অর্থনীতি

জলাবদ্ধতার প্রভাব নিত্যপণ্যের বাজারে

রাজধানীর জলাবদ্ধতার অজুহাতে বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। গত দুই সপ্তাহে ঘন ঘন বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে বেশিরভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে বেড়েছে সবজির দাম। শুক্রবার (৪ আগস্ট) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।

Advertisement

বাজার ঘুরে দেখা যায়, বৃষ্টিতে কাঁচামালের সরবরাহ কমে গেছে -এ অজুহাতে সবজিসহ কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও আলুর দাম বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে মাছের দরও বেশ চড়া। এতে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষরা পড়েছেন বিপাকে। অনেকে বাড়তি দামের কারণে কাঙ্ক্ষিত পণ্য কিনছেন না।

বিক্রেতারা বলছেন, অতি বর্ষণে রাজধানীর বড় বড় পাইকারি বাজারগুলোতে পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করতে পারেনি। অনেক স্থানে কাঁচা পণ্য নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে এসব নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে দাম আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।

গত সপ্তাহের তুলনায় কিছু সবজির দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। আবার কিছু সবজির দাম ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। বাজারে সব থেকে দাম বেড়েছে কাঁচামরিচের। প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৬০ টাকায়।

Advertisement

এ ছাড়া আমদানি করা টমেটো ৬০, ঢেঁড়স ৪০-৫০, করলা ৪০-৬০, পটোল ৪০-৬০, কচুরমুখী ৫০-৬০, ধুন্দল ৪৫-৫০, ঝিঙ্গে ৪০-৫০, পেঁপে ৩০-৪০, বরবটি ৫০-৬০, কাঁকরোল ৪০-৬০ নতুন শিম ১০০-১২০ টাকা টাকায় কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

বাজার ঘুরে আরও জানা যায়, দেশি পিঁয়াজ দাম বেড়ে কেজি প্রতি ৪০ টাকা এবং আমদানি করা ভারতীয় পিঁয়াজ ২৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বেগুন কেজি প্রতি ৬০-৮০ টাকা; শিম ১২০ টাকা; হাইব্রিড টমেটো ১৬০ টাকা; দেশি টমেটো ১০০ টাকা; শসা ৫০ টাকা; চাল কুমড়া ৫০-৫৫ টাকা; কচুর লতি ৬০-৬৫ টাকা; পটোল ৫০-৬০ টাকা; ঢেঁড়স ৫০-৬০ টাকা; ঝিঙ্গা ৬০ টাকা; চিচিঙ্গা ৫০-৬০ টাকা; করলা ৫০-৫৫ টাকা; কাকরোল ৫০ টাকা; পেঁপে ৪০-৫০ টাকা; কচুরমুখী ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি সবজি বিক্রেতা আমিনুল জানান, কয়েক মাস ধরেই পটোল, ঝিঙ্গা, ধুন্দল, করলা, ঢেঁড়সসহ প্রায় সব সবজির দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে ছিল। তবে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।

বিক্রেতা আরিফ জানান, টানা বৃষ্টিতে স্থবিরতা ছাড়াও খানাখন্দে ভরা রাস্তাঘাট ও যানজটের কারণে পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে বাজারে সময়মত সবজির ট্রাক পৌঁছাতে পারছে না। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে।

Advertisement

সবজি কিনতে আসা ক্রেতা সামসুল আলম বলেন, সব ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ মানুষদের। একদিকে বৃষ্টির পানিতে রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় কষ্ট হচ্ছে; অন্যদিকে বর্ষার কারণে সবজির দাম বেড়ে গেছে। কোনো দিকেই স্বস্তি নেই। এভাবে চললে জীবনযাপন করাই কঠিন।

কারওয়ান বাজার ক্ষুদ্র আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি এটিএম ফারুক বলেন, প্রতিদিন এ বাজারে আড়াইশর বেশি ট্রাক সবজি নিয়ে প্রবেশ করে। বৃষ্টি ও পানির কারণে বেশির ভাগ ট্রাকই বাজারে ঢুকতে পারেনি। বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা। এতে ভোক্তা ছাড়াও এ খাতে নিয়োজিত ব্যবসায়ীদের ক্ষতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।

মুদিবাজার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বিভিন্ন পণ্য আগের দরেই রয়েছে। তবে বেড়েছে বোতলজাত তেলের দাম। রূপচাঁদা পাঁচ লিটারের বোতলের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরামূল্য ৫৩০ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা বাড়িয়ে ৫৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তীর ব্র্যান্ডের পাঁচ লিটারের বোতলে সর্বোচ্চ খুচরামূল্য এখন ৫৩০ টাকা, যা আগে ছিল ৫২০ টাকা। এ ছাড়া এক লিটারের বোতলের দাম বাড়িয়ে তীর ১০৭ ও রূপচাঁদা ১১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা আগের দরের থেকে প্রতি লিটারে দুই থেকে পাঁচ টাকা বেশি।

এদিকে কয়েক সপ্তাহ আগে বেড়ে যাওয়া মাছের দাম কমেনি। উল্টো আরও বেড়েছে। বিভিন্ন মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আকারভেদে প্রতি কেজি রুই ২৫০-৩৫০, সরপুঁটি ৩৫০-৪৫০, কাতল ৩৫০-৪০০, তেলাপিয়া ১৪০-১৮০, সিলভারকার্প ২০০-২৫০, চাষের কৈ ২৫০-৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া পাঙ্গাস প্রতি কেজি ১৫০-২৫০, টেংরা ৬০০, মাগুর ৬০০-৮০০, প্রকারভেদে চিংড়ি ৪০০-৮০০, প্রতিটি ইলিশ ৮০০-১৫০০ টাকা এবং কেজি হিসেবে প্রতি কেজি মাঝারি ইলিশের দাম রাখা হচ্ছে এক হাজার ৬০০ টাকা।

এমএ/আরএস/এআরএস/পিআর