মৌসুমের শুরুতেই বঙ্গোপোসাগরে যেন হাত পাতলেই মিলছে ইলিশ। সেই সঙ্গে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে রুপালি ইলিশ। জাল ফেলতেই ভরে যায় রুপালি ইলিশে। তবে দামও বেশ ভালো। সেই ইলিশে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছে জেলেদের মুখে।
Advertisement
মাঝখানে কয়েক মাস মাছ ধরা বন্ধের পর আবার শুরু হয়েছে ইলিশ ধরার দিন। গত মাসের শেষ থেকে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ইলিশ।
পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় এলাকায় জেলেদের জালে ধরা পড়েছে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ। আবহাওয়া ভালো থাকায় ও ভালো দাম পাওয়ায় খুশি এ অঞ্চলের জেলেরা।
এখন ঘরে বসে অলস সময় পার করার সময় নেই। নৌকা, বৈঠা ও জালও প্রস্তুত পরিবারের সবাইকে নিয়ে জেতে হবে নদীতে ইলিশ শিকারে। আগে নদীতে ইলিশ না পড়ায় অনেক দেনা হইয়া গেছি। এহন নদীতে ইলিশ পড়ছে। আমাগো দুঃখ দূর হইব।
Advertisement
এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজ এলাকার জেলে কামাল উদ্দিন। তার কথায় তাল মেলালেন আরও কয়েকজন জেলে।
সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারণেই ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে নিরাপদে মাছ শিকারের জন্য মৌসুমের বাকি সময় সাগরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানান জেলেরা।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর পটুয়াখালী জেলায় ইলিশের উৎপাদন ছিল ৩২ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন। তবে বেসরকারি হিসাবে এর পরিমাণ আরও বেশি।
কারণ এই জেলায় যে পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ে তার অনেকটাই সরাসরি জেলা শহরের বাইরের বাজারগুলোতে বিক্রি হয়। যে কারণে জেলার হিসাবে তা অন্তর্ভুক্ত হয় না।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপকূলীয় জেলেদের স্বপ্নের ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সরকার ইলিশের প্রজনন মৌসুম যেমন নিরাপদ করেছে তেমনি বছরের আট মাস জাটকা ধরা বন্ধ রাখতে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করেছে।
এছাড়া নির্দিষ্ট কিছু নদীতে মাছের অভয়াশ্রম হিসেবেও ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারের এসব উদ্যোগের কারণে এখন নদী, সাগর মোহনা ও গভীর সাগরে জাল ফেললেই ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ। এ কারণে খুশি জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা।
রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজ এলাকার জেলে মোছলেম বলেন, ‘সরকার জাটকা ধরা বন্ধ করায় আজ আমাগো জালে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ ধরা পড়ছে। বর্তমানে মাছের দাম ভালো। সরকারের ভালো পদক্ষেপের কারণে আজ আমরা ভালো মাছ পাইতেছি।’
গলাচিপার ধানখালী এলাকার জেলে কুদ্দুস শরীফ বলেন, এখন সাগরে অনেক মাছ ধরা পড়ছে। এখন জলদস্যুদের তাণ্ডব শুরু হবে। তাই দেশ মাতার কাছে আমাদের অনুরোধ মৌসুমের বাকি সময়টা যাতে সাগরে ভালোভাবে মাছ ধরতে পারি তার ব্যবস্থা করেন। জলদস্যুরা ধরলে আমাদের জেলেদের অনেক মারে, টাকাও নেয়।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. আবুল হাছানাত জাগো নিউজকে বলেন, আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর এই তিন মাস বেশি ইলিশ ধরা পড়ে। এ বছর যে পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ছে তাতে উৎপাদন ৪০ হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাওয়ায় সম্ভাবনা রয়েছে।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক ড. মো. মাছুমুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কারণেই এই সফলতা অর্জিত হচ্ছে। আগামীতেও এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।
ইলিশ উৎপাদনের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে মাছে ভাতে বাঙালিখ্যাত দেশের মানুষের থালায় আবারও ফিরবে ইলিশ- এমনটাই মনে করেন উপকূলের সাধারণ মানুষ।
মহিব্বুল্লাহ্ চৌধুরী/এএম/জেআইএম