বিশেষ প্রতিবেদন

শিক্ষার্থীদের গিনিপিগ বানিয়ে জাতির উন্নয়ন হয় না

নজরুল ইসলাম খান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর এবং সাবেক সচিব। শিক্ষা সচিবের দায়িত্ব পালনকালে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফল বিপর্যয় নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজ’র। কথা হয় শিক্ষা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পাঠ্যপুস্তকের মান নিয়েও। দীর্ঘ আলোচনায় তুলে ধরেন শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ মতামত। তিন পর্বের ধারাবাহিকের শেষটি আজ প্রকাশিত হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।

Advertisement

জাগো নিউজ : আলোচনা-সমালোচনা উভয়ই আছে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে। সার্বিক বিচারে শিক্ষার মান নিয়ে কী বলবেন?

নজরুল ইসলাম খান : শিক্ষার মান এগোচ্ছে বটে। তবে ডাবল লাইনের ট্রেন যেখানে আছে সেখানে ধীরে চলা ট্রেনটি মনে হয় দাঁড়িয়ে আছে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তুলনা করলে মনে হয় আমরা সেই ধীরে চলা ট্রেনের মতো থেমে আছি।

আসলে আমরা থেমে নেই। আমাদের গতি কম। তবে গতি বাড়ানো সম্ভব। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত করা হবে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তার প্রত্যয়কে গুরুত্ব দিতে হলে সর্বক্ষেত্রে রিফর্ম জরুরি।

Advertisement

শিক্ষার্থীদের গিনিপিগ বানিয়ে জাতির উন্নয়ন হয় না। এখন আইফোন-৭ চলছে। আগামীকাল আইফোন-৮ আসতে পারে। আইফোন-৮ চালানোর প্রস্তুতি না থাকলে তো প্রযুক্তির সঙ্গে থাকা হলো না।

জাগো নিউজ : শিক্ষার হার তো বাড়ল। প্রযুক্তির সঙ্গে থেকেই মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে।

নজরুল ইসলাম খান : আমাদের শিক্ষার্থীদের বডি বানানো হচ্ছে রাজহাঁসের। কিন্তু ডিম পাড়ছে কোয়েল পাখির। আমরা স্বপ্ন দেখি আমেরিকা-ইউরোপের জীবনমানের। কিন্তু উৎপাদনে সবচেয়ে কমে থাকতে চাই।

জাগো নিউজ : এবারের পাঠ্যপুস্তকে মারাত্মক ভুল ছিল। সংশোধনের চেষ্টাও চলল। এ নিয়ে এখন কী বলবেন?

Advertisement

নজরুল ইসলাম খান : পাঠ্যপুস্তক ইলেকট্রনিক করতে হবে। কারও প্রিন্ট করার দরকার পড়লে প্রিন্ট করে নেবে। ইলেকট্রনিক হলে প্রতি মুহূর্তে ভুল সংশোধন করা যাবে। ভুল হলে সবাই মতামত দিতে পারবে। স্কুলগুলোতে হাইস্পিড ইন্টারনেটের আওতায় আনতে হবে।

আমি বেশকিছু বই ইলেকট্রনিক করে দিয়ে এসেছি। মাদরাসা বইয়ে হাত দিয়েছিলাম। আমি জানি, বেশিদিন থাকার সুযোগ ছিল না আমার। আমি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু এরপর আর এগোয়নি। উন্নত বিশ্বের কথা বললে তাদের মতো রিফর্ম করতেই হবে।

জাগো নিউজ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার দাবিতে আন্দোলন করছেন। পুলিশের হামলায় শিক্ষার্থীরা আহতও হলেন। ওই ঘটনা কীভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন?

নজরুল ইসলাম খান : শিক্ষার্থীরা রাস্তায় যাবে কেন? মানুষকে জিম্মি করে কোনো দাবি আদায় হতে পারে না। এটি হচ্ছে কলেজ কর্তৃপক্ষের দায়। শিক্ষার্থীরা তাদের কলেজ কর্তৃপক্ষকে পরীক্ষা নিতে বাধ্য করতে পারবে। এরপর না হয় রাস্তায় আসতে পারত।

একই ভাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও বোধ থাকা দরকার। একটি গুলি একজন মানুষের জীবন কেড়ে নিতে পারে। পুলিশ প্রশাসন সেদিন আরও সংযত ও দায়িত্বশীল আচরণের পরিচয় দিতে পারত।

জাগো নিউজ : শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা নিরূপায়…

নজরুল ইসলাম খান : যে যেখানে আছেন, সেই নিজেকে রাজা মনে করেন। কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের কথা আগে থেকে গুরুত্ব দিলে কিন্তু ওই দিনের ঘটনা ঘটে না। শিক্ষায় সুশাসন না থাকার কারণেই এমন হচ্ছে।

জাগো নিউজ : শিক্ষা নিয়ে আপনি আশাবাদী তো?

নজরুল ইসলাম খান : অবশ্যই। তবে যে গতিতে এগিয়ে যাওয়ার কথা সে গতিতে হচ্ছে না। তবুও বাংলাদেশ শিক্ষায় আশানুরূপ ফলাফল করছে। শিক্ষামন্ত্রী অত্যন্ত ভালো মানুষ। বিনয়ী ও ভদ্রতার পরিচয় দিয়ে সব সমাধান করার চেষ্টা করছেন।

জাগো নিউজ : ভালো মানুষ আর ভালো প্রশাসকের মধ্যে তফাৎ থাকে। অনেকেই তো বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সমালোচনা করে বলছেন, তার আমলেই শিক্ষার সর্বনাশ হল।

নজরুল ইসলাম খান : তার সঙ্গে আমি কাজ করেছি। অনেকেই বলেছেন, তিনি ( শিক্ষামন্ত্রী) আমার বিরুদ্ধে বলেছেন। এমনকি সাংবাদিকরাও বলেছেন, তিনি (মন্ত্রী) লিখে দিয়েছেন যে আমার বিরুদ্ধে কী কী লিখতে হবে। কিন্তু আমি তা বিশ্বাস করিনি।

তার সঙ্গে আমার কোনো বিষয়ে দ্বিমত হয়েছে বলে জানা নেই। কিন্তু কিছু নিম্নমানের সাংবাদিক আমার সমালোচনা করে লিখেছিলেন। পরে অবশ্য জানতে পেরেছি, বিশেষ সুবিধা নিয়েই তারা লিখেছিলেন।

অবসরে যাওয়ার আগে মন্ত্রীমহোদয় আমাকে চারবার বলেছিলেন ব্রাজিলে যাওয়ার জন্য। কিন্তু বিষয়টি বুঝতে পেরে আমি যাইনি। পরে জানতে পারি মন্ত্রীমহোদয় নাকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশ করেছিলেন, আমি বারবার বিদেশি গিয়েছি।

তার (শিক্ষামন্ত্রী) বিষয়ে অনেকেই বলেন। কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনি।

এএসএস/এমএআর/আরআইপি