ছিল, ওই পদের জন্য অ্যাকাউটেন্সিতে স্নাতক হওয়া আবশ্যক।
ওই চিঠি পাওয়ার পর এনআইএইচের তৎকালীন ডিরেক্টর সংস্থার চিফ ভিজিল্যান্স অফিসারকে (সিভিও) অভিযোগের তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। গত ৯ মে সিভিও তার তদন্ত রিপোর্ট জমা দেন। রিপোর্টে লেখা হয়, শ্যামলেন্দুর পেশ করা নথি পরীক্ষা করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ওই রিপোর্ট পাওয়ার পরই সংস্থার ডিরেক্টর ঘটনার বিবরণ দিয়ে সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখায় তদন্তের আর্জি জানিয়ে চিঠি লেখেন।
Advertisement
সিবিআইয়ের এফআইআরে লেখা হয়েছে, ‘ভিজিল্যান্স তদন্তে প্রকাশ, শ্যামলেন্দু ১৯৮৩ সালের ২৩ মার্চ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া ‘সার্টিফিকেট অব রেজিস্ট্রেশনে’ নিজেকে ভারতীয় নাগরিক বলে দাবি করেছিলেন। কিন্তু সার্টিফিকেট পাওয়ার আগে (১৯ জানুয়ারি, ১৯৮৩) তিনি কাজে যোগ দেন। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় কার্যালয়ে কাজে যোগ দেওয়ার সময় শ্যামলেন্দু নিজেকে শ্যামনগরের বাসিন্দা বলে দাবি করেছিলেন। কিন্তু তার বায়োডাটা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তিনি বাংলাদেশের কুমিল্লা থেকে ১৯৭৫ সালে মাধ্যমিক এবং ১৯৭৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ১৯৮০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক এবং ১৯৮১ সালের আগস্টে ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানের স্নাতকোত্তর সাপ্লিমেনটারি পরীক্ষায় পাশ করেছিলেন। অর্থাৎ ১৯৮১ সালে তিনি বাংলাদেশে ছিলেন।’
এফআইআরে এ-ও লেখা হয়েছে, ‘শ্যামলেন্দুর সার্টিফিকেট অব রেজিস্ট্রেশনে তার জন্মস্থানের জায়গায় লেখা আছে বাংলাদেশের বেগমগঞ্জ থানা এলাকার চৌমুহানির নাম। আর স্থায়ী ঠিকানা হিসাবে লেখা হয়েছে বেহালার জয়শ্রী পার্ক। কিন্তু ভারতের স্বরাষ্ট্র দফতর ২০১৪ সালের মার্চে একটি চিঠিতে জানিয়েছিল, নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য শ্যামলেন্দুর কোনও আবেদনপত্রের খোঁজ তারা পায়নি।’
অভিযুক্ত শ্যামলেন্দু ভৌমিক এ বিষয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি সরকারি কর্মচারী। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে কিছুই বলতে পারব না।’
এআরএস/জেআইএম
Advertisement