নির্বাচন কমিশন (ইসি) চলমান সংলাপকে ‘তামাশায়’ পরিণত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
Advertisement
তিনি বলেন, “সংলাপের নামে যা করছেন তা মানুষ ‘তামাশা’ বলেই ধরে নিয়েছে। এসব বন্ধ করুন, মানুষকে ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে কাজ করুন। তবে আপনাদের ওপর জনগণের আস্থা ফিরবে।”
সোমবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সংগঠনের সাবেক দফতর সম্পাদক মুন্সি জামাল উদ্দিন আহম্মেদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ কর্মসূচির আয়োজন করে স্বেচ্ছাসেবক দল।
Advertisement
প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) উদ্দেশ্য করে রিজভী বলেন, ‘সংলাপে অংশ নিয়ে সুশীল সমাজের প্রায় ৯০ ভাগই যে বক্তব্য দিয়েছেন তা নিয়ে সিইসি বললেন, ‘তারা যে সুপারিশ করেছেন, তা শাসনতন্ত্র ও প্রচলিত আইনে বলা আছে।’ যদি বলাই থাকে তাহলে আপনি ‘সংলাপের নামে তামাশা’ করছেন কেন? এই নাটক না করলেই পারতেন।’
সিইসির উদ্দেশ্যে রিজভী আরও বলেন, ‘তবে কি ৯০ ভাগ বুদ্ধিজীবীর সুপারিশ অগ্রাহ্য করার জন্য, তাদের অপমান করার জন্য আপনি তাদের সংলাপে ডেকেছিলেন? যদি প্রচলিত আইনেই নির্বাচন হয়, তাহলে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার কোনো অঙ্গীকারও আপনার নেই। আপনি চাকরি করে চলে যাবেন, এটাই হচ্ছে আপনার মূল উদ্দেশ্য। তাহলে গণতন্ত্র কোথায়? ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষমতা কোথায়? সেটা নিশ্চিত করছেন না কেন?’
তিনি বলেন, ‘ভোটাধিতার যেভাবে কেড়ে নেয়া হয়েছে, জেলায় জেলায় যেভাবে তুফানদের সৃষ্টি করা হয়েছে সে অবস্থা থেকে দেশকে পরিত্রাণ দেবে কে? সেখান থেকে দেশবাসীকে পরিত্রাণ দেয়ার জন্য আপনি (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) আশার বাণী শোনাবেন। সেটি না করে শাসনতন্ত্র ও প্রচলিত আইনের কথা বলছেন। আর প্রচলিত আইন তো প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছেমত পরির্বতন করেছেন, একদলীয় বাকশালী সংসদ দিয়ে। শাসনতন্ত্রের ক্ষমতা যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর হাতে, তাহলে আপনি (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) কি বাকশালকে দীর্ঘায়িত করার ষড়যন্ত্র করছেন?’
আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘তাদের বুদ্ধিজীবী ও অন্যান্যরা শুধু এক ব্যক্তির কোরাস গাইছেন। দৃশ্যমান অন্যায়গুলো আমলে নিয়ে প্রতিবাদ করছেন না। এমন বিবেক বিক্রি করা, আত্মা বিক্রি করা আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবী বাংলাদেশে এর আগে কখনও দেখা যায়নি।’
Advertisement
দলের নেতাকর্মীদের হত্যা-গুমের ঘটনা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘আমাদের দলের নেতাকর্মীদের হত্যা ও গুম করা হচ্ছে নির্বিচারে। এই ব্যবস্থা জারি রাখা হয়েছে শুধু একব্যক্তির শাসন ব্যবস্থা প্রলম্বিত করার জন্য। তারা কিছুই মানবে না, সবকিছুই তাদের দরকার। সবকিছু এক ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে।’
আগস্ট মাস আওয়ামী লীগ গুম করে নিয়েছে এমন অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আগস্ট মাস কি আপনারা গুম করে নিয়েছেন? যেমন করে চৌধূরী আলম, ইলিয়াস আলী, সুমন, হিরু, পারভেজকে গুম করে নিয়েছেন। ১২ মাসের একটি মাস আপনারা গুম করে নেবেন, এ মাসে আমরা কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারব না। অথচ আমাদের দুইমাসব্যাপী কর্মসূচি রয়েছে। দলের সদস্য নবায়ন কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। জেলায়-জেলায় আমাদের সিনিয়র নেতারা যাচ্ছেন, সেখানে পুলিশ বাধা দিচ্ছে। অসংখ্য তুফান লেলিয়ে দিচ্ছেন পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে, কর্মসূচিতে ভাঙচুর চালাচ্ছে। তারপর পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের নেতাকর্মীদের।’
রিজভী বলেন, ‘আগস্ট মাসে ভয়াবহ একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এটা আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠন পালন করবে। তার মানে এই নয় যে, অন্য কেউ কোনো কর্মমূচি পালন করতে পারবে না। এটা হচ্ছে বাকশালী মনোবৃত্তি।’
‘জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের দিন শেখ হাসিনা সীমান্তের দিকে চলে গিয়েছিলেন’- এমন দাবি করে রিজভী বলেন, ‘তাহলে জিয়াউর রহমানের হত্যাকারী কে? পর্দার আড়ালে তাহলে কে আছে? এই অভিযোগ তো জনগণের মুখে মুখে।’
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুর সভাপতিত্বে স্মরণসভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার প্রমুখ।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপ শুরু করে ইসি। আগামী ১৬ ও ১৭ আগস্ট সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এবং ২৪ আগস্ট থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
এমএম/এসআর/এমএস