প্রবাস

মানবপাচারে সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান মালয়েশিয়ার

মানবপাচারের সঙ্গে মালয়েশিয়া জড়িত বলে আল-জাজিরা টেলিভিশনের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে করা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছ দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

Advertisement

সম্প্রতি আল-জাজিরা টেলিভিশনে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে মানবপাচারে মালয়েশিয়ার সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে বলা হয়, দেশটিতে চার মিলিয়ন অবৈধ শ্রমিক আছে, যার অনেকেই মানবপাচারের শিকার। তবে দুই মিলিয়ন শ্রমিকের বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। তবে এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে মালয়েশিয়া সরকার।

দেশটির উপ প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি ড. জাহিদ হামিদি গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বিদেশি শ্রমিককে জড়িয়ে মালয়েশিয়াকে অন্যায়ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের তদন্তে দেখা গেছে, আল-জাজিরার প্রামাণ্যচিত্রটি ছয় মাস আগের করা।

আল-জাজিরার তথ্যচিত্র অনুসরণ করে গৃহীত পদক্ষেপ ও সরকার কীভাবে বিদেশি শ্রমিকদের সমস্যা মোকাবেলা করবে – এ বিষয়ে তিনি জানান, আল-জাজিরা অনেকগুলো বিষয় স্পর্শ করেছে, যেগুলো নেতিবাচক।

Advertisement

এর আগে আল-জাজিরা ‘মালয়েশিয়ান মাইগ্রেন্ট মানি ট্রায়াল’ নামে এক অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন সম্প্রচার করে। ওই প্রতিবেদনে বেরিয়ে আসে একেক জন অভিবাসী শ্রমিক মালয়েশিয়ার বাণ্যিজের একেকটি উৎস ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতির শিকার। এতে দেখানো হয়, লোভ দেখিয়ে কীভাবে বাংলাদেশ থেকে তাদের নিয়ে আসা হয়েছে।

এক ভুক্তভোগী বাংলাদেশি ওই প্রতিবেদন বলেন, এমন জানলে আমি কোনদিনই এ দেশে আসতাম না। আমার সঙ্গে যা করা হয়েছে, তা যেন আর কারও সঙ্গে না করা হয়।

নাসির (ছদ্মনাম) নামে আরেকজন ভুক্তভোগী জানান, ভ্রমণ ভিসায় মালয়েশিয়ায় চাকরির আদম ব্যবসায়ীর প্রতিশ্রুতিতে তিনি এসেছেন। তাকে বলা হয়েছিল প্রতিমাসে ৩৭০ ডলার দেশে পাঠাতে পারবেন। এ জন্য খরচ হবে ৩৪ হাজার ৩০০ টাকা মাত্র। পরে তিনি রাজি হন।

২০১৬ সালের আগস্ট মাসে নাসির মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে আসেন। কিন্তু তাকে বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করার জন্য কেউ আসেনি। পাচারকারী চক্র তাকে বলে বিমানবন্দরে সমস্যা তাই ইন্দোনেশিয়া হয়ে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে হবে। তাকে কুয়ালালামপুর থেকে বিমানে ইন্দোনেশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে তাকেসহ আরও অনেক বাংলাদেশিকে চার দিন আটকে রাখে ওই চক্র। নির্মম নির্যাতন করে চারদিন পর তাদের একটি ছোট নৌকাতে করে সমুদ্র পার করে মালয়েশিয়া সীমান্তে ছেড়ে দেয়। তারপর নিজেদের ব্যবস্থা নিজেদেরেই করতে হয়েছে। বর্তমানে নাসির অবৈধ অভিবাসী।

Advertisement

২৫ মিনিটের ওই ভিডিও প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় মালয়েশিয়ার বর্তমান বিরোধী দলের এক সংসদ সদস্য বলেন, মানব পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য, মালয়েশিয়ার নোংরা অভিবাসী শ্রমিক নীতি ও ইমিগ্রেশনে সমস্যার কারণে অবৈধ অভিবাসীর জোয়ার বয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে স্থানীয় দুই নাগরিক ও এক বাংলাদেশি এজেন্টকে সামনে আনা হয়। তারা জানায়, শ্রমিক ভাড়ার অনুমোদনের জন্য তারা বড় অংকের অর্থ উৎকোচ হিসেবে দেন। এর সঙ্গে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও জড়িত।

এ প্রসঙ্গে বিরোধীদলের ওই সাংসদ বলেন, শ্রমিক আমদানির ক্ষেত্রে একটি পক্ষ বিশাল লাভবান হয়। শুধু ব্যবসায়িক মুনাফার জন্যই শ্রমিকদের সঠিক পথে না এনে অবৈধভাবে আনা হয়।

এমআরএম/এসআর/পিআর