সিরাজগঞ্জের মহাসড়ক থেকে আঞ্চলিক সড়কগুলো বহুদিন ধরেই ভোগাচ্ছে মানুষকে। ঢাকা-সিরাজগঞ্জ মহাসড়ক, হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়ক ও বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়ক, নলকা-সিরাজগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কসহ আঞ্চলিক সড়কগুলোতে ভোগান্তির শেষ নেই।
Advertisement
ঈদুল ফিতরে এসব সড়কে যাতায়াতকারীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছিলেন। ঢাকা-উত্তরাঞ্চলগামী যাত্রী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, আসছে কোরবানি ঈদেও ভোগাবে এই সড়ক। বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে হাটিকুমরুল মোড় পর্যন্ত প্রায় ১৯ কিলোমিটার মহাসড়কে ধীরগতি, যানজট লেগে আছে।
সূত্রে জানা গেছে, বরাদ্দ না থাকার অজুহাতে কয়েক বছর ধরে সওজের রাস্তা সংস্কার ও মেরামত কাজে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। জোড়াতালির কাজ সারা বছর চললেও টেকসই দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেই। মাঝে মাঝে মন্ত্রী ও সওজের বড় কর্মকর্তারা পরিদর্শনে গেলে তড়িঘড়ি করে মেরামত করা হয়।
এলাকা ঘুরে ও তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ জেলার হাটিকুমরুল মোড়, উল্লাপাড়া, চান্দাইকোনা-ঘুড়কা ও হাটিকুমরুল-বনপাড়া সড়কের মহিষলুটি-খালকুলা মহাসড়কের বিটুমিন ও পাথরের মিশ্রণ উঠে গেছে। হাটিকুমরুল মোড়ে কয়েক মাস আগে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করার মাত্র এক সপ্তাহ পর আবারও দেখা দেয় খানাখন্দ।
Advertisement
এসব মহাসড়ক দিয়ে ঢাকা, উত্তরবঙ্গ, রাজশাহী ও খুলনার দিকে প্রতিদিন প্রায় ১৪-১৫ হাজার যানবাহন চলাচল করে। সয়দাবাদ-বেলকুচি-এনায়েতপুর সড়কের উপরিভাগের পাথর ও বিটুমিনের মিশ্রণ উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় হাজারও গর্তের। একই অবস্থা শিয়ালকোল-নলকা, তাড়াশ-রানীহাটি-বারুহাস, তাড়াশ-নিমগাছী-ভুইয়াগাঁতী, উল্লাপাড়া-লাহিড়ী মোহনপুর আঞ্চলিক সড়কেও।
মহাসড়কগুলোর বেহাল অবস্থায় বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম মহাসড়কে যানজট থাকায় সিরাজগঞ্জ শহরের বাইপাস সড়ক (নলকা খেকে সিরাজগঞ্জ শহর হয়ে সায়দাবাদ) দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪/৫ হাজার ভারী যানবাহন চলাচল করছে।
ফলে জেলা শহরের বাজার স্টেশনে লতিফ মির্জা সড়ক, বাজার স্টেশন, শহরের খেদনসর্দার মোড়, মালশাপাড়া কবরস্থানসহ নানা জায়গায় ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া জেলা সদরের চাঁদ আলীর মোড় থেকে যমুনার সার ঘাট, বালুর পয়েন্ট এলাকা হাটু পানিতে সারা বছরই ডুবে থাকছে। ফলে প্রতিদিনই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঈদের আগে (ঈদুল ফিতর) প্রায় ২ কোটি টাকা খরচ করে সড়কটির হাটিকুমরুল মোড়ে সংস্কার কাজ করা হলেও এক সপ্তাহের মাথায় আবারও চলাচল অনুপযোগী হয়ে যায় সড়কটি। ঈদুল আজহার আগে সংস্কার করা না হলে এসব সড়কের যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হবে।
Advertisement
সিরাজগঞ্জ জেলা যুবলীগের অর্থ সম্পাদক তারিক ইনাম পুলক অভিযোগ করেন, সদর উপজেলার এটিই একমাত্র রাস্তা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও চেয়ারম্যানসহ উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা এই বিপজ্জনক রাস্তা ব্যবহার করলেও সংস্কারের ব্যাপারে কেন উদাসীন তা আমাদের বোধগম্য নয়।
তিনি আরও বলেন, সিরাজগঞ্জের সড়ক ও জনপদ বিভাগের আঞ্চলিক সড়কগুলোর শুধু বেহাল অবস্থাই নয়, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম মহাসড়ক জুড়ে খানাখন্দ। বরাদ্দ নেই অভিযোগ করলেও বছরের পর বছর সওজের রাস্তা সংস্কার, মেরামত ও জোড়াতালির কাজ সারা বছরই চলে। তবে কোনো টেকসই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেই। ফলে কর্মকর্তারা চলে যাওয়ার কয়েক দিন পরই আবার সেই পুরনো চিত্র।
বেলকুচি পৌরসভার মেয়র বেগম আশানুর বিশ্বাস জানান, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড়ে সয়দাবাদ থেকে বেলকুচি পৌরসভা হয়ে এনায়েতপুর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার রাস্তায় শতাধিক স্থানে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আর এ কারণে প্রায়ই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে।
উল্লাপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মারুফ-বিন-হাবিব বলেন, হাটিকুমরুল মোড় থেকে বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কে শ্যামলীপাড়া পর্যন্ত প্রায় ১১ কিলোমিটার রাস্তারই বেহালদশা। বছর জুড়েই সওজ এ মহাসড়কে জোড়াতালির কাজ করলেও বর্তমানে খানাখন্দে ভরা। উল্লাপাড়া-লাহিড়ী মোহনপুর আঞ্চলিক সড়কেও সওজ প্রকৌশলীরা কয়েক বছর থেকে উদাসীন রয়েছেন।
সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ বিশ্বাস বলেন, জেলার বেলকুচি, উল্লাপাড়া ও রায়গঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কসহ বগুড়া-নগরবাড়ীর মহাসড়কে সওজের উদাসীনতার কারণ কী, তা আমাদের বোধগম্য নয়।
তবে সড়ক সংস্কার কাজ শিগগিরই শুরু হবে বলে জানান সড়ক ও জনপথ উলাপাড়া সাব-ডিভিশনের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম।
সিরাজগঞ্জ সদর-বেলকুচি সাব ডিভিশনের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার পারভেজ জানান, সয়দাবাদ-বেলকুচি-এনায়েতপুর, সিরাজগঞ্জ-কড্ডা ও কড্ডা-সমেশপুর আঞ্চলিক সড়ক মেরামত ও সংস্কারে প্রায় ২৭ কোটি টাকার প্রকল্প দেয়া হলেও তা এখনো পাস হয়নি।
সিরাজগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হেনা মোস্তফা কামাল জাগো নিউজকে বলেন, হাটিকুমরুল মোড়ে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি সেকশন বা ভাগে ‘ক্লোভার-লিফ’ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নলকা থেকে সিরাজগঞ্জ শহর হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড়ে মুলিবাড়ি পর্যন্ত চারলেন রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে।
সওজ রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু রওশন জানান, উল্লাপাড়ার বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কের খানাখন্দ সংস্কার ও মেরামত করার জন্য ইতোমধ্যে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। খুব শিগগিরই কাজ শুরু হবে।
ইউসুফ দেওয়ান রাজু/আরএস/এনএফ/পিআর