সাপের নাম শুনলেই আঁতকে ওঠেন সবাই। তবে ভয়ঙ্কর এই সাপকেই বুকে টেনে নিয়েছেন পটুয়াখালী সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের নন্দিপাড়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক। বাণিজ্যিকভাবে সাপের বিষ উৎপাদনে গড়ে তুলেছেন সাপের খামার। তবে দীর্ঘ ১৭ বছরেও খামারের অনুমোদন না পাওয়ায় বিষ সংগ্রহ ও বিক্রি করতে পারছেন না এই উদ্যোক্তা। ফলে খামার এখন তার গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে।
Advertisement
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে রাজ্জাকের খামারের অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিলেও অনুমোদন মেলেনি আজও।
জানা গেছে, প্রবাসী আব্দুর রাজ্জাক বিদেশে সাপের খামার দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০০০ সালে দেশে ফিরে স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত একটি কিং কোবরা ও ২৪টি ডিম দিয়ে নন্দিপাড়া গ্রামে সাপের খামার শুরু করেন। এরপর দিন দিন তার খামারে বেড়েছে সাপের পরিমাণ। বর্তমানে নাজা নাজা, নাজা কিউটিয়া, পাইথোন ও কিং কোবরা এই চার প্রজাতির প্রায় তিনশ বিষধর সাপ রয়েছে তার খামারে।
খামার তৈরির পর থেকে খামারের অনুমোদন ও বিষ সংগ্রহের জন্য সরকারের বিভিন্ন দফতরে ঘুরেছেন আব্দুর রাজ্জাক। তবে এতদিনেও মেলেনি অনুমোদন। এ কারণে বর্তমানে খামারে কর্মরত শ্রমিকদের একদিকে বেতন দিতে পারছেন না অন্যদিকে খামার পরিচালনা ও সাপের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েও আছেন আর্থিক সংকটে।
Advertisement
আব্দুর রাজ্জাকের সাপের খামারের শ্রমিক আবুল সিকদার জাগো নিউজকে বলেন, প্রতি রাতে ব্যাঙ সংগ্রহ করি। সকালে সাপকে খাবার দেই, সাপের খসি পাল্টাই, ব্রাশ দিয়ে ময়লা পরিষ্কার করি, সাপকে পানি খাওয়াই। মালিক আমাদের একটা টাকাও দেয় না। আজ পাঁচ-ছয় বছর ধরে পেটে ভাতে কাজ করছি।
অপর এক শ্রমিক জব্বার জাগো নিউজকে বলেন, শুরুর দিকে এখানে অনেকেই কাজ করত। মালিক বেতন না দেয়ায় অনেকেই চাকরি ছেড়ে চলে গেছে। খামারটি প্রায় ধ্বংসের পথে। মালিক বলায় অন্য কাজের পাশাপাশি এই খামারে কাজ করি। যদি সরকার এই খামারের অনুমোদন দেয় তাহলে মালিক ঠিক মতো আমাদের বেতন দিতে পারবেন। এলাকার অনেকেই খামারে কাজ করতে পারবে।
'বাংলাদেশ স্নেক ভেনাম পটুয়াখালীর উদ্যোক্তা' আব্দুর রাজ্জাক জাগো নিউজকে বলেন, ২০০৮ সালে বেসরকারি পর্যায়ে বাণিজ্যিকভাবে সাপের খামার অনুমোদনের জন্য নীতিমালা তৈরি করে সরকার গেজেট প্রকাশ করে। সে অনুযায়ী আমিসহ অন্তত ৫০ জন খামারি আবেদন করি। তবে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রাণালয়ের দ্বন্দ্বে আটকে আছে অনুমোদন প্রক্রিয়া। পটুয়াখালী সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো. বাকাহিদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ইতোমধ্যে খামারটি পরিদর্শন করেছি। এটি একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। সাপের খামারটি অনুমোদন পেলে স্থানীয় যুবকদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতেও তারা ভূমিকা রাখতে পারবে।
মহিব্বুল্লাহ্ চৌধুরী/এফএ/এমএস
Advertisement