‘একটা সময় আমিও আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। হ্যাঁ, এটাই সত্য। কিন্তু এখন আমি বলবো এটা খুব বাজে একটা চিন্তা। কারণ আমাদের জীবন একটাই। আমাদের বাবা মা অনেক কষ্ট করে আমাদের বড় করেছেন। মা দশ মাস দশ দিন পেটে ধরে এত কষ্ট করেছেন। তাদের স্বপ্নের মূল্যায়ণ করা উচিত।’
Advertisement
কথাগুলো বলছিলেন লাক্সতারকা ফারিয়া শাহরিন। গতকাল সোমবার (৩১ জুলাই) মডেল রিসিলা বিনতে ওয়াজের আত্মহত্যা করেন। এরপর রাতে ফারিয়া ফেসবুক লাইফে আত্মহত্যা থেকে দূরে থাকার জন্য কিছু কথা বলেন এবং নিজেই একসময় আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন সেটাও স্বীকার করেন।
ফারিয়া বলেন, ‘মিডিয়াতে আসার কয়েক বছর পর একজনের সঙ্গে আমার সম্পর্ক (প্রেম) ছিলো। প্রথমদিকে সম্পর্ক ভালো গেলেও পরে ভালো যায়নি। সে আমাকে পড়তে দিত না। মানসিক টর্চার করত। তখন আমার মনে হত এই জীবন রেখে কি লাভ? তার চেয়ে আমি সুইসাইড করি। আমার বাবা-মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিল যে আমি ব্যারিস্টার হব। সে (প্রেমিক) আমাকে পরীক্ষার আগে পড়তে দিত না। আমি লন্ডন যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তার কারণে যেতে পারিনি। সে আমার ফেসবুক হ্যাক করে রেখেছিল। ক্লাস করে বাসায় ফিরে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতাম না। আমার জীবনটা একটা বক্সে বন্দি হয়ে গিয়েছিলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভালোবাসা অন্ধ। তাই তখন যা বলা হয়, তাই মেনে নিতে মন চায়। একবার মিনা বাজারের একটা বিজ্ঞাপন করেছিলাম। যেখানে দেখা যাবে নাইটি পরে আমি ঘুম থেকে উঠে স্বামীকে বাজারে যেতে বলব। ওই বিজ্ঞাপনটিতে কাজের পর আমার প্রেমিক এত মানসিক প্রেসার দিয়েছিল যে আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না। তার কথা রোজা রমজানের সময় আমাকে বারবার টিভিতে দেখাবে। তার বাবা ও মা নাকি মাইন্ড করবে। তখনও সুইসাইড করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু একটা সময় আমি ওই জেল থেকে বেরিয়ে আসি। আমি সুইসাইড করিনি। এখন আমি ভালো আছি।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘মিডিয়ার অনেক মানুষ আমাকে অনেকভাবে অপমানিত করেছে। কারণ তাদের নোংরা প্রস্তাব মেনে নেইনি, খারাপ কিছু করতে পারিনি। আমি লাক্সের বিজয়ী হওয়ার পরেও লাক্সের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের প্রতিযোগিতায় আমন্ত্রণ পেতাম না। আমাকে অনেক বড়বড় আয়োজন থেকে বাদ থেকে দেয়া হয়েছে। সোজা বাংলায় এর কারণ হচ্ছে, আমি খারাপ কাজ করতে পারিনি।’
ফারিয়া আরও বলেন, ‘কোনো একটা মানুষ থেকে কষ্ট পেয়েই কিন্তু মানুষ সুইসাইডের রাস্তা বেছে নেয়। কিন্তু কেন? আমরা কি একটি বারও আমাদের মা-বাবার কথা চিন্তা করতে পারি না? তারা কতটা কষ্ট পাবে। আল্লাহ আমাদের হাত-পা সবই দিয়েছেন তবে কেন সুইসাইডের পথ বেছে নিতে হবে?
আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছেন যাদের হাত নেই। কিন্তু বেঁচে থাকার তাগিদে পা দিয়ে লিখছেন। পরীক্ষায় পাস করছেন। অন্ধ মানুষ আছেন। যারা ভালোভাবে বেঁচে থাকতে অন্ধ স্কুলে লেখা পড়া করছেন। তাহলে নিজের জীবনটাকে কেন শেষ করে দিতে হবে?
সবশেষে ফেসবুকে লাইভে এসে এসব কথা বলার কারণ হিসেবে ফারিয়া বলেন, ‘আজ হয়ত কোনো ছেলে কোনো মেয়ের কাছ থেকে অথবা কোনো মেয়ে কোনো ছেলের কাছ থেকে কষ্ট পাচ্ছে। ধরে নিলাম পরস্পরকে খুবই ভালোবাসেন । কিন্তু তারপরেও সব বাদ দিয়ে যদি লেখাপড়া করেন, হতে পারে এর চেয়ে ভালো কাউকে আপনি জীবনে পাবেন।
Advertisement
আমি মনে করি, আত্মহত্যা করার মত লুজারের মত কাজ আর নেই। এত সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার কোনো দরকার নেই। আত্মহত্যা করার আগে বাবা-মায়ের কথা একবার ভাবুন। তারা কত কষ্ট পাবে সেটা ভাবুন। এই যে রিসিলা চলে গেলো, তার মেয়েটার কী হবে। ও তো জানেও না ওর মা আর নেই। ও মা মা বলে ডাকলেও কেউ সাড়া দেবে না। এর চেয়ে কষ্টের আর কী আছে।’
২০০৭ সালে লাক্সতারকার তকমা গায়ে জড়িয়ে মিডিয়াতে আসেন ফারিয়া শাহরিন। এরপর অভিনয় কমিয়ে মিডিয়া মার্কেটিং বিষয়ে পড়তে মালয়েশিয়া গেছেন তিনি। মাঝেমধ্যে দেশে ফিরে টুকটাক অভিনয় করেন ফারিয়া।
এনই/এলএ