রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম অফিস ভবন ৯/এফ মতিঝিল। এ ভবনে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান কার্যালয়। পাশাপাশি ভবনটিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি ব্রেকারেজ হাউসের অফিস। ফলে এই ভবনে প্রতিদিন হাজারের অধিক মানুষের যাতায়াত।
Advertisement
বৃহস্পতিবার দুপুরে হঠাৎ শ্রাবণের ঢলে পানি ঢুকে যায় ডিএসইর অফিস ভবনর নিচতলায়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী অবিরাম বর্ষণের ফলে এক ফুটের মতো পানি জমে যায় ভবনটির নিচতলার ফ্লোরে। ফলে ভবনটি থাকা দুটি লিফটই বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
অবস্থার এতটাই অবনতি ঘটে জমে যাওয়া বৃষ্টির সেই পানি সরাতে মোটরের আশ্রয় নিতে হয় ডিএসইকে। শেয়ারবাজারটির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কয়েকজন কর্মী প্রায় দেড় ঘণ্টার প্রচেষ্টায় মোটরের সাহায্যে ভবনের ভেতরে ঢুকে যাওয়া পানি সরাতে সক্ষম হন। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলেও ভবনের সামনের রাস্তায় হাঁটু সমান পানিই জমে থাকে।
ফলে অফিস ও শেয়ারবাজারের লেনদেন শেষে বাসায় ফিরতে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয় স্টক এক্সচেঞ্জটি ও ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিনিয়োগকারীদের। রাস্তায় জমে থাকা ময়লা পানিতে মাখামাখি হয়েই বাসার উদ্দেশে রওনা দিতে হয় ভবনটিতে আসাদের।
Advertisement
মোটরের সাহায্যে পানি সরানোর দায়িত্ব পালন করা একজন জানান, বৃষ্টি শুরু হওয়ার ১০ মিনিট পরেই ভবনের নিচতলায় পানি ঢুকতে শুরু করে। যেই ফ্লোরে ঢুকে যায় সেই ফ্লোরেই ভবনটি ওঠা-নামার জন্য রয়েছে দুটি লিফট। ফলে যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে সে জন্য নিচতলায় পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে লিফট বন্ধ করে দেয়া হয়। যখন লিফট বন্ধ করা হয় তখনও শেয়ারবাজারের লেনদেন চলছিল।
ভবনটিতে আসা শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারী মো. আমিনুর রহমান বলেন, লেনদেন চলাকলীন তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টির পানিতে দেখতে দেখতে রাস্তা তলিয়ে যায়। লিফট বন্ধ থাকয় নয় তলা থেকে বাধ্য হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে হয়। কিন্তু নেমেই দেখে ফ্লোরে এক ফুটের ওপরে পানি জমে রয়েছে। কোনো রকমে প্যান্ট গুটিয়ে ভবন থেকে বেরিয়ে আসি। কিন্তু বাইরে এসে দেখি আরও বড় বিপদ। মতিঝিলের রাস্তা যেন সমুদ্রে পরিণত হয়েছে। রাস্তায় হাঁটুর ওপরে পানি থাকায় প্যান্ট গুছিয়েও ময়লা পানি থেকে পোশাক রক্ষা করতে পারিনি।
শুধু ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনের রাস্তা নয় বৃহস্পতিবার দুপুরে নামা শ্রাবণের ঢলে বাণিজ্যিক ও অফিসপাড়া হিসেবে পরিচিত রাজধানীর মতিঝিরের প্রায় সবকটি রাস্তায় তলিয়ে গেছে। ফুটপাতের ওপরে জমে গেছে হাঁটুপানি। এমনকি ডিএসইর নিচতলার মতো অনেক অফিসের মধ্যেও এক ফুটের ওপরে পানি ঢুকে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ভবন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন ভবন, মডার্ন ম্যানশন, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) ভবনের নিচতলাতেও পানি ঢুকে যেতে দেখা গেছে। আর মতিঝিল অঞ্চলের রাস্তায় পানি জমায় বিঘ্ন সৃষ্টি হয় সাধারণের চলাচলে। পানির মধ্যে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকেত হচ্ছে রিকশা, সিএনজি, মাইক্রোবাস, যাত্রীবাহী পরিবহনগুলোকে। মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে দৈনিক বাংলা মোড় পার হতেই প্রতিটি গাড়ির সময় লাগছে দেড় থেকে দুই ঘণ্টার ওপরে।
Advertisement
ডিএসইর জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের প্রধান ডিজিএম শফিকুল রহমান বলেন, বৃষ্টি হলেই অফিস শেষ বাসায় ফেরা দুরূহ হয়ে পড়ে। মতিঝিলের প্রায় সব রাস্তায় পানি জমে যায়। ফলে অফিস শেষে পানি আর পরিবহন মিলে দেখা দেয় মহাযানজট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কেটে যায় শুধু মতিঝিল অঞ্চল পাড়ি দিতেই। দুই ঘণ্টার আগে কিছুতেই মতিঝিল অঞ্চল অতিক্রম করা যায় না।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, ভাই এটি নতুন কিছু না। পানি হলেই মতিঝিলের রাস্তা ডুবে যায়, সেই সঙ্গে ডুবে যায় আমাদের অফিস ভবনও। একটু জোরে বৃষ্টি হলেই ভবনের ভিতরে এক হাঁটু পানি জমে।
এমএএস/বিএ