মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব ও তার প্রতিবেশী তিন মিত্র জোটের আরোপিত আরেক প্রতিবেশী কাতারের ওপর জবরদস্তিমূলক অবরোধ আয়োজন ‘ভেস্তে’ যেতে বসেছে।
Advertisement
যেখানে কাতারকে দমাতে মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে বাণিজ্য অবরোধ আরোপ করে সৌদি জোট, কিন্তু তাদের সে পাশার দান উল্টে গেছে। বরং সৌদি জোটের অবরোধের মুখে পড়ে ঘুরে দাঁড়াতে যাচ্ছে উপসাগরীয় ক্ষুদ্র দেশ কাতারের নিজস্ব শিল্প।
প্রতিবেশী চার আরব দেশের আরোপিত বাণিজ্য অবরোধের কারণে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়লেও দ্রুতই এ অবস্থা থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে যাচ্ছে কাতার। অবরোধের প্রতিক্রিয়ায় স্থানীয় শিল্প চাঙ্গা হয়ে ওঠায় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে কাতারের স্থানীয় শিল্পের বিকাশের। এতে করে স্থানীয় শিল্পে সমৃদ্ধির পথে রয়েছে উপসাগরীয় এ ধনী দেশটি।
কাতারের শিল্পখাত অনেকটাই আমদানিনির্ভর, যার অধিকাংশ আমদানি করা হতো অবরোধ আরোপকারী প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে। কিন্তু দুই মাস আগে অবরোধের মুখে পড়ে বিকল্প খুঁজতে শুরু করে কাতার, যার মাধ্যমে অধিক আত্মনির্ভরশীল হওয়া যায়।
Advertisement
যেমন- কাতারের নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ডনে কর্মীদের গত শেষ কয়েক সপ্তাহের কাজের চাপ দ্বিগুণ করা হয়েছে, যেন রাসায়নিক পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
অবরোধ আরোপ করে প্রতিবেশী দেশগুলো যেখানে কাতারের স্থানীয় শিল্পকে থামিয়ে দিতে চেয়েছিল, সেখানে বরং স্থানীয় শিল্পে গতি সঞ্চার হয়েছে- এমনটাই মনে করেন ডনের কর্মী খাসিফ আইজাজ।
তিনি বলেন, আমাদের পণ্যের অর্ডার বেড়েছে। প্রতিদিনই আমরা অর্ডার অনুযায়ী আনুপাতিকহারে উৎপাদন বৃদ্ধি করছি। কিন্তু এ সময়ে আমরা কাঁচামালের প্রাপ্যতা নিয়ে সংগ্রাম করছি; যেহেতু আমরা চীন, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে কাঁচামাল আমদানি করছি।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আমাদের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কারণ আগে আমার এসব পণ্য আরব আমিরাতে জেবেল আলী থেকে আমদানি করতাম।
Advertisement
এদিকে, অবরোধ শুরুর পর এর প্রভাবে গত জুনে অন্তত ৪০ শতাংশ আমদানি কমে গেছে কাতারের।
তবে এই আমদানি বন্ধ বা কমে যাওয়ার কারণে সরকারি প্রকল্পের কোনো ক্ষতি হবে না বলে জানিয়েছেন দেশটির আশগাল গণপূর্তের সহকারী প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ হামাদ আল-আত্তিয়াহ।
তিনি বলেন, যদি এটা (অবরোধ) আমাদের প্রকল্পে ও কাতার-২০২২ এর ক্ষেত্রে আসে, তবে আমরা এতে কোনো সমস্যা দেখছি না। এমনকি এ অবরোধ ২০ বছর ধরে চলতে থাকলেও।
তিনি জানান, অবরোধের যে প্রভাব দেখা যাচ্ছে, তা সরকারি প্রকল্পে আরও ভালভাবে পড়তে পারত। কিন্তু বর্তমানে তারা এটা নিয়ে ভাবছেন না। কেননা ২০১৪ সাল থেকে সরকারের একটি পরিকল্পনা চলমান আছে।
২০১৭ সালেই আশগাল কর্তৃপক্ষ অন্তত আরও সাড়ে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রকল্পের চুক্তি করবে বলে তিনি জানান।
২০২২ বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজনে কাতার তার প্রতিশ্রতি পূরণে কাজ করতে পারবে বলেও মনে করেন তিনি। বিশ্বকাপের আয়োজনের প্রস্তুতির জন্য নির্মাণকাজের উন্নতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
পাশাপাশি সরকারি উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুযায়ী, ‘কাতার ভিশন-২০৩০’ নামে বৃহৎ নির্মাণ প্রকল্পের কাজও চলমান রয়েছে।
গত ৫ জুন কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন ঘোষণা ও বাণিজ্য অবরোধ আরোপ করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিসর। সন্ত্রাসী গ্রুপকে অর্থায়ন ও সহায়তার অভিযোগে এ পদক্ষেপ নেয় সৌদি জোট। তবে শুরু থেকেই এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে কাতার।
তবে অবরোধ আরোপের ফলে শুরুতে সংকটে পড়লেও তা দ্রুত কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে মাথাপিছু আয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ কাতার।
এসআর/এমএস