কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে পাচারকৃত অর্থ সম্পর্কে তথ্য জানতে সুইচ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটে দেয়া চিঠিতে সন্দেহজনক কোনো লেনদেনের তথ্য থাকলেও তা জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।
Advertisement
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ‘বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সি ইউনিট’ (বিএফআইইউ) ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, অর্থ পাচারের নিরাপদ জায়গা হিসেবে সুইস ব্যাংকের পরিচিতি বিশ্বজুড়ে। আর আইনি প্রক্রিয়া কঠিন থাকায় সুইস ব্যাংক থেকে পাচারকৃত অর্থ দেশে আনা কঠিন। এর আগে সুইস ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার চিঠি দিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানা গেছে, গত ১৩ জুলাই (বৃহস্পতিবার) পাচারকৃত অর্থ সম্পর্কে তথ্য চেয়ে সুইস এফআইইউয়ের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বিএফআইইউ। বিভিন্ন দেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের আন্তর্জাতিক ফোরাম এগমন্ট গ্রুপের ওয়েব মেইলের মাধ্যমে ওই চিঠি পাঠানো হয়। এগমন্ট গ্রুপ হচ্ছে- বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফাইন্যান্সিয়্যাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (এফআইইউ) সমন্বয়ে গঠিত একটি আন্তর্জাতিক ফোরাম। যারা মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে কাজ করে। বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ডসহ বিশ্বের ১৫৪টি দেশের এফআইইউ এগমন্ট গ্রুপের সদস্য।
Advertisement
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের ৫ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা (৬৬ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ) আমানত রয়েছে। তবে এসব পাচারকৃত অর্থ নয় বলে দাবি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রী।
সুইস ব্যাংকের তথ্য সম্পর্কে জাতীয় সংসদের গত ১১ এপ্রিল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে ব্যাংকের মাধ্যমে যে লেনদেন হয়, তা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বাস্তবে এটি মোটেই অর্থপাচার নয়। সাংবাদিকরা ‘অত্যন্ত অন্যায়ভাবে’ বিষয়টিকে পাচার বলছেন। তবে কিছু অর্থ পাচার হয়। সেটি যৎসামান্য। এটা নজরে নেয়ার মতোই নয়।
এদিকে, সুইস ব্যাংকে জমার পরিমাণ নিয়ে একটি বিশ্লেষণ করেছে বিএফআইইউ। বিএফআইইউ কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৬ সালের সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে দায়ের পরিমাণ ৯৩ শতাংশ। অর্থাৎ সুইস ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশি বিভিন্ন ব্যাংকের জমার পরিমাণই ৫ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। গ্রাহকের নামে জমা আছে ৭ শতাংশ। এর পরিমাণ ৪০০ কোটি টাকা। ওই টাকা বাংলাদেশ থেকে সরাসরি সুইজারল্যান্ডে পাঠানো হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী প্রবাসীদের অর্থ জমার মধ্যে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ব্যাংকিং আইন-কানুন অনেক কঠিন থাকায় জমাকারীদের বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করে না সুইস ব্যাংকগুলো। তবে অন্য দেশের নাগরিকদের নামে সুইস ব্যাংকগুলোয় কী পরিমাণ অর্থ জমা আছে তা বার্ষিক ভিত্তিতে প্রকাশ করা হয়।
Advertisement
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে সুইস ব্যাংক বাংলাদেশিদের জমানো টাকার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে এর পরিমাণ ছিল প্রায় ৪ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। গত বছরের চেয়ে জমানো টাকার পরিমাণ এক বছরে বেড়েছে এক হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। সম্প্রতি সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সুইজারল্যান্ডের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে তথ্য নিয়ে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৫ সালে এ আমানতের পরিমাণ ছিল চার হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে ৪ হাজার ২৮৩ কোটি, ২০১৩ সালে তিন হাজার ১৪৯ কোটি এবং ২০১২ সালে ১ হাজার ৯৯১ কোটি, ২০১১ সালে বাংলাদেশি নাগরিকদের সুইস ব্যাংকে জমানো টাকার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২২২ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি বছরই জমানো টাকার পরিমাণ বেড়েছে।
এসআই/আরএস/পিআর