জাতীয়

২০৩০ সালের আগেই সবার জন্য নিরাপদ পানি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এসডিজি’র নির্ধারিত সময়সীমা ২০৩০ সালের আগেই শতভাগ মানুষকে নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে চাই। গোটা বিশ্বে এই মুহূর্তে ২৪০ কোটি মানুষ স্যানিটেশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। নিরাপদ পানির অভাবে পৃথিবীতে বছরে ১০ লাখ মানুষ মারা যায়, যাদের অধিকাংশই শিশু। প্রতিদিন গড়ে বিশ্বে এক হাজার শিশু বিশুদ্ধ পানির অভাবে প্রাণ হারায়।

Advertisement

শনিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে তিন দিনব্যাপী ‘ওয়াটার সামিট-২০১৭’ এর উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, সুপেয় পানির প্রাপ্যতা এথনও হুমকিতেই রয়ে গেছে। বিশ্বের প্রায় শতকরা ৪০ ভাগ মানুষ কমবেশি সুপেয় পানি সমস্যায় ভুগছে। বিশ্বের প্রায় ১০৭ কোটিরও বেশি মানুষ নদী অববাহিকায় বসবাস করেও পানির চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজধানী ঢাকায় নতুন খাল খনন, পুরনো খাল সংস্কার, জলাধার সংরক্ষণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সরকার ২০২১ সাল নাগাদ ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে বিভাগীয় সদরগুলোতে ভূ-উপরিস্থিত নিরাপদ পানি সরবরাহের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এসডিজি’র নির্ধারিত সময়সীমা ২০৩০ সালের আগেই শতভাগ মানুষকে নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে চাই।

Advertisement

জাতিসংঘের পানি এবং স্যানিটেশন বিষয়ক বিশেষ প্যানেলের সদস্য শেখ হাসিনা বলেন, শিল্পাঞ্চল, বসতি স্থাপনসহ সব এলাকার জলাধার সৃষ্টি, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং বর্জ ও দূষিত পানি নিষ্কাশনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। নাব্যতা হ্রাস প্রতিরোধে দেশে নদ-নদীতে ড্রেজিং কার্যক্রম চলছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনায় সরকার গৃহীত কার্যক্রমসমূহের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে : ১৯৯৯ সালে জাতীয় পানিনীতি প্রণয়ন। ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যুয়ারেজ অ্যাক্ট-১৯৯৬ প্রণয়ন, ন্যাশনাল ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন অ্যাক্ট-২০১৪ প্রণয়ন এবং আর্সেনিক সমস্যা মোকাবেলায় ‘ন্যাশনাল পলিসি ফর আর্সেনিক মিটিগেশন অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন প্লান’ (এনএএমআইপি) প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে।

পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই নীতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার সঙ্গে বন্ধুত্বের তাগিদ থেকে নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনায় বিশ্ব পরিস্থিতির দিকেও নজর দিতে হবে।

তিনি বলেন, পৃথিবীর শতকরা ৯০ ভাগ বিপর্যয়ের জন্য দায়ী পানি। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যুর শতকরা ৭০ ভাগই সংঘটিত হয় বন্যা এবং অন্যান্য পানি-সংক্রান্ত দুর্যোগে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগর সভ্যতার ক্রমবিকাশ এবং প্রযুক্তিগত ভিন্নতায় পানি ব্যবহারের ধরনের পরিবর্তন হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ্য সৃষ্ট ৮০ শতাংশেরও বেশি অপরিশোধিত বর্জ্য পানি প্রকৃতিতে ফিরে গিয়ে বড় আকারে পরিবেশ দূষণ সৃষ্টি করছে।

Advertisement

নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে তার সরকার ইতোমধ্যেই বিশেষ সাফল্য অর্জন করেছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে ৮৪ শতাংশ মানুষের জন্য নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করার লক্ষ্য নির্ধারিত ছিল। ২০১৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ৮৭ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানির আওতায় এসেছেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষ নিরাপদ পানির সুবিধা পাচ্ছেন। এসডিজির নির্ধারিত সময়সীমা ২০৩০ সালের আগেই আমরা শত ভাগ মানুষকে নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে চাই। দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধার আওতায় এসেছে। এর মধ্যে শতভাগ স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশনের আওতায় এসেছে ৬১ শতাংশ মানুষ। উন্মুক্ত স্থানে মলমূত্র ত্যাগের হার গত ৮ বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছে। এটা বর্তমানে ১ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। ২০০৩ সালেও এই হার ছিল ৪২ শতাংশ।

তিনি বলেন, এসডিজি-৬ অর্জিত হলে এসডিজির আরও অন্তত সাতটি লক্ষ্য অর্জন সক্ষম হবে।

এগুলো হচ্ছে- ক্ষুধামুক্তি (এসডিজি-২), সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ (এসডিজি-৩), সাশ্রয়ী ও দুষণমুক্ত জ্বালানি (এসডিজি-৭), শিল্প উদ্ভাবন ও অবকাঠামো (এসডিজি-৯), টেকসই নগর ও জনপথ (এসডিজি-১১), জলবায়ু কার্যক্রম (এসডিজি-১৩) এবং জলজ-জীবন (এসডিজি-১৪)।

এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাস মাহমুদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ।

এফএইচএস/জেএইচ/এমএস