খেলাধুলা

যে কারণে রায় নিয়ে চিন্তায় ছিলেন পাপন

মুখ ফুটে কেউ কিছু বলেননি। তাই সত্যিকার অনুভূতিটা জানা কঠিন। তাই বলে শঙ্কিত মনে হয়নি বর্তমান বোর্ডের কাউকেই। তবে বোর্ডের গঠনতন্ত্র সংশোধন নিয়ে আদালতের রায় নিয়ে একটা চাপা সংশয় ছিল প্রায় সবার মাঝেই। কারণ বর্তমান বোর্ড গঠিত হয়েছে ২০১২ সালের সংশোধিত গঠনতন্ত্রের ওপর ভিত্তি করে। তার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেই আসলে আদালতে রিট হয়েছিল।

Advertisement

এখন বিসিবির বর্তমান সভাপতি ও পরিচালকেদের জন্য চিন্তার কারণ ছিল একটাই। তারা যে সংশোধিত গঠনতন্ত্রের আলোকে নির্বাচন করে এখনও বোর্ড পরিচালনায় আছেন, সেই সংশোধিত গঠনতন্ত্র ‘অবৈধ’ ঘোষিত হলে বিপাকে পড়ে যেতে হত।

তখন আবার আগের গঠনতন্ত্রে ফিরে যেতে হত। যে গঠনতন্ত্রে পরিষ্কার বলা ছিল বোর্ড পরিচালনায় কোনোভাবেই সাবেক ক্রিকেটারদের সম্পৃক্ততা থাকবে না। এখন যে ক্রিকেটার কোটায় ১০ সাবেক ক্রিকেটার কাউন্সিলর এবং জাতীয় দলের তিন সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান, খালেদ মাহমুদ সুজন ও নাঈমুর রহমান দুর্জয় বোর্ড পরিচালক- তারা কেউই সে পদে থাকতে পারতেন না।

মোদ্দাকথা, আদালত আগের গঠনতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিলে বর্তমান বোর্ড সত্যিই বিপাকে পড়ে যেত। তাদের নির্মাণ শৈলি ও কাউন্সিলরশিপও যেত বদলে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তা বলেননি।

Advertisement

আদালত সংশোধিত গঠনতন্ত্র বৈধ বা অবৈধ- সে সম্পর্কে কিছুই বলেননি। বলেছেন, নিজেদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করবে বিসিবিই। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ নয়। আর সে রায়ে তাই সন্তুষ্ট ও নির্ভার বর্তমান বোর্ড সভাপতি ও পরিচালকবৃন্দ।

আজ বিকেলে যখন প্রশ্ন উঠল, আপনারা বোধ হয় একটু অস্বস্তিতে ছিলেন? যেহেতু হাইকোর্টের রায়ে উল্লেখ ছিল আপনাদের বোর্ডের বৈধতা নির্ভর করবে পূর্ণাঙ্গ রায়ের ওপর। এখন রায়ের পর আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কণ্ঠে স্বস্তি। অনেক নির্ভার বিসিবি সভাপতির কথা, ‘মামলা যেহেতু খারিজ হয়ে গেছে, অবশ্যই এটা আমাদের জন্য ভালো একটি খবর। একটা সমস্যা ছিল। মনের মধ্যে ভয়ও ছিল, আগে যে গঠনতন্ত্রটি তারা বদলেছিল, যদি সেই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন করতে হলে আমাদের ঝামেলায় পড়তে হত। কারণ তারা (রিট আবেদনকারী পক্ষ) চাচ্ছিল আমরা আগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন করি।’

‘আমি অবশ্য আগের গঠনতন্ত্রে নির্বাচন করা নিয়ে যে খুব বেশি চিন্তিত ছিলাম, তা নয়। আমার চিন্তাটা ছিল মূলত ক্রিকেটার নিয়ে। আগের গঠনতন্ত্রে বোর্ডে একজন সাবেক ক্রিকেটারের পরিচালক হিসেবে থাকার সুযোগ ছিল না। ক্রিকেটার বোর্ড পরিচালনায় থাকতে পারবে না। অথচ অন্য ফেডারেশনের কেউ ক্রিকেট বোর্ড পরিচালনায় থাকতে পারবে- এমনটা ছিল সেই গঠনতন্ত্রে। এখন সেই গঠনতন্ত্রে নির্বাচন হওয়ার অর্থ কোনো সাবেক ক্রিকেটার বোর্ডে না থাকা। সেটা আইসিসিও মেনে নিত না।’-যোগ করেন পাপন। একবার ভাবেন, আইসিসি যদি না মানত তাহলে আমাদের কী হত?’

Advertisement

বিসিবি সভাপতি আরও একটি বিশেষ কারণে সন্তুষ্ট। তার সন্তুষ্টির আরও একটি বড় জায়গা হলো, ‘আমরা যে পরিবর্তিত বা সংশোধিত গঠনতন্ত্রে বোর্ড পরিচালনায় এসেছি- তা নিয়ে আদালতের কোনো আপত্তি নেই। তার মানে, আমরা সম্পূর্ণ বৈধ। বরং বাড়তি পাওনা হিসেবে যা পেয়েছি, তা হলো এখন থেকে আমাদের গঠনতন্ত্র আমরা মানে বিসিবিই ঠিক করবে। কারো ওপর আর নির্ভর করতে হবে না। কারো হস্তক্ষেপও লাগবে না। আমরা এজিএম বা ইজিএম ডেকে আমরাই করতে পারব। আমরা যে গঠনতন্ত্রে এসেছি, সেই গঠনতন্ত্রের অনুসরণই করতে হবে। অন্য কোনো বিকল্প নেই।’

বিসিবি সভাপতির শেষ কথা, ‘আমরা রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পাওয়ার পরপরই পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করব। এজন্যই ৩০ জুলাই বোর্ড সভা ডাকা হয়েছে। সেখানেই ইজিএমের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। তবে সব কিছুই নির্ভর করবে পূর্ণাঙ্গ রায় জানার পর। ওই রায়ে যা আসবে, আমরা সে অনুযায়ীই পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’

এআরবি/এনইউ/জেআইএম