রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার অন্যতম ‘পরিকল্পনাকারী’ নব্য জেএমবির সদস্য আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ গ্রেফতার হওয়ায় খবর শুনে কাঁদছেন মা। ছেলে জঙ্গি এমন খবর শুনার পর থেকে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
Advertisement
তবে আসলাম হোসেন জঙ্গি হয়ে ফিরবেন এটি বিশ্বাস হচ্ছে না তার মা নাসিমা বেগমের। এতদিন ছেলের ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। শুক্রবার ভোরে বগুড়া জেলা পুলিশের একটি দল নাটোর থেকে আসলামকে গ্রেফতার করে।
আসলাম হোসেনের মা নাসিমা বেগম রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের মথুরা নওদাপাড়ায় বাবা সেকেন্দার আলীর বাড়িতে বাস করছেন। ছয়-সাত বছর আগে স্বামী আব্দুস সালামের সঙ্গে ছেলে মেয়েকে নিয়ে এখানে চলে আসেন নাসিমা। আসলামের বোনের বিয়ে হয়েছে রাজশাহীতেই।
তাদের গ্রামের বাড়ি নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের কাঞ্চনপুরে। আসলামের গ্রেফতার নিয়ে এলাকায় দিনভর চলে আলোচনা। আশপাশ গ্রাম থেকে অনেকেই এসে ওই গ্রামে ভিড় জমান। সকালে মান্দা থানার পুলিশ কাঞ্চনপুর গ্রাম পরিদর্শন করে।
Advertisement
তবে মা নাসিমা বেগমের ভাষ্য, গত বছরের ১১ রমজান থেকে নিখোঁজ আসলাম। এরপর তার সঙ্গে পরিবারের আর কোনো যোগাযোগ নেই। ছেলে একদিন ফিরবে এই আশায় ছিলেন মা। তাই থানায় জিডিও করেননি। তবে জঙ্গি হয়ে ছেলের এমন ফেরা কখনও চাননি তিনি।
আসলামের চাচা আবুল কালাম জানান, আসলামের পরিবারের দেয়া নাম রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে মোহন রানা। এলাকার মানুষ আসলামকে মোহন নামেই ডাকে। তার বাবা আব্দুস সালাম কৃষি কাজ করতেন। ২০০৯ সালে একটি আর্থিক লেনদেনের মামলায় আব্দুস সালামের এক বছর কারাদণ্ড হলে তিনি পরিবারসহ উধাও হন। এখনও তারা গ্রামে ফিরে আসেননি। আসলাম ২০১৫ সালের দিকে একদিন সকালে গ্রামে ফিরে। ওদিন বিকেলেই আবার চলেও যায়। ওই যাওয়ায় তার শেষ যাওয়া। এরপর আর তাদের সাথে যোগাযোগ হয়নি পরিবারের।
পরিবারের ভাষ্য, আসলাম কাঞ্চনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে নানার বাড়িতে চলে আসেন। পবার নওহাটা মডেল উচ্চবিদ্যালয় থেকে তিনি জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন।
এরপর তিনি রাজশাহীর শাহ মখদুম প্যারামেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। পরে ভর্তি হন রাজশাহী মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। গত বছর তার এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই পরীক্ষায় অংশ নেয়া নিশ্চিত করতে পারেনি পরিবার।
Advertisement
আসলামের বাবা-মায়ের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মান্দা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিসুর রহমান। তবে এখনও এ বিষয়ে তৎপরতা শুরু হয়নি বলে জানিয়েছেন রাজশাহীর পবা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিমল কুমার চক্রবর্তী।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৩০ জুন সন্ধ্যায় কয়েক জন জঙ্গি হলি আর্টিজান বেকারিতে ঢুকে সবাইকে জিম্মি করে। পরে সেখানে তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি দেখতে গেলে জঙ্গিদের হামলায় পুলিশের দুই কর্মকর্তা এসি রবিউল ও ওসি সালাউদ্দিন নিহত হন।
ওই ঘটনায় ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জন নিহত হন। পরে ১ জুলাই সকালে ‘অপারেশন থান্ডার বোল্ট’ নামে প্যারা কমান্ডো বাহিনীর অভিযানে ৫ জঙ্গি নিহত হয়।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এএম/পিআর