আওয়ামী মহলে একটা বাক্য খুব জনপ্রিয়- শেষ ভরসা শেখ হাসিনা। এটা সত্যিও। বাংলাদেশের সব সঙ্কটে শেখ হাসিনাই শেষ ভরসা। এটা ভালো। আবার এটা শেখ হাসিনার ওপর এক ধরনের অন্যায় চাপও। শেখ হাসিনা এখন আর শুধু বাংলাদেশের নেতা নন, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও তার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই তাকে ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। কিন্তু এই ব্যস্ততম শেখ হাসিনাকেও দেশের এবং দলের প্রায় সব খুটিনাটি বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হয়।
Advertisement
ইউএনওকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সিদ্দিকুরের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে, দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব, জোটের কোনো দলের সমস্যা- সব মেটাতে হয় শেখ হাসিনাকে। বঙ্গবন্ধু কন্যার দৃঢ়তার কারণেই সম্ভব হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার। বিশ্বব্যাংককে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে পদ্মা সেতু স্বপ্ন থেকে বাস্তব হচ্ছে শেখ হাসিনার অনমনীয়তার কারণেই। তারপরও ফিসফাস করে আরেকটি কথা উচ্চারিত হচ্ছে, শেখ হাসিনার পরে কে? এই প্রশ্নের কোনো নিশ্চিত উত্তর কারো জানা নেই। তবু আওয়ামী লীগের সবাই মনেপ্রাণে সজীব ওয়াজেদ জয়কেই তাদের পরবর্তী নেতা হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
সবাই ধরে নিয়েছিলেন, গত বছর অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সজীব ওয়াজেদ জয় দলীয় রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশ করবেন। রংপুরের কাউন্সিলর হিসেবে কাউন্সিলে অংশ নিলেও সজীব ওয়াজেদ দলীয় পদে আসেননি এখনও। হয়তো জয় উড়ে এসে জুড়ে বসতে চান না। ধাপে ধাপে দলীয় নেতৃত্বে আসতে চান। যতই ধাপে ধাপে আসুন, সজীব ওয়াজেদ জয়ই আওয়ামী লীগের হাল ধরবেন, এখন পর্যন্ত এর কোনো বিকল্প নেই।
সুশীলদের কেউ কেউ হয়তো একে পরিবারতন্ত্র বলবেন। হয়তো পরিবারতন্ত্রই। কিন্তু আপনারাই বলুন, এখন কি আওয়ামী লীগের পরবর্তী নেতৃত্ব হিসেবে জয়ের কোনো বিকল্প আছে? বাস্তবতা মেনে নিতে হবেই। তাই চাওয়া হলো, পারিবারিক উত্তরসূরিরা যেন শিক্ষিত হন, যোগ্য হন, দক্ষ হন, দেশপ্রেমিক হন, আদর্শে অটল থাকেন। এইসব গুণাবলি বিবেচনায় নিলেও জয়ই এগিয়ে থাকবেন।
Advertisement
সজীব ওয়াজেদ জয় দেশের বাইরে পড়াশোনা করেছেন। আমাদের দেশের অন্য অনেক রাজনীতিবিদের সন্তানের মতো বিলাসিতা দেখাতে দেশের বাইরে পড়েননি। ’৭৫এর পর বঙ্গবন্ধুর বেঁচে থাকা দুই কন্যা শেখ হাসিনা আর শেখ রেহানাকে উদ্বাস্তুর জীবনযাপন করতে হয়েছে। সঙ্গে উদ্বাস্তু হতে হয়েছে তাদের সন্তানদেরও। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার চার সন্তানই সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন। শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ পরপর দুবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য হয়েছেন। সবাই দেশকে নেতৃত্ব দেয়ার মতো যোগ্য। দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকার কারণে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি উদার, তারা দেথেছেন অনেক বেশি। তাই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে তারা আন্তর্জতিক অভিজ্ঞতাকে দেশীয় স্টাইলে প্রয়োগ করতে পারবেন।
