আন্তর্জাতিক

স্বামীর কাছেও ঠাঁই পাচ্ছেন না ধর্ষিত রোহিঙ্গা নারীরা

রোহিঙ্গা মুসলিম আয়মার বাগন যখন তার স্বামীকে জানান যে তার গর্ভাবস্থার একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে মিয়ানমারের সৈন্যরা তাকে গণর্ধষণ করে, তখন তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যান। এরপর থেকে চেয়ে-চিন্তে জীবনধারণ করছেন আয়মার।

Advertisement

তিনি মিয়ানমারের বহু রোহিঙ্গা নারীর মধ্যে একজন, যারা রাখাইন প্রদেশে সেনাবাহিনীর মাসের পর মাস চলা ‘নির্মূল অভিযানের’ সময় ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেন। জাতিসংঘের আশঙ্কা, ওই অভিযান এতটাই নিষ্ঠুর ছিল যে সেটা মানবতাবিরোধী অপরাধের সমান।

বার্তা সংস্থা এএফপি সম্প্রতি মিয়ানমারের সরকারের পরিচালিত একটি সফরে রাখাইন প্রদেশে গিয়ে আয়মার বাগনের সঙ্গে কথা বলে। তিনি কায়ার গং টং নামে একটি গ্রামের বাসিন্দা। ওই গ্রামে এএফপির সংবাদদাতা সরকারি লোকজনের অজ্ঞাতসারে একদল রোহিঙ্গা নারীর সঙ্গে কথা বলেন, যারা সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতনের কাহিনী বর্ণনা করেন।

‘সন্তান প্রসবের মাত্র কয়েকদিন আগে আমাকে ধর্ষণ করা হয়। আমার তখন নয় মাস চলছিল। তারা জানতো আমি গর্ভবতী, কিন্তু তাতেও দমেনি তারা’- ছোট্ট একটি কন্যা শিশুকে কোলে নিয়ে বলছিলেন আয়মার বাগন।

Advertisement

তিনি বলছিলেন, ‘এটা ঘটার জন্য আমাকে অভিযুক্ত করে আমার স্বামী। একারণে সে অন্য এক নারীকে বিয়ে করে আরেক গ্রামে গিয়ে থাকছে এখন। আয়মার বাগনের বয়স মাত্র কুড়ি।

দুই সন্তানের মাতা হাসিন্নার বায়গনের বয়েসও কুড়ি। তিনি বলছেন, তাকেও পরিত্যাগ করার হুমকি দিয়েছে তার স্বামী। কারণ গত ডিসেম্বরে তিনজন সৈন্য তাকে ধর্ষণ করেছিল। এসব ঘটনা যখন ঘটছিল তখন রাখাইনের গ্রামগুলো ছিল পুরুষশুন্য, রয়ে গিয়েছিল শুধু নারী, শিশু আর বয়স্ক মানুষেরা।

সৈন্যদের ধর্ষণ করবার এসব অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছে মিয়ানমারের সরকার। এই অভিযোগগুলো নিরপেক্ষভাবে যাচাই করাও সম্ভব হয়নি।

কিন্তু বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ৭৪ হাজার রোহিঙ্গাদের অনেকেই জাতিসংঘ তদন্তকারী এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর কাছে যেসব অভিযোগ জানিয়েছে, সেগুলোর সাথে এগুলো মিলে যাচ্ছে। কায়ার গং টংয়ের রোহিঙ্গারা বলছে, তাদের গ্রামে পনেরোটির মত ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, এর মধ্যে তিনটি ধর্ষণের ব্যাপারে তারা মামলা করেছেন, কিন্তু কোন ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি।

Advertisement

বাকিরা ভবিষ্যৎ হয়রানির আশঙ্কায় অভিযোগ জানাতে চায়নি। ‘কিছু মহিলা সম্মানহানির ভয়ে অভিযোগ জানায়নি’- বলছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসী।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো বহুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে যে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সীমান্তের জাতিগত সংঘাতগুলোতে ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। বিবিসি বাংলা।

এসআইএস/আরআইপি