বিনোদন

জয়া কি আহসান না এহসান?

বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এপার বাংলার ছোট পর্দা মাতিয়েছেন মডেলিং ও নাটক-টেলিছবির অভিনয় দিয়ে। গেল কয়েক বছর ধরে সরব হয়েছেন চলচ্চিত্রে।

Advertisement

নাম, যশ, খ্যাতি- সবই পেয়েছেন তিনি। ঢাকা জয় করে জয়া অভিনয়ের মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন কলকাতায়ও। সেখানে কাজ করেছেন সৃজিত মুখার্জিসহ নামি দামি বেশ ক’জন নির্মাতার সঙ্গে। তার অভিনয়ের প্রশংসায় প্রকাশ্যেই মেতেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, প্রসেণজিৎ, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, বিদ্যা বালানের মতো অভিনয়শিল্পীরা।

শুধু তাই নয়, বেশ কিছু স্বীকৃতিও তিনি পেয়েছেন দুই বাংলার অভিনয়ে। গেল ২৪ জুলাই তার হাতে প্রধানমন্ত্রী তুলে দিয়েছেন ২০১৫ সালের সেরা অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। আর গতকাল শনিবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যায় কলকাতা থেকে তিনি গ্রহণ করেছেন অভিনয়ে সেরা বাঙালির স্বীকৃতি। এ অর্জনের জন্য প্রিয় অভিনেত্রীকে অভিনন্দন জানান তার ভক্তরা।

তবে অত্যন্ত বেদনার বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছে জয়া আহসানের নাম বিভ্রাট। এ অনুষ্ঠানে জয়াকে মঞ্চে ডাকা হয় জয়া এহসান বলে। জয়াকে নিয়ে ডকুমেন্টারিতেও দেখা যায় জয়া আহসানকে জয়া এহসান বলে পরিচয় করিয়ে দেয়া হচ্ছে। জয়ার নাম নিয়ে এ বিভ্রান্তিতে ঢাকায় তার ভক্ত-অনুরাগীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

Advertisement

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে অনেক সমালোচনা চলছে। গীতিকার জিয়াউদ্দিন আলম তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে অভিনেত্রী জয়া আহসানকে ট্যাগ দিয়ে লিখেছেন, ‘অামি একজনকে চিনি, তিনি বাংলাদেশের একজন সু-অভিনেত্রী জয়া আহসান। জয়া এহসান নামে কাউকে চিনি না! কিন্তু কলকাতার একটি অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রামে জয়া অাহসানকে শেষ্ঠ বাঙালি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। খরবটি শুনে খুব অানন্দিত হয়েছি এবং জয়া অাহসানকে জানাই অভিনন্দন।’

একটু পেছন ফিরে তাকালে দেখা যাবে, যখন থেকে জয়া কলকাতায় কাজ করতে শুরু করলেন তখন থেকেই সেখানকার মানুষেরা তাকে জয়া এহসান নামেই ডাকছেন। এমনকি সেখানকার গণমাধ্যমগুলোও তার নামের শেষে উপাধি হিসেবে ‘এহসান’ উল্লেখ করছেন। এ নিয়ে বহু সমালোচনা হয়েছে দুই বাংলাতেই।

তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে জয়া নিজেই কলকাতার বেশ কিছু গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, তার নাম জয়া আহসান, জয়া এহসান নয়। তার নামটা যেন কলকাতায় সঠিকভাবে উচ্চারণ ও লেখা হয় সেজন্য তিনি অনুরোধও করেছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এখনো জয়ার নামের শেষে ‘এহসান’ই যুক্ত হচ্ছে। এবং সেরা বাঙালির পুরস্কার দেয়ার মঞ্চেও তাকে ভুল নামে ডাকা হলো তার অনুরোধ উপেক্ষা করে, যা ছিল খুবই দৃষ্টিকটু।

শুধু জয়ার ক্ষেত্রেই নয়, গতকাল শনিবার খেলাধুলায় সেরা বাঙালি হিসেবে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ক্রিকেটার ও অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে পুরস্কার দেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে মাশরাফির নাম দেখাতে গিয়েও ভুল লেখা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে ‘মোর্তোজা’। এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে সেরা বাঙালি হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়াদের নাম ভুল করা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ বলেই মনে করছেন অনেকে। কেননা, যাকে পুরস্কার দেয়া হচ্ছে তার সম্পর্কে আর কিছু না হোক, তার নামটা অন্তত সঠিকভাবে জানা উচিত।

