আইন-আদালত

বিশ্বজিৎ হত্যা : মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দু’জনের সাজা বহাল, খালাস ২

রাজধানীর পুরান ঢাকার দর্জিদোকানি বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় দু’জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে রোববার বিকেলে ঘোষিত রায়ে নিম্ন আদালতের দেয়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আটজনের মধ্যে দু’জনের দণ্ড বহাল, চারজনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও দুজনকে খালাস দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যেও দু’জনকে খালাস দেয়া হয়েছে। 

Advertisement

একই সঙ্গে, বিশ্বজিৎ হত্যার বিষয়ে আদালত সঠিক রিপোর্ট দিতে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইওর) কারও কোনো ধরনের ব্যর্থতা বা গাফিলতি আছে কি না- তা অনুসন্ধান করে দেখারও নির্দেশ দেন আদালত।

হাইকোর্টের রায়ে রফিকুল ইসলাম ওরফে চাপাতি শাকিল ও রাজন তালকুদারের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। এছাড়া মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে মাফুজুর রহমান নাহিদ, ইমদাদুল হক ইমদাদ, জি এম রাশেদুজ্জামান শাওন ও মীর মোহাম্মদ নুরে আলম লিমনকে যাবজ্জীবন দণ্ড দিয়েছেন আদালত।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সাইফুল ইসলাম ও কাইয়ুম মিয়া টিপু এবং যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এ এইচ এম কিবরিয়া ও গোলাম মোস্তফাকে খালাস দিয়েছেন আদালত। তবে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ১১ আসামি পলাতক থাকায় তাদের বিষয়ে কোনো আপিল করা হয়নি। ফলে এ বিষয়ে কোর্ট কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।

Advertisement

২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর বহুল আলোচিত ওই হত্যা মামলায় নিম্ন আদালত আটজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। ওই রায় ঘোষণার এক সপ্তাহের মধ্যে ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেন আসামিরা।

দীর্ঘ শুনানি শেষে রোববার বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

নিম্ন আদালতের আদেশে মৃতুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- রফিকুল ইসলাম শাকিল, মাহফুজুর রহমান নাহিদ, এমদাদুল হক এমদাদ, জিএম রাশেদুজ্জামান শাওন, সাইফুল ইসলাম, কাইয়ুম মিঞা টিপু, রাজন তালুকদার ও মীর মো. নূরে আলম লিমন।

যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- এ এইচ এম কিবরিয়া, ইউনুস আলী, তারিক বিন জোহর তমাল, গোলাম মোস্তফা, আলাউদ্দিন, ওবায়দুর কাদের তাহসিন, ইমরান হোসেন, আজিজুর রহমান, আল-আমিন, রফিকুল ইসলাম, মনিরুল হকপাভেল, মোশাররফ হোসেন ও কামরুল হাসান। তাদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত করা হয়।

Advertisement

গত ১৭ জুলাই ওই দুই বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আপিল শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য ৬ আগস্ট দিন ধার্য করেন। ওইদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নজিবুর রহমান, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুজ্জামান রুবেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাবিনা ইয়াসমিন মলি।

আসামিদের পক্ষে আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী, অ্যাডভোকেট শাহ আলম ও মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম সবুজ শুনানি করেন।

গত ১৬ মে বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হয়। চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিল শুনানির জন্য পেপারবুক প্রস্তুত হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন প্রধান বিচারপতি।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর ১৮ দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীর পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রলীগ ক্যাডাররা নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেন দর্জি বিশ্বজিৎ দাসকে। শাখারী বাজারে বিশ্বজিতের দর্জির দোকান ছিল। তিনি থাকতেন লক্ষ্মীবাজার। তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর।

এফএইচ/এমএআর/আরআইপি