মতামত

সন্তানকে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে দেয়া কতটা জরুরি?

অধিকাংশ অভিভাবক খুবই উদ্বিগ্ন সন্তানদের স্মার্টফোন ব্যবহার করতে দিবেন কি দিবেন না। এ নিয়ে তাদের মধ্যে অনেক দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রয়েছে। অনেকেই তার সন্তানকে ট্যাব, ল্যাপটপ এমনকি কম্পিউটার পর্যন্ত ব্যবহার করতে দিতে চান না। তাদের ধারণা সন্তান নষ্ট হওয়ার পিছনে এসব ইলেকট্রনিক্স ডিভাইজগুলো সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। কিন্তু বাস্তবে কি তাই?

Advertisement

আমি অনেক সরকারি বেসরকারি উচ্চ পদস্থ সচেতন কর্মকর্তাদের উদাহরণ দিয়ে বলতে পারি তারা কখনোই তাদের সন্তানদের এধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার থেকে দূরে রাখেন না, বরং এগুলো ব্যবহারে আরো বেশি উৎসাহিত করেন। তার সঙ্গে এগুলোর ক্ষতিকর ব্যবহার থেকে দূরে রাখার ব্যাপারেও সচেষ্ট থাকেন।

আমরা জানি, আগুন একটি ভয়ংকর ধ্বংসকারী পদার্থ। তাই বলে কি আমরা তার ব্যবহার থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারব? কখনোই না। আগুনের ব্যবহার ছাড়া জীবন এখন স্থবির হয়ে পড়বে। খাবার তৈরি থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ (যে বিদ্যুৎ ছাড়া আধুনিক জীবন অকল্পনীয়) উৎপাদন পর্যন্ত সবক্ষেত্রেই আগুনের ব্যবহার বিরাজমান। সেই বিবেচনায় মানব জাতির সবথেকে বড় বন্ধু আগুন। এই আগুনই আবার নিমিষেই পুড়িয়ে ছাই করে দিতে পারে গোটা পৃথিবীকে। খালি হাতে এই আগুন স্পর্শ করার মত কোন বীর এখনো পৃথিবীতে জন্ম নেয়নি। এক কথায় আগুনের পজেটিভ ব্যবহারেই কল্যাণ।

সুতরাং কল্যাণের পুরো ধারণাটি নির্ভর করে ব্যবহারের উপর। ক্ষতিকর দিকটি এড়িয়ে কল্যাণের স্বার্থে প্রযুক্তি ব্যবহার করা বুদ্ধিমানের কাজ। আর চোরের উপর রাগ করে মাটিতে ভাত খাওয়ার মত বোকামী যেমন হয় না তেমনি প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকের আশঙ্কায় প্রযুক্তি থেকে সন্তানদের দূরে রাখার মত আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত আর নেই।

Advertisement

বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। বিশ্বব্যাপী তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক চাহিদা। প্রযুক্তি জ্ঞানের অজ্ঞতা মানে অন্ধকারে বসবাস। সন্তানকে সেই প্রযুক্তি ব্যবহার থেকে দূরে রাখা মানে তাকে পা ধরে টেনে উপর থেকে নিচের অন্ধকার জগতে নামিয়ে আনা। সন্তানকে জ্ঞানে বিজ্ঞানে আপডেট রাখাই এখন যুগোপযোগী শিক্ষা। যেটি প্রযুক্তির জ্ঞান ছাড়া সম্ভব না। অদূর ভবিষ্যতে একাডেমিক জ্ঞানার্জনের থেকে বাস্তব জ্ঞান বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাবে। এবং এটিকে নীতি নির্ধারকরা প্রডাকটিভ জ্ঞানার্জন বলে বিবেচনা করবেন।

কারও কারও মধ্যে একটা অহেতুক শঙ্কা কাজ করে, স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ ব্যবহার করে তার সন্তানটি আবার ইচড়ে পেকে যাচ্ছে না তো? আমার প্রশ্ন হচ্ছে ইচড়ে পাকলে সমস্যা কোথায়? মাদকাসক্ত তো আর হচ্ছে না। প্রযুক্তির প্রতি আসক্তি খারাপ নয়। উচ্চ পদস্থ বয়স্ক অফিসারদের সাথে প্রশিক্ষণ গ্রহণের সময় দেখেছি সবাই কেমন যেন কৃত্রিম একটা ইচড়ে পাকা ভাব করেন। দেখে বোঝা যায় সবাই ছোট বেলার সেই দুষ্টুমি ভরা জীবনে ফিরে যেতে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। ইচড়ে পাকা স্বভাব যদি খারাপই হবে তাহলে এই উচ্চ শিক্ষিত মানুষগুলো কেন ইচড়ে পাকা আচরণের ভাব নেবেন? আসল কথা হচ্ছে ইচড়ে পাকতে হলে মেধার প্রয়োজন সুতরাং বলা যায় মেধাবীরাই এই উপাধি পায়। ‘গুড ফর নাথিং’ হয়ে কোন লাভ নাই।

অনেক সময় দেখি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ভাঙা হচ্ছে। আমি এমন ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের পক্ষে নই। শ্রেণি কক্ষে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ হবে এটা খুবই যুক্তিসঙ্গত। কারণ শ্রেণি কক্ষে মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয় তাতে কোন সন্দেহ নেই। এক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম আরোপ করা যেতে পারে যেমন শ্রেণি কক্ষে কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে তাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে টিসি দিয়ে বের করে দেয়া যেতে পারে তাই বলে কষ্টের টাকায় কেনা মোবাইল ফোনটি ভেঙে ফেলা কোন সমাধান হতে পারে না বরং সেটি হবে অযোগ্য প্রশাসকের পরিচায়ক।

প্রিয় শিক্ষার্থী, তোমরা হয়তো ভাবছো শ্রেণি কক্ষে মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমি তোমাদের পক্ষে সাফাই গাইছি। তেমনটি ভাবার বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। আমি শুধু যথাস্থানে যথোপযুক্ত ব্যবহারের কথা বলছি। আমাদের সকলের পেটের মধ্যে বিষ্ঠা থাকে সেটি বাইরে এনে গায়ে মেখে ঘুরে বেড়ানো নির্বুদ্ধিতা ছাড়া কিছুনা। আমি বোঝাতে চাইছি যেটা যেখানে ব্যবহার করার সেটা সেখানেই ব্যবহার করতে হবে অন্যথা হলে সেটার ক্ষতিকর দিক তোমার ধ্বংস ত্বরান্বিত করবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

Advertisement

লেখক : প্রভাষক, ইংরেজি ঢাকা কলেজ, ঢাকা।

এইচআর/এমএস