জাতীয়

‘দুর্যোগ ঝুঁকি কমাতে সবার পরামর্শ নিয়ে এগোতে হবে’

দুর্যোগ ঝুঁকি কমাতে সংশ্লিষ্ট সবার পরামর্শ নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।

Advertisement

রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দু’দিনব্যাপী ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক জাতীয় কনভেনশন-২০১৭’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

ত্রাণমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আগে ছিল ছয় ঋতুর দেশ। এখন আর ছয় ঋতু নেই। শীতের সময় শীত নেই, গরমের সময় গরম নেই। আগাম বৃষ্টি, আগাম বন্যা, আগাম শীত। কোনো জিনিসে আর তাল মেলে না। কিভাবে দুর্যোগ মোকাবিলা করা যায় সেজন্য এই কনভেনশনের আয়োজন করেছি।’

এটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উপর বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় কনভেনশন জানিয়ে মায়া বলেন, ‘এতে প্রায় ২ হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করছেন। সময়ের সঙ্গে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ব্যবস্থাপনাকে তাল মেলাতে আপনাদের সবার (অংশগ্রহণকারী) প্রয়োজনীয় মতামত ও পরামর্শ নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’

Advertisement

কনভেনশনে বজ্রপাত, ভূমিকম্প, ভূমিধস, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে উল্লেখ করে কনভেনশনে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আশা করি অভিজ্ঞতা ও গবেষণার আলোকে আপনারা সুচিন্তিত ও বাস্তব মতামত দেবেন। এর আলোকে আমরা আগামী দিনের পরিকল্পনা ঢেলে সাজাব।’

চলতি বছর আমরা চারটি বড় দুর্যোগ মোকাবিলা করেছি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এই চারটি দুর্যোগে এ পর্যন্ত ৫৭ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য, নগদ ৬৭ কোটি টাকা, বাড়িঘর নির্মাণের জন্য ৭ হাজার বান্ডিল ঢেউটিন ও ২ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং ৫২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দিয়েছি।’

চাহিদা দেয়ার এক থেকে ৩ ঘণ্টার মধ্যে জেলা পর্যায়ে ত্রাণের বরাদ্দ পৌঁছে দেয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন ত্রাণমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে ‘ডিজাস্টার অ্যান্ড দিয়ার ম্যানেজমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জামিলুর রেজা চৌধুরী।

Advertisement

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, দেশের ৬১ শতাংশ ভূমি ও ৭১ শতাংশ মানুষ বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছেন। এ ছাড়া ৩২ শতাংশ ভূমি ও ২৭ শতাংশ মানুষ ঘূর্ণিঝড় ও লবণাক্ততার ঝুঁকিতে রয়েছেন। ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে ৭০ শতাংশ ভূমি ও ৮০ শতাংশ মানুষ।

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে ১৯৯২ সালের মহাপরিকল্পনাটি যুগোপযোগী করা, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ভল্যানটিয়ার নেটওয়ার্ক শক্তিশালী, ভবন নির্মাণে ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড কঠোরভাবে অনুসরণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিশেষজ্ঞদের সরকারের বিভিন্ন সংস্থায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেন জামিলুর রেজা চৌধুরী।

এই কনভেনশনে ৬টি কর্মশালা ও ৬টি সাইড ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের প্রধান প্রধান দুর্যোগগুলো নিয়ে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক, বাস্তবায়নকারী সংস্থা, উপকারভোগী, এনজিও, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং বিগত কয়েকটি দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত লোকসহ প্রায় ১৫০০ মানুষ এ কনভেনশনে অংশগ্রহণ করছেন বলে শনিবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল, সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. শাহ কামাল।

পরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক উদ্ভাবনী মেলার উদ্বোধন করেন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।

আরএমএম/এনএফ/পিআর