জাতীয়

জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসীর মুক্তি মিলবে কবে

বৃষ্টিজনিত জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসীর মুক্তি মিলবে কবে? রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের মুখে মুখে দিনভর এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

Advertisement

বুধবার মাত্র কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে রাজধানীবাসী পানিবন্দি হয়ে পড়ে। সকাল ৬ থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মাত্র ছয় ঘণ্টায় ৫৬ মিলিলিটার বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন রাজপথ ও পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

সাধারণ দিনমজুর, গার্মেন্টকর্মী থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী এমনকি কোটি টাকা দামের গাড়ি হাঁকিয়ে বেড়ান এমন ধনীরাও চরম বিপাকে পড়েন। জলাবদ্ধতার কারণে সময়মতো অনেকেই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি। রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে থাকায় ইঞ্জিনচালিত অনেক যানবাহন বিকল হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।

সকালের সূর্য দেখেই অনুমান করা যায় দিনটি কেমন যাবে, বহুল প্রচলিত এ প্রবাদের সত্যতা ধরে আজ দিনটি বৃষ্টিমুখর থাকবে এমনটা ধারণা করেছিল নগরবাসী। কারণ কাকডাকা ভোরে যাদের ঘুম ভেঙেছে তারা জানালার বাইরে তাকিয়ে আকাশের গুমরো মুখ আর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি দেখতে পান। তবে তারা ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি পরবর্তী কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে রাজধানীর প্রধান প্রধান রাজপথ ছাড়াও বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার অলিগলি বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাবে।

Advertisement

আজিমপুরের নতুন পল্টন লাইন এলাকার বাসিন্দা রাইসুল ইসলাম বুধবার বিকেলে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, সকালে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে দেখে ভিকারুননিসা নূন স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে তাসনুভাকে স্কুলে পাঠাতে নিষেধ করেন। কিন্তু তাসনুভার মা সামান্য বৃষ্টিতে কিছু হবে না বলে মেয়েকে স্কুলে পাঠান।

তিনি জানান, বেলা সোয়া ১১টায় স্কুল ছুটির আগে বাসার সামনে হাঁটু সমান পানি দেখে হতবাক হয়ে যান। ড্রেনের ময়লা পানি মিশে পানি নোংরা হয়ে আছে। দ্বিগুণ রিকশা ভাড়া দিয়ে স্কুলে গিয়ে মেয়েকে নিয়ে ফিরে আসেন। রিকশায় আসার সময় গার্মেন্টকর্মী, স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের কাকভেজা হতে দেখে মনটাই তার খারাপ হয়ে যায়।

জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক আজ সকাল থেকে রাজধানীর আজিমপুর, লালবাগ, নবাবগঞ্জ, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ ও নিউমার্কেট এলাকায় সরেজমিনে পরিদর্শনকালে সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তির চিত্র দেখতে পান। সামান্য বৃষ্টিতে এমন জলাবদ্ধতা দেখে তারা ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের দুই মেয়র, ওয়াসা ও রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করেন। তারা প্রশ্ন তোলেন, কোটি কোটি টাকা খরচ করে রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়নের স্লোগান দেয়া হলেও বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হয় না।

শাহাদাত হোসেন নামে এক গণমাধ্যম কর্মী এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, তিনি দুপুর ১২টায় মোটরসাইকেল নিয়ে নিউমার্কেটের সামনে যে জলাবদ্ধতা দেখে গেছেন বেলা ৩টায় এসেও একই পরিমাণ জলাবদ্ধতা দেখতে পান। জামাকাপড় ও জুতামোজা ভিজিয়ে তিনি অফিসে গেছেন বলে জানান।

Advertisement

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর সংলগ্ন বেড়িবাঁধ ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাটে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। বড় বড় ট্রাক, বাস, মিনিবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল আরোহীরা এ ভাঙাচোরা রাস্তাঘাটে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চালাচ্ছেন।

তবে বৃষ্টি-বাদলেও থেমে ছিল না সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের পথচলা। কাকডাকা ভোর থেকেই তারা নিত্যদিনের মতোই কাজে বেরিয়েছেন। নগরবাসী অনেকেই বলছেন, জলাবদ্ধতা থেকে কবে মিলবে মুক্তি। যত বৃষ্টি ও ঝড়ঝঞ্জাই আসুক না কেন তবুও জীবন থেমে থাকে না, চলে নিজস্ব গতিতে।

এমইউ/ওআর/জেআইএম