বিদ্যুৎ স্থাপনায় নাশকতা করলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের জেল এবং ১০ কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রেখে ‘বিদ্যুৎ আইন-২০১৭’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
Advertisement
সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে এ অনুমোদনের কথা জানান।
এর আগে গত বছরের ৮ আগস্ট আইনের খসড়াটি নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা।
বিদ্যুৎ স্থাপনায় অনিষ্ট সাধনের ক্ষেত্রে নতুন আইনে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কেউ বিদ্যুৎকেন্দ্র, উপ-কেন্দ্র, বিদ্যুৎ লাইন বা খুঁটি বা অন্যান্য যন্ত্রপাতি নাশকতার মাধ্যমে ভেঙে ফেললে বা ক্ষতিগ্রস্ত করলে বা বিদ্যুৎ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে সরবরাহ লাইন বা যন্ত্রের উপর কোন বস্তু নিক্ষেপ করলে তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ বছর ও সর্বনিম্ন ৭ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এটা সাবোটাজ বা নাশকতা বলতে যা বোঝায় সেটা।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘আগের আইনে এ শাস্তি ছিল না, এটাই এই আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি।’
বর্তমানের বিদ্যুৎ আইন ১৯১০ সালের জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, ‘অনেক পুরনো আইন দিয়েই চলছে। সেটাকে আপডেট করার একটা বিষয় ছিল, দীর্ঘদিনের পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ সেক্টরেও অনেক পরিবর্তন চলে এসেছে। এজন্য এটাকে পরিমার্জন করে আনা হয়েছে।’
ব্যবস্থাপনায় হবে ইন্ডিপেনডেন্ট সিস্টেম অপারেটরআইনে একটি নতুন বিষয় নিয়ে আসা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘তা হলো- ইন্ডিপেনডেন্ট সিস্টেম অপারেটর প্রতিষ্ঠান। এটা বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সমন্বিতভাবে পরিচালনার জন্য সরকার প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধান অনুসরণ করে সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে একটি ইন্ডিপেনডেন্ট সিস্টেম অপারেটর প্রতিষ্ঠা করবে।’
তিনি বলেন, ‘ইন্ডিপেনডেন্ট সিস্টেম অপারেটর নির্ধারিত পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ সঞ্চালন প্রবাহ মনিটরিং, শিডিউলিং এবং বিতরণ ব্যবস্থা বা কোম্পানির চাহিদা অনুযায়ী ন্যায়পরায়ণতার ভিত্তিতে লোড বরাদ্দ করবে। মানে লোড ম্যানেজমেন্টের জন্য, কন্ট্রোলের জন্য একটি সংস্থা করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে আইনে।’
Advertisement
শফিউল আলম বলেন, ‘প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী কোন লাইসেন্স (বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান) টেলিফোন লাইনের কোন অংশের মধ্যে সার্ভিস লাইন বা বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনে নতুন পূর্তকর্ম বা এর মেরামত বা বিদ্যমান পূর্ত কর্মের সংশোধন করতে ইচ্ছুক হলে সংশ্লিষ্ট টেলিযোগাযোগ সংস্থাকে এ কর্মের বিষয়ে উল্লেখ করে নোটিশ দেবে। এর মধ্যে ইন্টারনেট, সাবমেরিন ক্যাবল-ট্যাবল এগুলো এর মধ্যে আসবে।’
শাস্তির আওতায় আনা হবে সংস্থার কর্মীদের মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘যারা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, পিডিবি (বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড) বলেন আর আরইবি (পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড) বলেন, এদের কোনো শাস্তির বিধান ছিল না। প্রস্তাবিত আইনে এ বিষয়টি আনা হয়েছে। যদি কোন লাইসেন্সি কর্মকর্তা-কর্মচারী কোন দোষ করে বা বিধি লঙ্ঘন করে তবে শাস্তি পেতে হবে।’
‘সরবরাহ এলাকার বাইরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করলে বা বিদ্যুৎ লাইন বা পূর্তকর্ম করলে, আইন বা বিধির কোন বিধান লঙ্ঘন করলে, যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখলে, ত্রুটিযুক্ত বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করলে সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।’
বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন বা বিতরণ কাজে নিয়োজিত কোনো সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কোন কর্মচারী এই আইনে উল্লেখ করা কোনো অপরাধ করেন বা অপরাধ সংঘটনে সহায়তা বা প্ররোচনা বা ষড়যন্ত্র করেন তিনি ওই অপরাধের জন্য দণ্ডিত হবেন।
যে অপরাধে যে শাস্তি শফিউল আলম বলেন, ‘নতুন আইনে বিদ্যুৎ চুরির শাস্তি সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড বা চুরি করা বিদ্যুতের মূল্যের দ্বিগুণ বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, যেটা বেশি হয় সেটি। আগে জরিমানা ছিল ১০ হাজার টাকা।’
‘বিদ্যুৎ চুরি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে হলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা বিদ্যুৎ চুরির মূল্যের দ্বিগুণ বা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, ‘কোন ব্যক্তি অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগে কোন যন্ত্র, ডিভাইস বা কৃত্রিম পদ্ধতি স্থাপন বা ব্যবহার করলে তিনি তিন বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এটা মিটার টেম্পারিং হতে পরে। এক্ষেত্রে আগের আইনে জরিমানা ২০ হাজার টাকা।
খসড়া আইনে বিদ্যুৎ অপচয়ে এক থেকে ৫ বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কেউ বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি চুরি বা অপসারণ করলে ২ থেকে ৫ বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
‘কেউ চুরি করা কোনো যন্ত্রপাতি বা বিদ্যুতের লাইনের সামগ্রী দখলে রাখলে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
আইনে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নাই কোনো ব্যক্তি যদি এমন অপরাধ করেন তবে ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন বলেও জানান শফিউল আলম।
আরএমএম/এআরএস/পিআর