বর্ষাকালে বৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর বৃষ্টি হলে জনজীবন কেমন স্থবির হয়ে পড়ে। যাদের ব্যস্ততা আছে তাদের জন্য আলাদা বিষয়। কিন্তু যারা অলস সময় কাটাচ্ছেন; তারা কী করতে পারেন? বাইরে যাওয়ারও কোনো উপায় নেই। তাদের জন্য আজকের আয়োজন। আপনারা ঘরে বসে নিম্নোক্ত খেলাগুলো খেলতে পারেন।
Advertisement
দাবা
প্রতিপক্ষের রাজার বিরুদ্ধে কিস্তি বা চেকমেট দেওয়ার পর যদি রাজা চেক সরাতে না পারে এবং পরবর্তীতে যদি নড়াতে না পারে তবে কিস্তিমাৎ হয়ে খেলা শেষ হবে। তবে বিশ্ব দাবা ফেডারেশন বা ফিদে কর্তৃক নির্ধারিত নিয়ম-কানুন দাবা খেলায় প্রয়োগ করা হয়। স্বীকৃত দাবা প্রতিযোগিতাগুলো ফিদে হ্যাণ্ডবুকে বর্ণিত নিয়মে পরিচালিত হয়।
লুডু
Advertisement
লুডু বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। যে সব লুডু খেলার প্রচলন বাংলাদেশে দেখা যায়, তা হলো- ঘর লুডু ও সাপ লুডু। এ খেলায় প্রতিটি প্রতিযোগীর চারটি করে গুটি থাকে। প্রতি খেলোয়াড় একটি নির্দিষ্ট ঘর দখল করে। যে প্রতিযোগী ডাই চেলে প্রথম ছক্কা ফেলতে পারে সে-ই তার ঘর থেকে গুটি বের করে যাত্রা শুরু করতে পারে। প্রতি প্রতিযোগীকে এভাবে ঘর থেকে বের হয়ে পুরো ছক অতিক্রম করে নিজের ঘরে ফিরে এসে গুটি পাকাতে হয়। যার সবগুলো গুটি নির্দিষ্ট ঘরে পৌঁছায় সে বিজয়ী হয়। এছাড়া লুডু খেলার ছকের পেছনে সাপ খেলার ঘর আঁকা থাকে। এ খেলায় প্রতিযোগী ডাই চেলে প্রথমে ১ (এক) ফেলতে পারলে ঘর থেকে বের হওয়ার সুযোগ পাবে। এক থেকে একশ’ পর্যন্ত যে যেতে পারে সে-ই জয়ী হয়। গুটি সাপের মুখে পড়লে সাপ তাকে কেটে দেয় অর্থাৎ সাপের মুখ থেকে লেজ অঙ্কিত ঘরে পিছিয়ে আসে এবং যে গুটি মইয়ের গোড়া অঙ্কিত ঘরে আসে সেটি মই বেয়ে উপরের ঘরটিতে পৌঁছে যায়।
তাস
তাস বিশেষত ভারি কাগজ, পাতলা পিচবোর্ড, প্লাস্টিক প্রলিপ্ত কাগজ বা পাতলা প্লাস্টিক দিয়ে নির্মিত কাগজের টুকরোবিশেষ। যাতে আলাদা কতগুলো স্বতন্ত্র চিহ্ন অঙ্কিত থাকে এবং এগুলো তাস খেলায় ব্যবহৃত হয়। ব্যবহারের সুবিধার্থে তাসের আকার সাধারণত করতলের সমান রাখা হয়। তাসের একটি সেট বিভিন্ন রকমের খেলায় ব্যবহৃত হতে পারে। একটি সেটের প্রতিটি তাসের সম্মুখে (অথবা সোজা দিকে) আলাদা আলাদা চিহ্ন অঙ্কিত থাকে এবং খেলার নিয়ম অনুযায়ী সেগুলোর ব্যবহার নির্ধারণ করা হয়। একটি সেটের প্রতিটি তাসের উল্টো দিক অভিন্ন রাখা হয়, যাতে তাসটি কী চিহ্নের তা না বোঝা যায়। একটি সেট চার রকমের চিহ্নরূপে বিভক্ত, প্রত্যেক চিহ্নরূপে তিনটি ফেস পাত্তি ও সাংখ্যিক পাত্তি অথবা পিপ পাত্তি থাকে।
ষোলো গুটি
Advertisement