সরাসরি দলীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত না হলেও সজীব ওয়াজেদ জয় দীর্ঘদিন ধরেই বুদ্ধি দিয়ে, পরামর্শ দিয়ে তার মা শেখ হাসিনার পাশে থাকছেন। এখন সজীব ওয়াজেদ জয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে উপদেষ্টা হওয়ার আগে থেকেই তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলস পরিশ্রম করছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে একসময় লোকজন হাসাহাসি করত। কিন্তু আ্ওয়ামী লীগের ঘোর শত্রুও স্বীকার করবেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল পৌঁছে গেছে গ্রামে-গঞ্জে। এজন্য সজীব ওয়াজেদ জয় একটা বিশেষ ধন্যবাদ অবশ্যই পাবেন।
সজীব ওয়াজেদ জয় পরিবার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। কিন্তু প্রায়শই তিনি দেশের টানে ছুটে আসেন। বাংলাদেশে এসে তিনি নিয়মিতই মতবিনিময় করেন তরুণদের সাথে। সজীব ওয়াজেদ জয় জানেন, তারুণ্যই বাংলাদেশের মূল সম্পদ। এই তারুণ্যের হাত ধরেই উন্নতির নতুন ধাপে পৌঁছে যাবে বাংলাদেশ। তাই তাদের পেছনেই তিনি বিনিয়োগ করছেন বেশি সময়। নিশ্চয়ই এই বিনিয়োগ অনেক বেশি লাভ দেবে জাতিকে।
বাইরে থাকলেও তার মন পড়ে থাকে বাংলাদেশে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সক্রিয় থেকে তরুণদের সাথে যোগাযোগ রাখেন তিনি। দেশের নানা বিষয়ে ফেসবুকে তার মতামত তুলে ধরেন। ভার্চুয়ালি মতবিনিময় করেন তরুণদের সাথে। দীর্ঘদিন দেশের বাইরে বলে, বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের মতো কৌশলী নন সজীব ওয়াজেদ জয়। যা বলার বলে দেন মুখের ওপর। এই জায়গাটায় আমার মিশ্র অবস্থান। কখনো মনে হয়, সজীব ওয়াজেদ বাংলাদেশের আর দশটা রাজনীতিবিদের মতো না হলেই ভালো, যা মনে আসে তাই বলুন। পছন্দ-অপছন্দ স্পষ্ট করে বলাই ভালো। অন্তরে বিষ রেখে মুখে মধু আনার কৌশল না শিখুন জয়। আবার কখনো মনে হয়, বাংলাদেশের রাজনীতিতে সফল হতে হলে একটু কৌশলী হতেই হয়। যেমন অনেকেই আছেন, মনে প্রাণে প্রথম আলোকে অপছন্দ করেন, কিন্তু প্রথম আলো্র প্রভাবের কথা বিবেচনা করে ভয়ে মুখ খোলেন না। কিন্তু সজীব ওয়াজেদ জয় প্রথম আলোর বিরুদ্ধে তার বিদ্বেষ লুকাননি কখনো।
Advertisement
অপছন্দটা ঠিক আছে। কিন্তু সজীব ওয়াজেদ জয় যখন প্রথম আলো বর্জনের ডাক দেন বা ইমরান এইচ সরকারকে বয়কটের আহ্বান জানান; তখন সেটা চূড়ান্ত হয়ে যায়। কিন্তু তার ডাকের পরও যখন প্রথম আলো বা ইমরান বহাল তবিয়তে থাকেন, তখন তার আহ্বানটা অর্থহীন মনে হয়। তাই পছন্দ-অপছন্দ স্পষ্ট করে বললেও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণা না করলেই ভালো। আর আপনি পছন্দ করুন আর নাই করুন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সবারই আছে।
সজীব ওয়াজেদ জয় জন্মেছেন অবরুদ্ধ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময়। বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীন হয়েছে দেশ। এখন তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলছে অর্থনৈতিক মুক্তির লড়াই। এ লড়াই চালিয়ে যেতে হাল ধরতে হবে জয়দেরকেই। উদার, গণতান্ত্রিক, উন্নত, সমৃদ্ধশালী, অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীন হয়েছে; তা এগিয়ে নেয়ার লড়াই চলছে। লড়াইয়ের পথটা অনেক কঠিন। শেখ হাসিনাকে সে লড়াইয়ে বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। বারবার হুমকি এসেছে, আঘাত এসেছে। তবুও টলেননি তিনি। সজীব ওয়াজেদ জয়কেও অটল থাকতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উন্নত বাংলাদেশ গড়তে। তার লড়াইটাও কঠিন। লড়তে হবে দলের ভেতরে, বাইরে।
বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার লড়াইয়ে এগিয়ে থাকুন সজীব ওয়াজেদ জয়, জয়ের জয় হোক। জন্মদিনে এই শুভকামনা।২৭ জুলাই, ২০১৭
এইচআর/আরআইপি