আন্তর্জাতিক

রীতিমতো ‘অনুবাদসন্ত্রাস’

পুওর ওরাল হাইজিন। এর বাংলা করা হলো ‘দরিদ্র ওরাল স্বাস্থ্যবিধি’।

Advertisement

কেমোথেরাপি কী? বলা হলো- ‘প্রমিত প্রশাসনের অংশস্বরূপ এক বা একাধিক বিরোধী ক্যানসার সঙ্গে চিকিৎসা আছে। অধিকাংশ ক্যান্সার কোষের একটি সমালোচনামূলক সম্পত্তি বাঁধন ডিভাইড প্রাণনাশ দ্বারা কাজ।’

পোস্ট অপারেটিভ এরিয়া। এর বাংলা করা হয়েছে ‘পশ্চাৎ অস্ত্রোপচার কক্ষ।’

অনুবাদেই শেষ নয়। মেঝেতে জল পড়ে থাকলে বয়স্কদের পা পিছলে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকিকে এক কথায় কী বলে? লেখা হয়েছে- ‘জলপ্রপাতের ঝুঁকি’।

Advertisement

আরও রয়েছে- ‘যখন আপনি আমাদের সঙ্গে একটা সম্পর্কতা শুরু করায় একটা প্রমিস বানান, তখন এটা শুধুমাত্র আমরা আমাদের রাখায় ন্যায্য হয়।’

এসবের কোনটা ভারত সরকারের স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি পত্রিকার অংশ, কোনটা একটি নামকরা মোবাইল কোম্পানির বিজ্ঞাপন।

আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য-বিষয়ক কেন্দ্রীয় সরকারি পত্রিকার ওইসব বাংলা অনুবাদের কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে।

এ ছাড়া একটি মোবাইল কোম্পানির পাতা-জোড়া রঙিন বিজ্ঞাপন কিছুদিন আগে ছাপা হয়েছিল জনপ্রিয় সংবাদপত্রগুলোর প্রথম পাতায়।

Advertisement

অনুবাদ বা এক কথায় প্রকাশের এহেন কাণ্ড নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে হাসি-মস্করা যেমন করছেন, তেমনই সত্যিকার অর্থে প্রতিবাদও করছেন অনেকে। প্রতিবাদ জানাতে রাস্তাতেও নেমেছেন অনেকে।

ভাষাবিদ ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য পবিত্র সরকার এ বিষয়ে বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘একটা বীভৎস ধরনের বাংলা তৈরি হচ্ছে। যেটা বাঙালির কাছে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। এসব বাংলা ছাপার অক্ষরে প্রকাশ পাচ্ছে দেখে আমরা খুবই বিরক্ত।’

কিন্তু কেন এই নিম্নমানের, অর্থহীন বাংলা ছাপা হচ্ছে? এর জবাব খুঁজতে গিয়ে কেউ দুষছেন গুগল ট্রান্সলেটরকে। কারো বক্তব্য- অযোগ্যদের হাতে পড়েই বাংলার এই অবস্থা।

কলকাতার কলামিস্ট ও অধ্যাপক গর্গ চ্যাটার্জির কাছে এসবের ব্যাখ্যা হলো- ‘রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক ক্ষমতার উৎস যখন বাংলার বাইরে হয়, তখন তারা বাংলাকে একটা দ্বিতীয় শ্রেণির বাজার বলে মনে করতে থাকে। সেই ভাবনা থেকেই তারা মনে করে কোনো একটা মূল ভাষায় লেখার পরে যেমন খুশি একটা বাংলা তর্জমা করে দিলেই বাঙালিকে খাওয়ানো যাবে।’

‘অথচ এই একই মোবাইল কোম্পানি যখন বাংলাদেশে বিজ্ঞাপন দেয়, তারা কিন্তু এই সাহসটা সেখানে করে না। আলাদা করে বিজ্ঞাপন তৈরি হয়ে সে দেশের জন্য। এখানে কেন হিন্দিতে বিজ্ঞাপন তৈরি হবে, আর সেটাকে যেমন-তেমন করে গুগল দিয়ে বাংলা করে দেয়া হবে? প্রশ্ন গর্গ চ্যাটার্জির।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের যে বিভাগটি এসব ছেপেছিল, তারা ভুল হয়েছে জানতে পেরে এখন শুধরে নেয়ার কথা বলছে। আর মোবাইল কোম্পানিটি সমালোচনার মুখে পড়ে বিজ্ঞাপন ছাপা হওয়ার দিনই ক্ষমা চেয়ে দায় সেরেছে।

এনএফ/জেআইএম