আইন-আদালত

‘হাইকোর্ট কেন রাখবেন, উঠিয়ে দেন’

অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত নতুন বিধিমালার যে খসড়া আইন মন্ত্রণালয় দিয়েছে, তা সুপ্রিম কোর্টের সুপারিশ অনুসারে নয় বলে অভিহিত করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তিনি বলেছেন, ‘এটি উল্টো। এভাবে চলতে পারে না।’

Advertisement

অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে আপিল বিভাগ বলেন, সরকার নির্ধারিত তারিখে বিধিমালার গেজেট কার্যকর হবে। অথচ মাসদার হোসেন মামলার রায়ে আদালত বলেছেন, রায় মোতাবেক গেজেট হবে। আমরা যেটা বলেছি তার উল্টোটা খসড়া করে পাঠিয়েছেন। রায়ের ১৬ বছরে এটা হয়নি। আর সরকার নির্ধারিত তারিখে গেজেট হলে ১৬০০ বছরেও হবে না।

নতুন বিধিমালার খসরা পর্যালোচনা করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে এ কথা জানিয়ে চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার পর যেকোনো সময় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য আলোচনায় বসতে বলেছেন সর্বোচ্চ আদালত।

আইনমন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেল ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা এই আলোচনায় থাকতে পারবেন জানিয়ে আদালত আগামী ৬ আগস্ট রোববার পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ঠিক করেছেন।

Advertisement

রোববার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ আদেশের জন্য পরবর্তী এই দিন ধার্য করেন।

আইনমন্ত্রীর দেয়া বিধিমালার খসড়ায় ‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ’ শব্দ দু’টি নিয়ে আজ শুনানিতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আপিল বিভাগ।

রোববার সকালে দাখিল করা বিধিমালার নতুন খসড়া তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বলতে কী বোঝায়, প্রত্যেক আইনে সংজ্ঞায়িত করা আছে। তা আমি আইনমন্ত্রীকে দেখিয়েছি। কর্তৃপক্ষ বলতে বিচার বিভাগের জন্য রাষ্ট্রপতিকে রাখলেন। তাহলে তো আইন মন্ত্রণালয়ই থাকছে। এ বিষয়ে সমাধানে না গেলে চলবে না।’

আপিল বিভাগ আরও বলেন, এখানে বলা হলো কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত হবে। তাহলে হাইকোর্টের কী থাকল? সব মন্ত্রণালয়ের। ১৮৬১ সালে কলকাতা হাইকোর্ট হয়েছে। তখন থেকে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকরা নিম্ন আদালত পরিদর্শন করেন। এ ব্যবস্থা চলে আসছে। হাইকোর্ট কেন রাখবেন? হাইকোর্ট উঠিয়ে দেন।

Advertisement

অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম আইনমন্ত্রী এসেছেন। খসড়া দিয়ে গেছেন। প্রেসে বক্তব্য দিয়েছেন, হয়ে গেছে... কিন্তু কী রকম হলো?

এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমি বিদেশ যাওয়ার সময় মন্ত্রণালয় জিও দেয়। জবাবে আদালত বলেন, আপনি তাহলে ‘অ্যাভয়েড’ করছেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, না। আদালত বলেন, উনি (আইনমন্ত্রী) এখান থেকে যাওয়ার পর কমপ্লিটলি ইউটার্ন দেখলাম।

আদালত বলেন, রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দুপুর ২টা থেকে আমি এবং আপিল বিভাগের বিচারপতিরা রাত ১২টা পর্যন্ত আপনাদের (সরকার) সময় দেবো। বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধিমালা নিয়ে আর রশি টানাটানি নয়। আইনমন্ত্রীসহ সরকারের যেকোনো ‘এক্সপার্ট’ আসবেন, বৈঠকে বসব। পরে আদালত আদেশের জন্য ৬ আগস্ট সময় নির্ধারণ করেন।

গত ২৭ জুলাই বিকেলে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির খসড়া হস্তান্তর করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক

পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিধিমালার খসড়া প্রধান বিচারপতির কাছে হস্তান্তর করেছি। এটি এখন তিনি দেখবেন। পরে তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।

গত রোববার (২৩ জুলাই) রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন মঞ্জুর করে এ গেজেট প্রকাশে আরও এক সপ্তাহ সময় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

এর আগে গত ১৬ জুলাই প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে এ সংক্রান্ত গেজেট শিগগিরই প্রস্তুত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আইনমন্ত্রী।

এরও আগে গত ২ জুলাই এক অনুষ্ঠান শেষে শৃঙ্খলাবিধির গেজেট ১৫ জুলাইয়ের আগেই প্রকাশিত হবে বলে সাংবাদিকদের কাছে আশা প্রকাশ করেছিলেন আইনমন্ত্রী। ওইদিনই সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এ গেজেট প্রকাশে রাষ্ট্রপক্ষের করা দুই সপ্তাহের সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছিলেন, ‘এটিই লাস্ট চান্স’।

১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেনের মামলায় (বিচার বিভাগ পৃথককরণ) ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়া হয়। ওই রায়ের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল। আপিল বিভাগের এ নির্দেশনার পর গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি খসড়া শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধি প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।

গত বছরের ২৮ আগস্ট শুনানিতে আপিল বিভাগ খসড়ার বিষয়ে বলেন, শৃঙ্খলা বিধিমালা সংক্রান্ত সরকারের খসড়াটি ছিল ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার হুবহু অনুরূপ; যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থি।

এরপরই সুপ্রিম কোর্ট একটি খসড়া বিধিমালা করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠান। পরবর্তীতে গেজেট প্রকাশে দফায় দফায় সময় পায় রাষ্ট্রপক্ষ।

এফএইচ/এনএফ/পিআর