ধর্ম

কাবা শরিফের তাওয়াফ বাম দিকে করার রহস্য কী?

মানব জীবনে প্রতিটি ভালো কাজই ডান দিক থেকে করা সুন্নাত। জামা-কাপড় পরিধান, রাস্তায় চলাচল, ঘুমের সময়, মসজিদে প্রবেশে, নামাজের সালাম ফেরানোসহ যাবতীয় ভালো কাজই ডান দিক থেকে আদায় করা হয়।

Advertisement

কিন্তু পবিত্র কাবা শরিফ তাওয়াফের বেলায় এত বড় মহৎ ও ফজিলতপূর্ণ কাজ বাম দিক থেকে করার রহস্য কি? হাজরে আসওয়াদকে বামে রেখে বাইতুল্লাহর দরজার দিকে তাওয়াফ শুরু করলে তা বাম দিকে হয়। ডান দিকে তাওয়াফ করতে হলে হাজরে আসওয়াদ থেকে রুকনে ইয়ামেনির দিকে যেতে হবে। কিন্তু তাওয়াফের বেলায় এ ব্যতিক্রম কেন?

পবিত্র কাবা শরিফকে বাম দিকে থেকে তাওয়াফের রহস্য রহস্য সম্পর্কে আল্লাহ প্রেমিক ওলামায়ে কেরামগণ সুচিন্তিত সুক্ষ্ণ তথ্য উপস্থাপন করেছেন। যার ইঙ্গিত রয়েছে পবিত্র কুরআনুল কারিমে। যে রহস্য উদঘাটনে হজ ওমরা ও জিয়ারতকারীদের জন্য আধ্যাত্মিক উন্নতি ও আল্লাহ প্রেমিক হতে সহায়ক হবে।

সুফি সাধকদের মতমানুষের কলবের অবস্থান বুকের বাম পাশ্বে। তাই তাদের আত্মার সম্পর্ক যাতে পবিত্র কাবা শরিফের সঙ্গে বৃদ্ধি পায়; আল্লাহর সঙ্গে বান্দার আত্মার সম্পর্ক ও আকর্ষণ যেন বেশি বাড়ে; এ জন্যই পবিত্র কাবাকে বাম দিকে রেখে তাওয়াফ চালু হয়েছে।

Advertisement

কুরআনের ইঙ্গিতসুফি সাধক ব্যক্তিগণ দলিল হিসেবে মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সেই বিখ্যাত মোনাজাতটি উল্লেখ করেন। যখন তিনি তাঁর শিশু সন্তান হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম ও স্ত্রী হজরত হাজেরা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে নির্জন মরুভূমিতে সহায় সম্বল, খাদ্য পানি ব্যতীত অঞ্চলে আল্লাহর ওপর ভরসা করে রেখে যান।

তিনি যে দোয়া করেছিলেন, আল্লাহ তাআলা সে দোয়াটি সুরা ইবরাহিমে এভাবে উল্লেখ করেছেন-

উচ্চারণ : ‘রাব্বানা,ইন্নি আসকান্তু মিন জুররিয়্যাতি বিওয়াদিন গাইরি জি-জরঈন ইনদা বাইতিকাল মোহাররাম, রাব্বানা লিইয়ুক্বিমুসসালাতা ফাজআল আফঈদাতুম মিনান্নাসি তাহওয়ি ইলাইহিম ওয়ারজুক্বহুম মিনাছছামারাতি লাআল্লাকুম তাশকুরুন।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৩৭)

অর্থ : হে আমাদের পালনকর্তা! আমি নিজের এক সন্তানকে তোমার পবিত্র ঘরের ভিত্তিভূমির সন্নিকটে এমন এক উপত্যকায় রেখে যাচ্ছি, যেখানে কোনো ফসলাদি আবাদ হয় না। হে আমাদের পালনকর্তা! যাতে তারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে। অতঃপর আপনি কিছু লোকের অন্তরকে কাবামুখী করে তাদের প্রতি আকৃষ্ট করুন এবং তাদেরকে ফল-ফলাদি দ্বারা তাদের রিজিকের ব্যবস্থা করুন। যাতে তারা আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারে। (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৩৭)

Advertisement

উল্লেখিত আয়াতে ‘আফইদাতুন’ শব্দটি ‘ফুয়াদ’ শব্দের বহুবচন। যার অর্থ হলো কলব, হৃদয় বা আত্মা। আর মানুষের আত্মাকে বা মানুষদেরকে কাবামুখী করার দোয়া করেছেন তিনি। আত্মা বা হৃদয়ের কাছাকাছি বাম পাশে বাইতুল্লাহ। এ কারণেই বাইতুল্লাহকে বামে রেখে তাওয়াফ করার রহস্য হিসেবে মনে করেন সুফি-সাধক, আল্লাহ প্রেমিকগণ।

হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের এ দোয়ার প্রতিটি কথা আল্লাহ তাআলা এমনভাবে কবুল করেছেন, যা শুধুমাত্র হজ পালনকারীরাই উপলব্ধি করতে পারে। যারা অন্তত একবার পবিত্র কাবা শরিফ তাওয়াফ করেছেন।

এ পবিত্র কাবার তাওয়াফের সম্পর্কটি স্থাপিত হয় কলবে বা হৃদয়ে। এ যেন এক অদৃশ্য চৌম্বুক শক্তি। যা তাঁকে বাইতুল্লাহর প্রতি প্রবল আকর্ষণ করে।

এ কারণেই সুফি সাধকগণ বলেন যে, হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তাঁর স্বজনদের উপকারের জন্য মানুষের হৃদয় কাবামুখী করে দিতে আল্লাহ তাআলার নিকট দোয়া করেছিলেন।

আর মানুষের কলব বা আত্মা যেহেতু বুকের বাম পাশে থাকে। তাই কাবার সঙ্গে মানুষের অন্তরের সম্পর্ক যেন আরো বেশি হয়। কাবা আকর্ষণ যেন মানুষকে আল্লাহ তাআলার বেশি নৈকট্য লাভে সাহায্য করে; এ জন্য পবিত্র কাবা শরিফের তাওয়াফ বাম দিকে করা হয়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পবিত্র কাবার উষ্ণ অভ্যর্থণা, ভালবাসা ও আত্মার টান উপলব্ধি করার তাওফিক দান করুন। কাবার তাওয়াফ, হজে বাইতুল্লাহ ও জিয়ারাতে মদিনা নসিব করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস