নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অভিবাসী (গ্রিনকার্ডধারী) আর নাগরিকদের মধ্যকার বিভাজন সামনে এনেছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভেঙে পড়া আর দুর্বল অভিবাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। সেই লক্ষ্যে কিছু কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন ট্রাম্প।
Advertisement
হোমল্যান্ড সিকিউরিট দফতরের আনুষ্ঠানিক তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের স্থায়ী অনুমতি পেয়েছেন ১০ লাখ ৫৩ হাজার বিদেশি নাগরিক। গড়ে এটা বছরে এক মিলিয়ন বা ১০ লাখ নতুন গ্রিনকার্ড ইস্যু করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে। সেটা ৫ লাখে কমিয়ে আনার জন্যই এ নিয়ম বলে জানিয়েছেন বিল নিয়ে কাজ করছে এমন দু’জন সিনেটরের একজন জর্জিয়ার ডেভিড পারডু।
তার পদক্ষেপের কিছু বহাল থাকলেও অধিকাংশ আদালতের রায়ে স্থগিত আছে অথবা কার্যকারিতা হারিয়েছে। এবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং তার প্রশাসন নতুন একটি অধ্যাদেশ সামনে আনতে চাচ্ছেন, যার মাধ্যমে গ্রিনকার্ড প্রত্যাশীদের অন্য অনেক বিবেচনার সঙ্গে বাধ্যতামূলক ইংরেজিতে দক্ষতা দেখাতে হবে।
যেসব ক্যাটাগরির ভিত্তিতে গ্রিনকার্ড ইস্যু করা হতো, সেগুলো বলবৎ রাখার সঙ্গে এখন থেকে ইংরেজিতে অবশ্যই আইইএলটিস বা টোফেলের মতো পরীক্ষায় পাসের স্কোর দেখাতে হবে।
Advertisement
‘রেইজ অ্যাক্ট, ভবিষ্যতে আমেরিকানদের দরিদ্রের হার কমাবে, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করবে। এজন্যই যে, এই অ্যাক্টের মাধ্যমে এতদিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে অন্যান্য দেশের নাগরিকদের স্থায়ী বসবাসের অনুমতি দিচ্ছিল, সেটা পরিবর্তন হবে। বহুদিন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র খুব দুর্বল একটি অভিবাসন নীতি নিয়ে এগিয়েছে এবং এখনও এগোচ্ছে। সেটার অধীনে খুব কম যোগ্যতা সম্পন্ন অভিবাসীদের রেকর্ড সংখ্যক গ্রিনকার্ড দিয়েছে।
এই বিধান, আমেরিকার মূল ধারার জনগোষ্ঠী, সম্প্রদায় ভিত্তিক যে বরাদ্দ এবং ট্যাক্স প্রদানকারীদের অনেক চাপে রেখেছে। একই সঙ্গে এই বিধানের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এমন অনেককেই গ্রিনকার্ড দেয়া হয়েছে যাদের কারণে ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠীর অনেকেই এসব গ্রিনকার্ডধারীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় না পেরে চাকরি হারিয়েছেন।
নতুন এই অভিবাসন সংক্রান্ত বিলটি গত ফেব্রুয়ারি মাসে উত্থাপন করা হয়। আরকানসাস এবং জর্জিয়ার দু’জন সিনেটর এই বিল নিয়ে কাজ করেছেন এতদিন। রিফরমিং আমেরিকান ইমিগ্রেশন ফর স্ট্রং এমপ্লোয়মেন্ট (Reforming American Immigration for Strong Employment) নামক এই অ্যাক্টে অভিবাসী হতে চান যারা, তাদের শক্ত অর্থনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড, আমেরিকার ভাণ্ডারে ট্যাক্স প্রদান করার ক্ষমতা অথবা তারা কর্মসংস্থান করতে পারবেন সেই দক্ষতা দেখাতে হবে। এছাড়া তারা যেন গ্রিনকার্ড নিয়ে সরকারি ওয়েলফেয়ার বা জনকল্যাণমূলক যেসব সুবিধা আছে সেগুলো ভোগ না করতে পারেন, সে বিষয়ে বিধির উল্লেখ আছে।
‘এই প্রতিযোগিতামূলক বিধি-বিধানে কেবল ওইসব মানুষেরাই গ্রিনকার্ড পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন, যারা ভাল ইংরেজি জানেন। অর্থনৈতিকভাবে তারা নিজেদের চালিয়ে নিতে পারেন এমন সামর্থবান শুধু নয়, তারা যেন ট্যাক্স প্রদান করার মতো আয় রোজগার করতে পারেন এবং আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারেন এমন সব যোগ্যতা দেখাতে হবে।
Advertisement
এই রেইজ অ্যাক্ট নতুন অভিবাসীদের ওয়েলফেয়ার সুবিধা নিতে বাধা দেবে এবং আমেরিকান শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ যেন নষ্ট না হয়, তার রক্ষক হিসেবে কাজ করবে’, হোয়াইট হাউসে যে দু’জন সিনেটের এই বিল নিয়ে কাজ করছেন, তাদের সঙ্গে নিয়ে এসব কথা বলেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যদিও ১৯৯৬ সালে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের করা ওয়েলফেরার অ্যাক্টে কোনো নতুন অভিবাসী অবশ্য ৫ বছরের মধ্যে অথবা আরও বেশি সময় ধরে ওয়েলফেয়ার সুবিধা নিতে পারছেন না।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে প্রতি ১৫ জন নতুন গ্রিনকার্ডধারীর মাত্র একজন উচ্চশিক্ষিত, যার নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সক্ষমতা আছে। আমাদের এই ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে হবে। এটা করতে গিয়ে আমরা অন্যান্য দেশের অভিবাসন নীতিমালা পর্যালোচনা করেছি। অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডার অভিবাসন মডেল-ই বিশ্বের সেরা।
আরেকজন সিনেটর আরকানসাসের টম কটন বলেছেন, ‘আমাদের অধিক প্রযুক্তি জ্ঞান আছে, অথবা উদ্ভাবনী ব্যবসায়িক চিন্তা আছে এমন অভিবাসীদের পথ রুদ্ধ করে রেখেছি। সেটা উন্মুক্ত করা হবে। সাধারণ অভিবাসীদের গুরুত্ব না দিয়ে ওই ধরনের উচ্চশিক্ষিত এবং উদ্ভাবনী শক্তি আছে এমন মানুষদেরই গুরুত্ব দেয়া হবে।’
অবশ্য এই নতুন বিল নিয়ে এখনই নানা রকম আলোচনা পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। এই বিল সিনেটে পাস হবে কিনা সেটা নিয়েও সন্দেহ আছে। ফেব্রুয়ারিতে বিলটি যখন প্রথম আলোচনায় নিয়ে আসা হয়, তখনই অনেক রিপাবলিকান সিনেটর এটার বিপক্ষে অবস্থান নেন।
এবারে সিনেটে শুনানির মাধ্যমে সেটি পাস হলেই কেবল আইনে পরিণত হবে। তবে নতুন বিল নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ মত থাকলেও আমেরিকার অভিবাসন এবং গ্রিনকার্ড প্রদানের নিয়ম যে সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় সেটা নিয়ে একমত ডেমোক্রেট বা রিপাবলিকান দলের প্রায় অধিকাংশ আইনপ্রণেতা।
এমআরএম/জেআইএম