দেশজুড়ে

ইতালিতে লোক পাঠাবেন হাজী মিলন, অতঃপর

বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে রাঙ্গামাটির বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন হাজী মিলন নামে এক প্রতারক। রাঙ্গামাটি শহরে অবস্থান করে চাকরির ভিসায় ইতালিতে পাঠানোর নাম করে এমন প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিলেন তিনি। প্রতারণার শিকার স্থানীয় লোকজন এ অভিযোগ নিশ্চিত করেছেন।  ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, হাজী মিলন নামের ওই প্রতারক গত বছরের শেষের দিকে রাঙ্গামাটি শহরের রিজার্ভবাজারের আবাসিক হোটেল পাহাড়িকা, হোটেল রাজু ও হোটেল মধুমিতাসহ কয়েকটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করেন। ওই সময় শহরের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন মিলন। তিনি নিজেকে ইতালি প্রবাসী ও ভিসার ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিয়ে লোকজনকে ইতালি নেয়ার জন্য প্রলুব্ধ করেন। এতে ফাঁদে পড়েন মো. আবু মুছা নামের রাঙ্গামাটি শহরের এক তরুণ ব্যবসায়ীসহ আরো কয়েকজন।জানা গেছে, ওই প্রতারক হাজী মিলন রাঙ্গামাটি গিয়ে খুব সুকৌশলে রেস্টুরেন্টে উচ্চ বেতনে চাকরির ভিসায় ইতালি পাঠানোর নামে প্রলোভনের ফাঁদ পাতেন। এতে রাঙ্গামাটি শহরের ৮-১০ জনের কাছ থেকে প্রায় পঞ্চাশ লাখ টাকা হাতিয়ে উধাও হয়ে যান। এছাড়া বিদেশে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রাঙ্গামাটির এক অসহায় তরুণীকে বিয়ে করেন প্রতারক হাজী মিলন। কিন্তু এর কিছুদিন পরেই মেয়েটিকে ফেলে পালিয়ে আত্মগোপন করেন তিনি। বর্তমানে সর্বস্ব হারিয়ে দিশেহারা তৈয়বা বেগম নামে অসহায় ওই নারী। আর স্বর্বশান্ত হয়ে পথে বসেছেন প্রতারণার শিকার লোকেরা।প্রতারণার শিকার আবু মুসা জাগো নিউজকে বলেন, সরল বিশ্বাসে ওই প্রতারকের কথায় প্রলুব্ধ হয়ে তিনি, তার আপন দুই ভাই রবিউল হোসেন, জহিরুল করিম এবং ফুফাতো ভাই খোরশেদ আলম ও এরশাদুল হক পান্নাসহ ইতালি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য প্রতারক হাজী মিলনের কাছ থেকে ভিসা নেয়া, মেডিকেল ফিটনেস পরীক্ষা, বিমান ভাড়া ও ইমিগ্রেশন বাবদ প্রায় ২০ লাখ টাকা দেন হাজী মিলনকে। এরপর টাকা নিয়ে হাজী মিলন তাদেরকে ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট ও ইমিগ্রেশন কার্ড এবং পুলিশ ভেরিফিকেশন কার্ড ধরিয়ে দেন। পরে ভিসা প্রক্রিয়াধীন আছে বলে কালক্ষেপণ করতে করতে শেষে রাঙ্গামাটি থেকে উধাও হন প্রতারক হাজী মিলন। এরপর তার আর কোনো হদিস মিলছে না। বর্তমানে তার আগে ব্যবহার করা মোবাইল ফোন নম্বরটি বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও প্রতারক মিলন একই কায়দায় আরো বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানান ভুক্তভোগীরা।আবু মুছা আরও জানান, প্রতারক মিলন তার সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে তৈয়বা বেগম নামের এক দরিদ্র মেয়েকে ইতালি নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কোর্টম্যারেজ করেন। বিয়ের কয়েক সপ্তাহ পর ওই অসহায় মেয়েটিকেও ফেলে পালিয়ে যান মিলন।হাজী মিলনের দেয়া কাগজপত্র যাচাই করে দেখা গেছে সেগুলো সবই ভুয়া। এতে দেখা যায়, ঢাকার ফকিরাপুলের আবাহা ওভারসীজ লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ডাটা ফিঙ্গার প্রিন্ট দেখানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. মাহবুবুর রহমান (রাসেল) নামে জনৈক ব্যক্তি। এছাড়া গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর ১৯ রাজউক এভিনিউ মতিঝিল ঠিকানায় কুমিল্লা মানি এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড কোম্পানি নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে মোট পাঁচজনের কাছ থেকে ২০০ ডলার ক্রয় দেখানো হয়েছে। কিন্তু সেটিও ভুয়া বলে জানান ভুক্তভোগীরা।সুশীল চাকমা/এমজেড/পিআর

Advertisement