অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরসভার মেয়রসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে জেলা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে দুদক। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।আদালত সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নিজস্ব রেকর্ডভুক্ত উত্তর মধ্যপাড়া মৌজার ৪৩৮নং খতিয়ানের ২০, ২১, ২৭ ও ২৮ নং দাগের ৩ একর ৭১ শতাংশ জমি যার সর্বনিম্ন বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী ৪ কোটি ৫৭ লাখ ৪২ হাজার ৪৪৫ টাকা। উক্ত জমি আংগারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার কামাল ২০১২ সালের ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করে। মাত্র তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নামমাত্র মূল্য দেখিয়ে দরপত্র দাখিল করে। ওই তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে জে সরদার কর্পোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজসে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে মাত্র এক কোটি ৫০ লাখ টাকায় পানির দরে ওই জমি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেয়।সে মোতাবেক ২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর শরীয়তপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন কামাল দাতা হিসেবে জে সরদার কর্পোরেশনের মালিক জাহাঙ্গীর আলম ও তার ভাই আ. সালম এর নামে জমি রেজিস্ট্রেরি করে দেয়। দলিলে জমি বিক্রির টাকা বুঝিয়া পাইয়া জমি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা উল্লেখ থাকলে ও বিদ্যালয়ের তহবিলে কোনো টাকা জমা দেয়া হয়নি। জমি কিক্রির ২ মাস ১৮দিন পরে জমি গ্রহীতাগণ ৭ লাখ ও ৮০ লাখ টাকার আলাদা ২টি চেক প্রদান করে। ওই চেক দুটি বিদ্যালয়ের তহবিলে জমা করা হলে প্রথমে চেকের স্বাক্ষর গড়মিল এবং গ্রহিতার ব্যাংক হিসাব নম্বরে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় ব্যাংক থেকে চেক দুটি ফেরত প্রদান করে।এনিয়ে এলাকায় উক্ত বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীকালে বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হলে এবং আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের আবেদনের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের ফরিদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মলয় কুমার সাহা আালোচিত বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে গত ৬ আগষ্ট ২০১৪ তারিখে শরীয়তপুর সদর থানায় দুটি মামলা দায়ের করে।দীর্ঘদিন মামলাটির তদন্ত শেষে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক গাজী মো. শামসুল আরেফিন বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শরীয়তপুর পৌর মেয়র আ. রব মুন্সি বিদ্যালয়ের সদস্য সচিব প্রধান শিক্ষক আনোয়ার কামাল, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আ. সালাম হাওলাদার, মজিবুর রহমান হাওলাদার, আইউব আলী মল্লিক, আ. কুদ্দুস মোল্যা, বেগম আলফাতুন্নেছা, সুজন সাহা, সংগীতা সাহা, রনজিৎ কুমার সাহা ও জমি গ্রহিতা জাহাঙ্গীর আলম ও আ. সালাম এর বিরুদ্ধে শরীয়তপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিনুল ইসলামের কোর্টে ৮ পৃষ্ঠার একটি চার্জশিট দাখিল করেন।এ বিষয়ে জানার জন্য আব্দুর রব মুন্সি, আনোয়ার কামালসহ অন্য কারো সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাদের সকলের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গাজী সামসুল আরেফিন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন তদন্ত করে অভিযোগ সম্পর্কে সত্যতা পাওয়ায় অভিযোগপত্র দাখিল করেছি। দুদক তার দায়িত্ব সম্পন্ন করেছে। এর পরবর্তী কার্যক্রম আদালতের উপর নির্ভর করেছে।ছগির হোসেন/এআরএ/আরআই
Advertisement