বৈরী আবহাওয়া ও বিভিন্ন অঞ্চলে চাষের উপযোগী বহু উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন কৃষি বিজ্ঞানী ড. মো. নাজমুল হক শাহিন। সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যয়ে সুদীর্ঘ ১৯ বছর (১৯৯৭-২০১৫) ধরে গবেষণা করে তিনি এ সফলতা পেয়েছেন। চাষিরা এসব জাত চাষ করে লাভবান হবেন বলে তিনি আশাবাদী। ১৯৯৭ সালে ড. শাহিন হাইব্রিড ধানের জাত নিয়ে গবেষণা করার সময় লক্ষ্য করেন দেশি ধানের জাতকেও কৃত্রিম সংকরায়ণের মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীল বানানো সম্ভব। আর এ ধারণা থেকেই শুরু হয় তার গবেষণা। নেত্রকোনা জেলার দূর্গাপুর উপজেলা হতে সংগৃহীত ধানটি বিভিন্ন আমন ধানের জাতের সাথে সাদৃশ্য খুঁজে না পাওয়ায় মৌসুম ও সংগহকারীর নাম অনুযায়ী নামকরণ করেন দোলা আমন হিসেবে। গবেষণা মাঠে ধানের জাতটির বিঘা প্রতি ফলন ১১ মণ, ঝড়ের ফলে গাছ হেলে পড়েও ধানের ছড়াতে ধানের সংখ্যা ১৪০-১৫৫টি। দোলা আমন ধানে কৃত্রিম সংকরায়স ও প্রোজেনী নির্বাচনের মাধ্যমে মো. শাহিন উদ্ভাবন করেছেন ৮৫০টি নতুন উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত যা দেশি ধানের জাতের উন্নত রূপ। তবে সবগুলো জাত সিড সার্টিফিকেশন এজেন্সি জাত হিসেবে ছাড় প্রদান না করা গেলেও তিনি দেশের ৩০ টি এগ্রো-ইকোলজিকাল গ্রুপ অনুযায়ী আলাদা আলাদা ৩০ টি উচ্চ ফলনশীল জাত ছাড়করণের ব্যাপারে আশাবাদী। উদ্ভাবিত ধানের জাতগুলোর গড় ফলন বিঘা প্রতি ৩৩-৪০ মণ যা দোলা আমন ধানের জাতের ফলন অপেক্ষা তিনগুণের বেশি। ধানের জাতগুলোর মূল বৈশিষ্ট্য হল ধান গাছের কাণ্ড ও বায়োমাস বেশি হওয়াতে ৮০-৯৬ কি.মি. বেগে ঝড় হলেও জমিতে হেলে পরে ন। যদিও ধানের জাতগুলোর উচ্চতা ৯৫ সে.মি. হতে ১৩৫ সে.মি.। প্রতিটি ধানের শীষের দৈর্ঘ্য ২৫ সে.মি. থেকে ৪০ সে.মি.। প্রতি শীর্ষে পুষ্ট দানার সংখ্যা ২৫০টি হতে ৩৫০টি। এ সম্পর্কে ড. শাহিন জানান, কৃষি স্বাস্থ্য সেবা ক্লিনিক বাংলাদেশ (দূর্গাপুর, নেত্রকোনা এবং খুলনা ফার্ম) ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব এবং কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগে গবেষণা করে দেখা গেছে যে, উদ্ভাবিত ধানের জাতগুলো নাইট্রোজেন সার ব্যবহারে সাশ্রয়ী। কোন প্রকার নাইট্রোজেন সার ব্যবহার না করে শুধুমাত্র গোবর, এমওপি ও টিএসপি সার প্রয়োগ করে ব্রি-ধান ২৯ অপেক্ষা হেক্টর প্রতি ১ টন বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব। ধানের জাতগুলো নিম্ন তাপমাত্রা, লবণাক্ততা ও জলবদ্ধতা সহনশীল। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরীক্ষাগারে খাদ্যগুণ বিচারে উদ্ভাবিত ধানের নতুন জাতগুলোতে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের পরিমাণ পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, ধানের চালে সর্বোচ্চ আয়রণের পরিমাণ ৫৮.০৮ পিপিএম যা পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত বিদ্যমান আয়রণসমৃদ্ধ ধানের জাত অপেক্ষা গুণ বেশি। অপরদিকে ধানের জাতগুলোর চালে সর্বোচ্চ জিংকের পরিমাণ ৪৬.৩৮ পিপিএম যা ব্রি-ধান ৬৪ অপেক্ষা দ্বিগুণেরও বেশি। গবেষণা মাঠ পরিদর্শন করে বগুড়া জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এর উপ-পরিচালক চন্ডী দাস কুন্ডু জানান, ‘গবেষণার ফলাফল ভালো। এগুলো আরো কৃষকের মাঠে বড় আকারে প্রদর্শনীর জন্য পরামর্শ দেওয়া হল।’ এবিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড.উজ্জ্বল কুমার নাথ জানান, ‘আমার সাথে একটি লাইন (জাত) নিয়ে কাজ হয়েছে। সবগুলোর কথা বলতে পারব না। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, একটি লাইনে ব্রি-ধান ৬৪ অপেক্ষা বেশি জিংক পাওয়া গেছে। একই সাথে আয়রণের উপস্থিতিও ছিল। ড. শাহিন বাকৃবি থেকে কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি ও জাপানের কচি ইউনির্ভাসিটি হতে পোস্ট ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বর্তমানে বাকৃবিতে কয়েকটি বিভাগের মার্স্টাসে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের সুপারভাইজার ও কো-সুপারভাইজার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এসএস/এমএস
Advertisement