চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। এ নিয়ে নানামুখি বিশ্লেষণ হচ্ছে। গতকাল রোববার প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায় মাদ্রাসা, কারিগরিসহ ১০টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই কমেছে। এবার ১০ বোর্ডের পাসের গড় হার ৬৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। গতবার এ হার ছিল ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। এবারে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩৭ হাজার ৭২৬ জন। গতকাল রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফলাফলের অনুলিপি তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এবারের আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন শুধু এইচএসসি পরীক্ষার পাসের গড় হার ৬৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। গতবার এ হার ছিল ৭২ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এখানেও পাসের হার কমেছে। এবারের জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩৩ হাজার ২৪২ জন। গতবার পেয়েছিল ৪৮ হাজার ৯৫০ জন।
Advertisement
অন্যদিকে, মাদ্রাসা ও কারিগরিতেও গতবারের চেয়ে ফলাফল খারাপ হয়েছে। মাদ্রাসা বোর্ডে এবার পাসের হার ৭৭ দশমিক ২ শতাংশ। এ বোর্ডে ১১ শতাংশের বেশি পাসের হার কমেছে। এখানে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ৮১৫ জন। অন্যদিকে, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। গতবার এ হার ছিল ৮৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এখানে জিপিএ পেয়েছেন ২ হাজার ৬৬৯ জন। এবছর এইচএসসি পরীক্ষাতেও সবথেকে খারাপ ফল করেছে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের শিক্ষার্থীরা। এ বোর্ডে এবার পাসের হার সব থেকে কম ৪৯.৫২ শতাংশ। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৭৮ জন শিক্ষার্থী। এ বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ৩৭২ জন। পাস করেছে ৪৯ হাজার ৭০৪ জন শিক্ষার্থী। এছাড়া ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল করেছে। ইংরেজিতে ফেল করেছে ৩৮ শতাংশ শিক্ষার্থী।
গত ২ এপ্রিল শুরু হয়ে ১৫ মে এইচএসসির লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছিল। এরপর ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ছিল প্রায় ১২ লাখ। সময়মত ফল প্রকাশ হওয়া এখন প্রায় নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা আশাবাদের কথা। পাস করা শিক্ষার্থীরা যাতে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এই ফলাফল বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতে শতভাগ পাসের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। কী জন্য এবার পাসের হার জিপিএ-৫ কমলো সেটিও খতিয়ে দেখতে হবে। এ জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। এরমধ্যে রয়েছে- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক এবং ছাত্রের একটি বাস্তবসম্মত অনুপাত রক্ষা । শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৈষম্য এবং অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে কোচিং ব্যবসা এবং শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনি বন্ধ করা। শিক্ষাকে কিছুসংখ্যক লোকের অনৈতিক বাণিজ্যের ধারা থেকে বের করে আনতে মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে শিক্ষকদের পূর্ণ প্রস্তুতি ও মনোযোগ দিতে হবে। বিশ্বের কোথাও মূলধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এ ধরনের কোচিং ও প্রাইভেট টিউশনির রমরমা ব্যবসা নেই। বর্তমান বাস্তবতায় কোচিং ব্যবসা বন্ধের পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার মানোন্নয়নে দ্রুত ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া ইংরেজির কারণে কুমিল্লা বোর্ডের ফল বিপর্যয় হয়েছে। এ বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে।
এছাড়া বর্তমানে জঙ্গিবাদের চরম উত্থানের সময়ে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। পাঠ্যসূচিতে এমন বিষয় নিয়ে আসতে হবে যাতে ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার হতে দূরে থাকতে পারে শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি চর্চা বাড়াতে হবে। দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে হবে শিক্ষার্থীদের। একসাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের সঠিক ইতিহাস থেকে পাঠ নিতে হবে যাতে দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি দায়বোধ সৃষ্টি হয় শিক্ষার্থীদের। প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের এই যুগে শিক্ষার্থীরা আধুনিক, বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে গড়ে উঠুক- আমাদের শিক্ষার লক্ষ্য হোক সেই দিকে। মনে রাখা প্রয়োজন এ ব্যাপারে শিক্ষকের ভূমিকাই কিন্তু মুখ্য। সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে মনোযোগী হলে শিক্ষার আমূল পরিবর্তন কোনো কঠিন কাজ হবে না।
Advertisement
সকল শিক্ষার্থীর প্রতি রইলো আমাদের শুভকামনা।
এইচআর/জেআইএম