বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রণীত শিক্ষকদের নিয়োগ ও পদোন্নতির অভিন্ন নীতিমালা-২০১৭ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যারয়ের শিক্ষক সমিতি। তারা এই নীতিমালা সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন।
Advertisement
ইতোমধ্যে জগন্নাথ, রাজশাহী, শেরেবাংলা কৃষি, সিলেট কৃষি, কুমিল্লা ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি আপত্তি জানিয়েছে।
আজ সোমবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) শিক্ষক সমিতি আপত্তি জানিয়েছে। এর আগে ১৫ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি), ১৭ জুলাই সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি), ২০ জুলাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি), ২২ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শিক্ষক সমিতি আপত্তি জানিয়েছিল।
সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ নীতিমালা সম্পর্কে আপত্তি জানানো হয়েছে।
Advertisement
বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেছেন, সরাসরি নিয়োগ ও আপগ্রেডেশনের জন্য নির্ধারিত সময়ের বিষয়ে ইউজিসি প্রণীত নীতিমালার সঙ্গে ফেডারেশনের নীতির মধ্যে বৈষম্য রয়েছে। ফলে তা গ্রহণযোগ্য নয়। সব পদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রকাশনাসমূহের শর্ত উল্লেখ ছিল ফেডারেশনের প্রস্তাবনায়। কিন্তু ইউজিসির নীতিমালায় তা ব্যত্যয় ঘটায় তা গ্রহণযোগ্য নয়। অধ্যাপকদের ক্ষেত্রে তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় এবং দ্বিতীয় থেকে প্রথম গ্রেডে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ফিডার পদের চাকরিকাল ও মোট চাকরিকাল উভয়ই গণনা করতে হবে। যে ব্যক্তি বিদ্যমান নীতিমালার অধীনে যোগদান করেছেন সেই ব্যক্তি একবার মাত্র ওই নীতিমালা অনুসরণপূর্বক পদোন্নতি পাবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রিয়ব্রত পাল জাগো নিউজকে বলেন, আমরা ইউজিসির যে নীতিমালা দিয়েছে তা সংশোধনের অনুরোধ করেছি। এটা নিয়ে প্রায় সব বিশ্ববিদালয়ের শিক্ষক সমিতির আপত্তি আছে। আমরা ফেডারেশনের যে সুপারিশ দিয়েছি তা বাস্তবায়ন হয়নি। এজন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি এটাতে আপত্তি জানিয়েছে।
এদিকে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিও এ নীতিমালা প্রত্যাখ্যান করে সোমবার মানববন্ধন ও শিক্ষক সমাবেশ করেছে।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে তারা মানববন্ধন করেন। তারা প্রণীত নীতিমালার সংশোধন দাবি করেন। এসময় প্রায় শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা উপস্থিত ছিলেন। শেকৃবি শিক্ষক সমিতির সধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড মো. মিজানুর রহমান মানববন্ধন ও সমাবেশের সঞ্চালনা করেন।
Advertisement
শেকৃবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড মো. নজরুল ইসলাম বক্তব্যে বলেন, দেশে যখন উন্নয়নের ধারা বইছে তখন শিক্ষকদের বেলায় এমন পশ্চাদমুখী নীতিমালা অগ্রহণযোগ্য। বিশেষ করে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে স্নাতকে মেধাভিত্তিক শীর্ষ সাত শতাংশ ছাত্রছাত্রী প্রভাষক পদে আবেদনের যে নীতি করা হয়েছে তা একটি ভুল সিদ্ধান্ত।
শেকৃবি নীল দলের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ফরহাদ হোসাইন বলেন, এমন নীতিমালা তৈরির পেছনে আমলাদের হাত রয়েছে। তারাও তো কোনো না কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তবে তারা কেন শিক্ষকদের পেছনে লেগেছেন?
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নীতিমালা প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইউজিসির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজ স্বার্থেই এসব নিয়মকানুন তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের কাছে এমন তথ্যও আছে স্নাতকে মেধা তালিকায় ৫৪ ও ৪৭তম হয়েও শিক্ষক হয়েছেন, যা কিছুতেই মানা যায় না। বিশেষ করে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অন্তত শিক্ষক নিয়োগে আমাদের নীতিমালা পালন করা উচিত।
অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউসুফ আলী মোল্লা (সদস্য ইউজিসি) এ ব্যাপারে জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষক নিয়োগে মেধাক্রমে সাত শতাংশ নিয়োগের নীতিমালাটি করার কারণে অন্তত পেছনের সারি থেকে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ হবে। আর এই নীতিমালাটি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একজন সাবেক উপাচার্যের পরামর্শক্রমে করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এই নীতিমালা পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। তবে সহকারী অধ্যাপক নিয়োগ/পদোন্নতির ক্ষেত্রে স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশনার সংখ্যা (বর্তমানে তিনটি) বিষয়ক নীতিমালাসহ অন্য কয়েকটি নীতিমালায় পরিবর্তন আসতে পারে।
ইউজিসির অভিন্ন নীতিমালায় যা আছে
একজন শিক্ষক শিক্ষাছুটি পাবেন পাঁচ বছর। প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপকের পদোন্নতির ক্ষেত্রে চাকরির সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ শিক্ষকতা পেশায় এলে আগের চাকরির ৫০ শতাংশ যুক্ত করার কথা উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া সাময়িকীতে লেখা প্রকাশ নিয়ে কঠোর নীতিমালা রয়েছে।
এসএম/এমআরকে/জেডএ/আরআইপি