Advertisement

জয়া ও মাশরাফির নাম ভুল করার সমালোচনায় বলা হচ্ছে, নাম বিকৃত করা একটা জঘন্য অপরাধ এবং নোংরা মানসিকতা। কলকাতার বাঙালিরা বরাবরই এমনটি করে থাকে। বিশেষ করে কলকাতার গণমাধ্যমে মানুষের নাম বিকৃত করার অসুস্থ মানসিকতা লক্ষ করা যায়। আনন্দবাজারের মতো নন্দিত কাগজেও অত্যন্ত বাজেভাবে নিজেদের মনগড়া নাম লিখতে দেখা যায়।

ওখানকার সাংবাদিকরা ব্যাকরণের ‘লোক দেখানো পাণ্ডিত্য’ জাহির করতে গিয়ে সালমানকে বলে ‘সলমন’, নুসরাতকে বলে ‘নুসরত’ আর জয়া আহসানকে লিখছে জয়া এহসান। তারা এটুকু উপলব্দিই করে না, নাম কখনো ব্যাকরণের আওতায় পড়ে না। তারা ইংরেজি বানান থেকে বাংলা নাম উচ্চারণ করার চেষ্টা করে। আর ‘অ-কার’ নিয়ে তাদের দুনিয়ার দুর্বলতা। মাজহার হয়ে যায় মজহার, কামাল হচ্ছে কমল আর আহসান হয়ে যাচ্ছে এহসান। কিন্তু অদ্ভুতভাবে শাহরুখকে ‘শহরুখ’ লিখছেন না। সানিকে সনি লিখছেন না। অথচ একজনের নাম নেয়া বা লেখার আগে যার নাম তার কাছ থেকে জেনে নিলেই সমস্যাটা চুকে যায়।

একজন মানুষকে তার পরিবার যে নাম দেয় সেই নাম ধরে তাকে সম্বোধন করাটা সম্মানের। আর নাম বিকৃত করা চরমতর অভদ্রতা। কলকাতার মানুষেরা ও গণমাধ্যমের কর্তাব্যক্তিরা ইচ্ছা করেই নামের বিকৃতি করে। তারা জয়া আহসানের নামটা জেনেও নিজেদের পাণ্ডিত্য জাহির করার জন্য এমনটা করে।

মানুষের নাম একটি স্পর্শকাতর বিষয়। মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় তার নামটাকে বিকৃতি করে উচ্চারণ করলে। নামের ভুলে মানুষ তার পরিচয় হারায়। নামের ভুলে অপরাধী না হয়েও বছরের পর বছর জেল খেটেছে সেই নজির আছে এই দেশে। নামের ভুলে পরীক্ষার রেজাল্ট বদলে গেছে। নামের ভুলে সম্পত্তি বেহাত হয়েছে। নামের ভুলে অনেক কিছুই হতে পারে। তাই নামের বিকৃতি করাটা কখনোই কাম্য নয়।

নাম নিয়ে এ বিভ্রান্তির বিষয়ে জয়া আহসানের নিজেরও উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তার দর্শক-ভক্তরা। যাতে করে তার নামটাকে ভুলভাবে ডাকা না হয়, লেখা না হয়। কারণ, তার সামনেই ভুল পদবিতে তাকে ডাকা হচ্ছে। তার সঙ্গে কথা বলেই নিউজ বা সাক্ষাৎকারে ভুল নাম লেখা হচ্ছে। তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ বা সংশোধন করা গেলে নাম নিয়ে আর দুর্নাম হবে না।

জয়াও নিশ্চয়ই একমত হবেন যে, এপার বাংলার মানুষ জয়া আহসানকে চেনেন ও ভালোবাসেন। জয়া এহসান বলে কেউ নেই, কিছু নেই এখানে। তবে যদি জয়া নিজে ওপারে গিয়ে এহসান বলে খ্যাতি পাওয়ায় এই পদবিকেই মেনে নিয়ে থাকেন তবে সেই ঘোষণাও দেয়াটা জরুরি। এপারের দ্বিধা-দ্বন্দ্বটা কেটে যাবে। একটা মানুষের দুই দেশে জনপ্রিয়তা থাকতে পারে বটে, দুই রকম নাম থাকতে পারে না।

এলএ