জাতীয়

চোখের জলে হজযাত্রীদের বিদায় স্বজনদের

নানু তুমি কবে আসবে? আমার জন্য কি নিয়ে আসবে? মনে করে আমার জন্য অবশ্যই খেজুর আর জমজমের পানি নিয়ে এসো। আর দোয়া কর আমার জন্য, আম্মু আর আব্বুর জন্য।

Advertisement

রাজধানীর আশকোনায় হজক্যাম্পে হজযাত্রী নানা ইয়াকুব আলীকে বিদায় জানাতে এসে এসব কথা বলে সাড়ে তিন বছরের নাতি রিফাত। পাবনার ঈশ্বরদীর অন্য অনেক হজযাত্রীর সঙ্গে হজক্যাম্পে আসেন ইয়াকুব আলী। বিদায় জানাতে আসেন মেয়ে রাবেয়া খাতুন, জামাতা আনারুল হক ও নাতি রিফাত। জোহরের নামাজ শেষে নাতির কাছে আসতেই তার এসব কথা শুনে চোখ ছলছল করে ওঠে ইয়াকুব আলীর। নাতিকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। বলেন, ‘নানুভাই তোমার জন্য অবশ্যই খেজুর আর জমজমের পানি নিয়ে ফিরব। দোয়াও করব।’ এভাবে শুধু রিফাত কিংবা রাবেয়া নন, অসংখ্য হজযাত্রীকে বিদায় দিতে স্বজনরা ভিড় করেন হজক্যাম্পে।

মন্ত্রণালয় ও বিমান সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকাল ৭টা ৫৫ মিনিটেই সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় ৪১৮ জন যাত্রী নিয়ে উড্ডয়ন করেছে প্রথম হজ ফ্লাইট। হজযাত্রীবাহী (ফ্লাইট বিজি-১০১১) বিমানটি জেদ্দার উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যায়। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ও ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বিমানে উঠে হজযাত্রীদের বিদায় ও শুভকামনা জানান। ইতোমধ্যে প্রথম ফ্লাইটের যাত্রীরা যথাসময়ে জেদ্দা পোঁছে গেছেন।

সোমবার হজ ফ্লাইট বিজি-৩০১১ দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে ৪১৯ জন, বিজি-৭০১১ সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিটে ৪১৯ জন এবং শিডিউল ফ্লাইট বিজি-০০৩৫ রাত ৮টা ৪০ মিনিটে। এর বাইরে বেরসকারিভাবে সৌদি এয়ারলাইন্স বিমানেও যাচ্ছেন হজযাত্রীরা। আজ সোমবার রাতে, আগামীকাল সকাল, ২৬ জুলাই এবং ২৭ জুলাইয়ের হজযাত্রীরা ভিড় করছেন হজক্যাম্পে। বিশেষ করে আজ সন্ধ্যায় ও রাতে যেসব হজযাত্রীর ফ্লাইট উড্ডয়ন করবে সেসব যাত্রীর স্বজনরা আসছেন শেষবারের মতো সাক্ষাৎ ও বিদায় জানাতে। হজে যেতে আনুষঙ্গিক কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত হজযাত্রীরা।

Advertisement

হজক্যাম্পে কথা হয় বাগেরহাটের মর্জিনা বেগমের সঙ্গে। স্বামীর সঙ্গে হজে যাচ্ছেন তিনি। জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বিদায় বেলায় দুই মেয়ে, জামাতা ও নাতি আসছে দেখা করতে। খুব খারাপ লাগছে। আল্লাহ’র ঘর তাওয়াফে যাচ্ছি। কিন্তু পরিবারের বাইরে অনেকটা সময় থাকতে হবে। ওরাও কান্নাকাটি করছে। আবেদ আলী সরকার নামে গাইবান্ধা সদর থেকে আসা হজযাত্রী বলেন, স্ত্রী, ভাই-ভাবিসহ একই পরিবারের পাঁচ সদস্য যাচ্ছেন হজে। আত্মীয়-স্বজনরা একে একে আসছেন সাক্ষাৎ করতে। সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছি। আল্লাহ যেন হজব্রত কবুল করেন।

মায়ের সঙ্গে ছোট ভাইকেও হজে পাঠাচ্ছেন পরিবারের বড় ছেলে গার্মেন্টস ব্যবসায়ী শরীফুল ইসলাম শরীফ। মাকে জড়িয়ে কাঁদতে দেখা যায় তাকে। বোরখা পরিহিত মা আছিয়াকেও দেখা যায় চোখ মেলে জল মুছতে। সন্তান ও মায়ের চোখের জলে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে মায়ের সঙ্গে হজযাত্রী ছোট ছেলে আল-আমিনের। তিনি বলেন, ‘কেঁদে কি হবে? আমি তো আছি তোমার সঙ্গে। আর যাচ্ছ তো আল্লাহকে খুশি করতে। কেঁদ না। আল্লাহ’র সন্তুষ্টি চাইলে আরও অনেক ধৈর্যের পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে মা।’

নেত্রকোনা থেকে হজযাত্রী বাবা ও প্রিয় শিক্ষককে বিদায় জানাতে এসেছেন আজহারুল ইসলাম। কখনো বাবা জাহেদ আলী, কখনো বা শিক্ষক শহীদুজ্জামানের গলা জড়িয়ে ক্ষমা ও দোয়া চাইতে থাকেন আজহারুল ইসলাম। বলেন, জানি না কি হবে? আল্লাহ চাইলে আপনারা ফিরতে পারবেন। আবার দেখা হবে। যদি ভুলত্রুটি করে থাকি ক্ষমা করবেন। দোয়া করবেন সবার জন্য। আল্লাহ হাজির দোয়া কবুল করেন।

এভাবেই হজযাত্রীদের বিদায় বেলায় স্বজনদের কান্নামিশ্রিত আবেগে ছুঁয়ে যায় সবার মন। স্বজনরা হজযাত্রীদের জন্য বাড়ি থেকে রান্না করে এনেছেন। কাপড় দিয়েছেন। সুন্দর করে ব্যাগ গুছিয়ে দিতেও দেখা যায়। সবার একটাই আশা, হজব্রত যেন কবুল হয়। সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে হজ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে যেন ফিরে আসেন হজযাত্রীরা।

Advertisement

জেইউ/ওআর/আরআইপি