অর্থনীতি

শেয়ার কেলেঙ্কারি : দু’জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

১৯৯৬ সালে প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ’র শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন পরিচালক আনু জায়গীরদার এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।

Advertisement

শেয়ারবাজার সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক আকবর আলী শেখ মঙ্গলবার এ পরোয়ানা জারি করেন।

এর আগে আনু জায়গীরদার ও মশিউর রহমানের বিচারকাজ উচ্চ আদালতের নির্দেশে এক বছর স্থগিত ছিল। প্রথমে ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল এ বিচারকাজে ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেন আদালত। এ স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষে ২৯ নভেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো আরও ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেন আদালত, যা ২ মে শেষ হয়। এরপর মশিউর রহমান ও আনু জায়গীরদারের বিচার কাজ আবার শুরু হয়।

মামলা সূত্রে জানা যায়, প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনায় আসামি করা হয় প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজসহ প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন চেয়ারম্যান এম এ রউফ চৌধুরী, পরিচালক সাঈদ এইচ চৌধুরী, আনু জায়গীরদার এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমানকে।

Advertisement

আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, তারা প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের নামে ১৯৯৬ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার লেনদেন করেন। এ সময়ে তারা মিতা টেক্সটাইল, প্রাইম টেক্সটাইল, বাটা সুজ ও বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ার লেনদেন করেন।

প্রতিষ্ঠানটি ওই সময়ে মোট ১২৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা লেনদেন করে। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি শুধু ফরেন ডেলিভারি ভার্সেস পেমেন্টের (ডিভিপি) মাধ্যমে ৮৫ লাখ টাকা লেনদেন করে। এ সময় এক নম্বর আসামি প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ ওই সময়ে ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৩টি শেয়ার বিক্রি করে, যার মূল্য ছিল ৬৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা।

স্টক এক্সচেঞ্জের রেকর্ড মোতাবেক আসামিরা এসিআই লিমিটেডের ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮১৯টি শেয়ার বিক্রি করেন। অথচ ব্যাংক রেকর্ড অনুযায়ী শেয়ার বিক্রির পরিমাণ ২ লাখ ৩৪ হাজার ৫৩৮টি, যার মধ্যে ফরেন ডিভিপির মাধ্যমে লেনদেন অনিষ্পত্তি হওয়া শেয়ারের পরিমাণ ছিল ৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

একইভাবে আসামিরা ডিভিপির মাধ্যম ছাড়াও স্থানীয়ভাবে শেয়ারের অন্যতম ক্রেতা-বিক্রেতা ছিলেন। আসামিরা ওই সময়ের মধ্যে বেক্সিমকো ফার্মার ১৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৯৫টি শেয়ার বিক্রি করেন। এর মধ্যে ডিভিপির মাধ্যমে ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৭০০টি শেয়ার বিক্রি করেন। এখানেও অনিষ্পত্তি হওয়া শেয়ার ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৫০০টি। এ সব ফরেন ডিভিপির মাধ্যমে লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য প্রতিষ্ঠানটি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও ইন্দোসুয়েজ ব্যাংক ব্যবহার করত।

Advertisement

আসামিদের এ ধরনের কার্যকলাপ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি, অপকার ও অনিষ্ট করেছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ-১৯৬৯ এর ২১ ধারা বলে গঠিত তদন্ত কমিটি ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।

প্রতিবেদনে আসামিরা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ-১৯৬৯ এর ১৭ ধারার ই (২) বিধান লঙ্ঘন করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। আর সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশের ২৪ ধারার অধীনে আসামিদের শাস্তি দেয়ার সুপারিশ করা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাসুদ রানা খান বলেন, ‘এ মামলায় বিচারকার্য পরিচালনার জন্য ২৪ জুলাই পূর্ব নির্ধারিত ছিল। কিন্তু অভিযুক্ত আনু জায়গীরদার এবং মশিউর রহমান এ দিন ট্রাইবুন্যালে উপস্থিত হননি। এতে রাষ্ট্রপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার জন্য আবেদন করে। এর আলোকে ট্রাইবুন্যাল গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন।’ মামলার অপর আসামি র্যাংগস গ্রুপের কর্ণধার এম এ রউফ চৌধুরী এবং এইচআরসি গ্রুপের চেয়ারম্যান সাঈদ এইচ চৌধুরী গত ২৩ এপ্রিল বেকসুর খালাস পান।

এমএএস/জেএইচ/এমএস