চলচ্চিত্র জগতে বিউটি কুইনখ্যাত চিত্রনায়িকা শাবানার স্বামী ওয়াহিদ সাদিকের নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশা নিয়ে কেশবপুরে নানা গুঞ্জন চলছে। শাবানা সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে স্বামীর মনোনয়ন চাওয়ার পর কেশবপুরে এসে প্রচারণায় এ গুঞ্জনের পালে নতুন হাওয়া লেগেছে। ‘বিএনপি ঘরানার’ ওয়াহিদ সাদিক কীভাবে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে নৌকার মনোনয়ন চান; এ নিয়েও রয়েছে নানামুখী আলোচনা।
Advertisement
স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রকাশ্য রাজনীতিতে সক্রিয় না হলেও ওয়াহিদ সাদিক বিএনপি বলয়ে থাকায় ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে কেশবপুরে এমন গুঞ্জনও ছিল। তবে কোনো তথ্য-প্রমাণ না থাকায় এ গুঞ্জন সত্য না গুজব ছিল তা বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ঘরানার কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।
যশোর-৬ (কেশবপুর) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক পৌর মেয়র আব্দুস সামাদ বিশ্বাস জানান, ২০০৮ সালেও তিনি সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু পৌর মেয়র থাকায় শেষ মুহূর্তে কিছু সমস্যার কারণে নির্বাচন করতে পারেননি। ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন উপজেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ। তিনি এবং আজাদ ছাড়াও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ব্যারিস্টার ওমর সা’দাত ও অ্যাডভোকেট বদরুজ্জামান মিন্টু।
কিন্তু চিত্রনায়িকা শাবানার স্বামী ওয়াহিদ সাদিক মনোনয়ন চেয়েছিলেন এমন কোনো তথ্য নেই। তবে তিনি যেহেতু বিএনপির বলয়ে ছিলেন, তাই এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে; কিন্তু এমন কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই। আর দু’বছর ধরেই তিনি বছরে দু’একবার বাড়িতে আসা যাওয়া করেন। এর আগে এলাকায় তেমন যাতায়াত ছিল না।
Advertisement
অন্যদিকে যশোর-৬ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান এইচএম আমির হোসেন জানান, ওয়াহিদ সাদিক কখনও আওয়ামী লীগ করেছেন বলে শুনিনি। তাদের গোষ্ঠীর মধ্যে সাবেক এমপি আব্দুল হালিম আওয়ামী লীগ করেন। আর সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এএসএইচকে সাদেককে এলাকার লোকজন সাবেক সচিব হিসেবেই চিনতেন। তিনি ’৯৬ এ নৌকার মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত ও মন্ত্রী হন। এর বাইরে ওই পরিবারে আর কেউ আওয়ামী লীগ করেন না।
বরং ওয়াহিদ সাদিকসহ পরিবারের সদস্যরা আওয়ামী লীগের বিপরীত ধারার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাই ইতোপূর্বে বিএনপির মনোনয়ন তারা চাইতেও পারেন।
এ প্রসঙ্গে যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু জাগো নিউজকে জানান, চিত্রনায়িকা শাবানার স্বামী কখনও বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছিলেন বা রাজনীতিতে তার সম্পৃক্ততারও কোনো তথ্য তার জানা নেই। তবে শোনা যায়, সাবেক মন্ত্রী এএসএইচকে সাদেক একসময় বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতেন। তবে পরবর্তীতে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হন। যদিও এর কোনো তথ্য-উপাত্ত বা প্রমাণ নেই।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাবানাকে রাজনীতিতে আসতে বলেছিলেন, মনোনয়নের কথা বলেননি। আর মনোনয়ন তো অনেকেই প্রত্যাশা করেন। তবে মনোনয়ন কে পাবেন তা দলীয় সভানেত্রীই ঠিক করবেন।
Advertisement
ওয়াহিদ সাদিক এই জেলা বা উপজেলায় কখনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তবে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন কিনা তা জানা নেই।
প্রসঙ্গত, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৬ (কেশবপুর) সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন চিত্রনায়িকা শাবানার স্বামী চলচ্চিত্র প্রযোজক ওয়াহিদ সাদিক। গত ১৮ জুলাই কেশবপুর উপজেলার বড়েঙ্গা গ্রামের নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, সম্প্রতি অসুস্থ চিত্রপরিচালক আজিজুর রহমানের চিকিৎসার জন্য তিনি, তার স্ত্রী শাবানা, চিত্রনায়ক আলমগীর ও চিত্রনায়িকা মৌসুমী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যান। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাবানাকে রাজনীতিতে আসার প্রস্তাব দেন।
শাবানা বলেন, তাকে তার সন্তানদের সময় দিতে হয়; যে কারণে তিনি রাজনীতিতে আসতে পারছেন না। তবে তার স্বামী ওয়াহিদ সাদিক রাজনীতিতে আসতে চান।
এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলাচ্চিত্র প্রযোজক আলহাজ ওয়াহিদ সাদিককে রাজনীতিতে আসার প্রস্তাব দেন। ওয়াহিদ সাদিক তখন প্রধানমন্ত্রীকে জানান, আপনি হুকুম করলে আমি অবশ্যই রাজনীতি করব এবং তিনি তার জন্মভূমি যশোর-৬ (কেশবপুর) সংসদীয় আসন থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এরপর ১৮ জুলাই যশোরের কেশবপুরের বড়েঙ্গা গ্রামে শাবানা ও তার স্বামী ওয়াহিদ সাদিকের অর্থায়নে নির্মিত মসজিদ ও কোরআন শিক্ষা কেন্দ্র উদ্বোধন করেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান।
এসময় বক্তব্য রাখেন চিত্রনায়িকা শাবানা, ওয়াহিদ সাদিক, চিত্রজগতের খলনায়ক ও চলচ্চিত্র সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইউছুপ খান পাঠান ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক ও মন্ত্রীর এপিএস শফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাবেক এমপি আব্দুল হালিম।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্যে শাবানা বলেন, কেশবপুর আমার শ্বশুরবাড়ি। আপনারা আমার আত্মীয়। এ অনুষ্ঠানে আপনাদের উপস্থিতিতে আমরা আনন্দিত। আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকবেন এ প্রত্যাশা করি। এরপর থেকেই ওয়াহিদ সাদিকের মনোনয়ন প্রত্যাশার বিষয়টি এলাকায় প্রচার হয়। শুরু হয় নানামুখী আলোচনা ও গুঞ্জন।
মিলন রহমান/এমএএস/জেআইএম