জাতীয়

টাকা দিয়েও অনিশ্চিত একই পরিবারের চারজনের হজযাত্রা

দীর্ঘদিনের নিয়ত পবিত্র হজ পালনের। সেই নিয়ত পূরণে স্থানীয় রাজিবপুর গার্লস হাই স্কুলের মাওলানা ফরিদউদ্দিনের মাধ্যমে ঢাকার লাকি ট্রাভেলসে টাকা জমা দেন জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের একই পরিবারের সাতজন। ট্রাভেলস এজেন্সি থেকে খবর আসে ২৭ জুলাই তাদের ফ্লাইট। সে অনুযায়ী ফরিদউদ্দিনের সঙ্গে গত ২৬ জুলাই জামালপুর থেকে আশকোনা হজক্যাম্পে আসেন তারা। কিন্তু পরিবারের তিনজনের ফ্লাইট হলেও আটকে যান বাকি চারজন।

Advertisement

তারা হলেন জামালপুরের জয়নাল আবেদিন আকন্দ, স্ত্রী শায়েদা খাতুন, চাচা আবুল কাশেম এবং চাচি লাল বানু।

ভিসা থাকলেও টিকিট না থাকায় তারা হজে যাওয়ার বিমান ধরতে পারেননি। লাকি ট্রাভেলসের সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগ করে জয়নাল আবেদিনের ছেলে জানতে পারেন, তাদের টাকা জমা হয়নি।

এরপরও আশা ছাড়েননি জয়নাল আবেদিন ও তার পরিবারের বাকি তিন সদস্য। তারা হজে যেতে পারবেন এ আশায় গত ২৭ জুলাই থেকে হজক্যাম্পের নিচতলার ফ্লোরে অবস্থান করছেন। কিন্তু দিনের পর দিন কেটে গেলেও সমস্যার কোনো সমাধান হচ্ছে না।

Advertisement

বুধবার (২ আগস্ট) হজক্যাম্পের নিচতলার ফ্লোরে কথা হয় তাদের সঙ্গে। জয়নাল আবেদিন আকন্দ জাগো নিউজকে জানান, হজে যাওয়ার জন্য আমরা সবাই মাওলানা ফরিদউদ্দিনের কাছে টাকা দিয়েছি। তিনি হজ এজেন্সির অফিসে টাকা জমা দিয়েছেন। এলাকার ১২ জনসহ একসঙ্গে আমরা মোট ৩৭ জন ঢাকায় আসি। এর মধ্যে আমরা পাঁচজন বাদে বাকি সবাই চলে গেছেন।

তিনি বলেন, আমরা এক পরিবার থেকে সাতজন হজে যাওয়ার জন্য একসঙ্গে সব টাকা জমা দিয়েছি। ছোট দুই ভাই হাবিবুর রহমান ও খলিলুর রহমান এবং এক ভাইয়ের স্ত্রী চলে গেছে (ফ্লাইট হয়ে গেছে)। কিন্তু আমরা পাঁচজন যেতে পারিনি। এর মধ্যে আমাদের এক পরিবারেরই চারজন।

তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে লাকি ট্রাভেলসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানিয়েছে, আমাদের টাকা জমা হয়নি। মাওলানা ফরিদউদ্দিন আমাদের টাকা জমা দেননি। কিন্তু মাওলানা সাহেব তার স্ত্রী ও শাশুড়িকে নিয়ে হজে চলে গেছেন। তাদের ফ্লাইটে কোনো সমস্যা হয়নি।

লাকি ট্রাভেলসের মালিক দাবিদার মনিরুজ্জামান খানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ওরা টাকা দেয়নি, উল্টা-পাল্টা কথা বলছে। টাকা দিয়ে থাকলে প্রমাণ দিতে বলেন। ওরা প্রতারণা করে হজে যেতে চাইছে।

Advertisement

তবে টাকা না দিলে ভিসা হলো কীভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টাকা কিছু দিয়েছে, কিছু টাকা দেয়নি। বাকি টাকা পরে দেয়ার কথা থাকলেও তা পরিশোধ করেনি। এজন্য ফ্লাইট হয়নি। টাকা না দিলে টিকিট হবে কীভাবে?

সম্পূর্ণ টাকা না নিয়ে ভিসা করা হলো কীভাবে? প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, নিয়ম হলো চূড়ান্ত রেজিস্ট্রেশনের জন্য সবার ভিসা ও ঘর ভাড়া করতে হয়। ধরেন, একটি লাইসেন্সে ২০০ জন হজযাত্রী আছে। এর মধ্যে একজনের ভিসা বা বাড়ি ভাড়া কম হলে সৌদি আরব থেকে কোনো ভিসা আসবে না।

যে পাঁচজনের ফ্লাইট হয়নি তারা কত টাকা করে দিয়েছেন? জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর না দিয়ে মনিরুজ্জামান বলেন, সম্পূর্ণ টাকা দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কিছু টাকা দিয়েছে। বাকি টাকা না দিলে আমি কীভাবে তাদের টিকিট দেব?

তিনি আরও বলেন, সম্পূর্ণ টাকা না দিয়েই ওরা ঢাকায় চলে এসেছে। কে তাদের ঢাকায় আসতে বলছে? তাদের তো খবরই দেয়া হয়নি। ওদের প্রশ্ন করেন কোম্পানি তাদের ফোন দিয়েছে কি না। ওরা অবশ্যই প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে।

এদিকে জয়নাল আবেদিনের পরিবারের মতো একই ধরনের সমস্যায় পড়েছেন কুড়িগ্রামের আকবর আলী। তিনিও মাওলানা ফরিদউদ্দিনের মাধ্যমে লাকি ট্রাভেলসের কাছে হজে যাওয়ার টাকা জমা দিয়েছেন। তবে তারও সম্পূর্ণ টাকা জমা হয়নি বলে দাবি করছে লাকি ট্রাভেলস।

এ বিষয়ে আকবর আলী জাগো নিউজকে বলেন, আমরা সব টাকাই মাওলানা ফরিদউদ্দিনের কাছে জমা দিয়েছি। আমার কোনো টাকা বাকি নেই। ফরিদউদ্দিন সৌদি চলে যাওয়ায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। আমরা এখন কী করব? আমরা হজে কি যেতে পারব না? কেউ কী আমাদের সমস্যার সমাধান করবে না?

এমএএস/এএস/এমএমজেড/আরএস/পিআর