দোয়া-দরুদ পাঠ করতে করতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিশ্রামকক্ষ থেকে বের হয়ে একে একে উড়োজাহাজে উঠছেন বাংলাদেশ বিমানের প্রথম হজ ফ্লাইটের যাত্রীরা।
Advertisement
কেউ দোয়া-দরুদ পড়তে পড়তে কাঁদছেন, কেউবা মোবাইল ফোনে পরিবার কিংবা আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে শেষ বিদায় নিচ্ছেন।
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে পবিত্র হজব্রত পালনে সৌদি আরব যাওয়ার আগে দেশবাসীর কাছে দোয়া চাইলেন হজযাত্রীরা।
প্রথম হজ ফ্লাইটের যাত্রীরা বলছিলেন, হজে গিয়ে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন, দেশবাসীর জন্য আমরা দোয়া করব। বাংলাদেশ যেন দীর্ঘজীবী হয়, দেশে যেন সব সময় সুখ ও সমৃদ্ধি বজায় থাকে। উত্তরোত্তর উন্নতি সাধিত হয়।
Advertisement
দেশবাসীর কাছে আমাদের চাওয়া আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আপনাদের দোয়া কবুল হলে আমাদের হজ আল্লাহকে সন্তুষ্ট করবে। আল্লাহর সন্তুষ্টিই জীবনের পূর্ণতা।
এরআগে ফজরের নামাজ শেষ করেই হজযাত্রীরা হজ ক্যাম্প থেকে বিমানবন্দরে আসেন।
কথা হয় ঢাকার বাসিন্দা কর্নেল ফরহাদ আলী মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, আল্লাহর ইচ্ছায় স্ত্রীসহ হজে যাবার সুযোগ হয়েছে। অবশ্যই পরিবার, আত্মীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধব ও সর্বোপরি দেশ ও দেশবাসীর জন্য দোয়া করব। দেশবাসীর কাছে আমাদের চাওয়া একটাই, আমাদের জন্য দোয়া করবেন। সুষ্ঠুভাবে হজ কার্যক্রম যেন সম্পন্ন করতে পারি।
মাহমুদ বেগম নামে এক হজযাত্রী বলেন, এবার মেয়ে-জামাইসহ হজে যাচ্ছি। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই হজ করা। খুব ভাল লাগছে সে সুযোগ আমাদের হয়েছে। আল্লাহর ঘরে দেশবাসীর উন্নতির জন্য দোয়া করব।
Advertisement
পেশায় ব্যবসায়ী এক হজযাত্রী বলেন, গত বছর স্ত্রী ও আমি চেষ্টা করি হজে যাওয়ার জন্য। কিন্তু স্ত্রীর রেজিস্ট্রেশন হলেও আমার হয়নি। তবে এবার দুজনই যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছি। আল্লাহ যেন আমাদের হজব্রত কবুল করেন সেজন্য দেশবাসীর কাছে আমরা দোয়া প্রত্যাশা করছি।
ফেরদৌসী বেগম বলেন, ইসলামের পাঁচ বুনিয়াদের মধ্যে হজ অন্যতম। প্রত্যেক সামর্থবান ব্যক্তির জন্য হজ ফরজ। হজের মাধ্যমে নিষ্পাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং কবুল হজের সওয়াব কেবলমাত্র জান্নাত। এত বড় সুযোগ জীবিত থাকতে কাজে লাগাতে না পারলে মরেও শান্তি পাব না। সবার দোয়া চাই, আমাদের হজ যেন কবুল হয়। আল্লাহ যেন সন্তুষ্ট হন।
সোমবার সকালে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ও ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান উড়োজাহাজে উঠে হজযাত্রীদের বিদায় দেন। প্রথম হজযাত্রায় উড়োজাহাজে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক।
এরআগে হজযাত্রার উদ্বোধন করেন রাশেদ খান মেনন। এ সময় ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ও ঝালকাঠি-১ আসনের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনসহ (বিএইচ হারুন) বিমান বাংলাদেশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরে ৪১৮ যাত্রী নিয়ে সকাল ৭টা ৫৫ মিনিটে (ফ্লাইট বিজি-১০১১) রাঙা প্রভাত বোয়িং ৭৭৭-৩০০ বিমানটি জেদ্দার উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যায়।
মন্ত্রণালয় ও বিমান সূত্রে জানা গেছে, সোমবার হজ ফ্লাইট বিজি-৩০১১ দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে ৪১৯ জন নিয়ে, বিজি-৭০১১ সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিটে ৪১৯ জন নিয়ে এবং সিডিউল ফ্লাইট বিজি-০০৩৫ রাত ৮টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যাবে।
হজ ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ে, নির্বিঘ্ন করতে সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। চট্টগ্রাম এবং সিলেট থেকেও এ বছর যথারীতি প্রয়োজনীয়সংখ্যক হজ ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে।
গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশকোনায় হজ ক্যাম্পে হজ কার্যক্রমের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
এবার প্রত্যেক হজযাত্রীর জন্য পাঁচ লিটার পবিত্র জমজমের পানি ঢাকায় আনা হবে এবং ঢাকায় ফেরার পর হাজিদের দেয়া হবে। কোনো হাজি সঙ্গে করে উড়োজাহাজে পানি বহন করতে পারবেন না। এছাড়া যেকোনো ধারালো বস্তু- যেমন, ছুরি, কাঁচি, নেইল কাটার, ধাতব নির্মিত দাঁতখিলন, কান পরিষ্কারক, তাবিজ ও গ্যাস জাতীয় বস্তু অ্যারোসল এবং ১০০ এমএলের বেশি তরল পদার্থ হাতে বা ব্যাগে বহন করা যাবে না। সেইসঙ্গে হজযাত্রীরা কোনো ধরনের খাদ্য সামগ্রী সঙ্গে নিতে পারবেন না।
আরএম/জেইউ/এসআর/এনএফ/জেআইএম