সাধারণত মাটিতে দাগ কেটে ষোলো গুটির ঘর বানানো হয়। প্রতি পক্ষেই ১৬টি করে গুটি থাকে। শুধু ঘরের মাঝখানের দাগটি দান চালার জন্য খালি থাকে। কোণাকুণি দাগের গুটিগুলো ঘরজুড়ে এক ঘর করে কোণাকুণি খেতে পারে। উলম্ব দাগ কাটা ঘরের গুটিগুলো লম্বভাবে এক ঘর করে খেতে পারে। অপর পক্ষের গুটিকে ডিঙাতে পারলেই সে গুটি কাটা পড়ে। এভাবে প্রতিপক্ষের গুটির সংখ্যা কমিয়ে শূন্য করে ফেলতে পারলেই খেলা শেষ হয়ে যায়। তবে অঞ্চলভেদে ১৩টি কিংবা নির্দিষ্ট সংখ্যক গুটি খেয়ে ফেলতে পারলেই খেলা শেষ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে খেলা শুরুর আগেই সংখ্যাটি ঠিক করে নেওয়া হয়।
বাঘ-ছাগল
অনেকটা ষোলো গুটির মতোই মাটিতে রেখা অঙ্কন করে দু’জন খেলোয়াড়ের মধ্যে এ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। তিনটি তিনটি করে ছয়টি গুটি এই খেলার মূল উপকরণ। গুটিগুলো ইটের খোয়া, গাছের পাতা ইত্যাদি যেকোন কিছুই হতে পারে। খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন বাঘ, অন্যজন ছাগল। বাঘের কাজ হচ্ছে ছাগলরূপী খেলোয়াড়ের সব গুটি খেয়ে ফেলা। আর ছাগলের কাজ হচ্ছে বুদ্ধিদীপ্ত চালের মাধ্যমে বাঘের যাতায়াতের পথ বন্ধ করে তাকে বন্দি করে ফেলা।
চোর-পুলিশ
এ খেলার উপকরণ অতি সামান্য। উপকরণগুলোর মধ্যে রয়েছে- একটি পৃষ্ঠা, সমান মাপের কয়েক টুকরো কাগজ, কলম। এ কয়টি উপকরণ দিয়ে খেলা শুরু করতে পারেন। প্রথমত, কাগজগুলোতে নির্দিষ্ট নামের সঙ্গে যথাযথ নম্বর লিখতে হবে। খেলোয়াড় চারজনের বেশি হলে নতুন আইটেম যোগ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, কাগজের টুকরোগুলোকে সুন্দর করে সমানভাবে ভাঁজ করতে হবে। তৃতীয়ত, পৃষ্ঠাটিতে খেলোয়াড়ের নাম লিখে নির্দিষ্ট স্কেল করে নিতে হবে। খেলা আরম্ভ করে যে খেলোয়াড় যে নম্বর পাবে, তা তার ঘরে লিখতে হবে। প্রত্যেক চালে যে পুলিশ হবে তাকে চোর, ডাকাত, পকেটমার ইত্যাদি ধরতে হবে। ব্যর্থ হলে পুলিশ শূন্য পাবে। সার্থক হলে চোর, ডাকাত, পকেটমার শূন্য পাবে। সাধারণত, ২০-৩০ চালে খেলা শেষ করা হয়। সবচেয়ে বেশি নম্বরপ্রাপ্ত খেলোয়াড় ১ম হয়।
যদু-মধু-রাম-শ্যাম
চোর-পুলিশ খেলার সঙ্গে যদু-মধু-রাম-শ্যামের প্রচুর মিল রয়েছে। একটি পৃষ্ঠা, সমান মাপের কয়েক টুকরো কাগজ, কলম- এ কয়টি উপকরণ দিয়ে খেলা শুরু করতে পারেন। কাগজগুলোতে নির্দিষ্ট নামগুলো (যদু-মধু-রাম-শ্যাম) লিখতে হবে। একটি নামের জন্য চারটি টুকরো ব্যবহার করতে হবে। খেলোয়াড় চারজনের বেশি হলে নতুন আইটেম যোগ করতে হবে। কাগজের টুকরোগুলোকে সুন্দর করে সমানভাবে ভাঁজ করতে হবে। খেলা আরম্ভ করে যে খেলোয়াড় যে নাম পাবে, সেখান থেকে অধিকসংখ্যক রেখে বাকিটা মাটিতে ফেলতে হবে। এভাবে এক নামের চারটি টুকরা হাতে এলেই তিনি বিজয়ী। অর্থাৎ চারটি ‘যদু’ লেখা কাগজ যদি হাতে আসে তবেই একজন বিজয়ী।
এসইউ/এমএস