শাহবাগে ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে রমনা বিভাগ পুলিশ কর্তৃক গঠিত পৃথক কমিটি দ্বিতীয়বার আরও দুই দিন সময় পেয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর তদন্ত প্রতিবেদন রমনা বিভাগে পুলিশ কার্যালয়ে জমা দেবে কমিটি। এর আগে গঠিত এ কমিটি নির্ধারিত সময়ের তদন্ত কাজ শেষ করতে না পারায় তিন কর্মদিবস বেশি সময় নিয়েছিল।
Advertisement
অন্যদিকে একই ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদর দফতর কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটিও তদন্ত শেষ করতে না পারায় আরও ৫ কর্মদিবস সময় নেয়। ডিএমপি ও রমনা বিভাগ পুলিশ সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তদন্ত কমিটির তদন্তে অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হলে রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার জাগো নিউজকে বলেন, রমনা বিভাগ পুলিশ কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি আরও সময় চাওয়ায় কমিটিকে ২ দিনের সময় দেয়া হয়েছে। সে হিসেবে মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে কমিটি নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে কাজ করছে। কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ডিএমপি সদর দফতরকে আমাদের সুপারিশ জমা দেয়া হবে।
Advertisement
শাহবাগে পুলিশ-ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনায় রমনা বিভাগ পুলিশ আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই তদন্ত কমিটির প্রধান রমনা বিভাগের এডিসি (প্রশাসন) নাবিদ কামাল শৈবাল।
এর আগে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, গত ২৭ জুলাই (বৃহস্পতিবার) এর মধ্যে আমাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় সময় চেয়ে নেয়া হয়।
অন্যদিকে ডিএমপি সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ জুলাই গঠিত কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও যথাসময়ে তদন্ত শেষ করতে না পারায় আরও পাঁচ কর্মদিবস সময় নিয়েছেন তারা। তাদের তদন্ত প্রতিবেদন রোববার দেয়ার সময় ছিল। তবে ডিএমপি কমিশনার দেশের বাইরে থাকায় কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি। আগামী ৯ আগস্ট দেশে ফিরবেন ডিএমপি কমিশনার। এরপরই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে কমিটি। ডিএমপি কমিশনার দেশে বাইরে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান।
গত ২৮ জুলাই ওই তদন্ত কমিটির সদস্য এডিসি(রমনা) আশরাফুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চলছে। তদন্ত সম্পর্কে আগাম কিছু বলা যাবে না। তবে তদন্ত কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় আরও ৫ কর্মদিবস সময় নেয়া হয়েছে।
Advertisement
উল্লেখ্য, গত ২০ জুলাই শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে নীতিমালা প্রণয়নসহ সাত দফা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে আসেন।
শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার পর পুলিশ ও ছাত্রদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশ হঠাৎই টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ শুরু করে। এ ঘটনায় তিন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ ও গুরুতর আহত হয়। এদের মধ্যে তিতুমীর কলেজের ছাত্র গুলিবিদ্ধ সিদ্দিকুর রহমানকে(২৩) ঢাকা মেডিকেল থেকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে সরকারি সহায়তায় সিদ্দিকুরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চেন্নাইয়ের শংকর নেত্রালয়ে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ওই ঘটনার পরদিনই রাতে ১২০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ।
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সিদ্দিকুর রহমানকে দেখার পর ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সিদ্দিকুরের কীভাবে আঘাত লাগল, তা খতিয়ে দেখা হবে। এ আঘাত স্যাবোটাজ কি না, তা-ও দেখব।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা ও পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২২ জুলাই রমনা বিভাগ পুলিশ পৃথক তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির গঠন করে। ওই কমিটির প্রধান রমনা বিভাগের এডিসি (প্রশাসন) নাবিদ কামাল শৈবাল।
এছাড়া একই ঘটনায় ২৩ জুলাই ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপস) মীর রেজাউল আলমকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অন্য দুই সদস্য হলেন-ভারপ্রাপ্ত ডিসি ডিবি (দক্ষিণ) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও এডিসি রমনা আশরাফুল আলম।
জেইউ/এআরএস/জেআইএম