নতুন নতুন পদ্ধতির কারণে পাবলিক পরীক্ষায় ফলাফলে ধস নামছে। এর প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের উপর। আশানুরূপ ফল পায়নি বলে অভিযোগ একাধিক শিক্ষার্থীর।
Advertisement
অন্যদিকে, ত্রুটিপূর্ণ পরীক্ষা পদ্ধতির কারণে পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলের ধারাবাহিকতা থাকছে না বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। পরীক্ষা-নিরীক্ষা মাধ্যমে নতুন পদ্ধতি চালুসহ নানা পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
রোববার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। এ বছর এইচএসসি ফলে ধস নেমেছে। ৬৮ দশমিক ৯১ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। যাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩৭ হাজার ৯৬৯ জন। গত বছর এ পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭০ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৫৮ হাজার ২৭৬ জন।
সেই হিসাবে এবার উচ্চ মাধ্যমিকে পাসের হার কমেছে ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এছাড়া জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ২০ হাজার ৩০৭ জন।
Advertisement
এইচএসসির ফলে বড় রদবদলের কারণ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষা পদ্ধতিতে অনেক ক্রটি রয়েছে। পাবলিক পরীক্ষায় নতুন নতুন পদ্ধতি চালু, বহুনির্বাচন পদ্ধতি ব্যবস্থা, সৃজনশীলে নম্বর বৃদ্ধির কারণে এবার এইচএসসি পরীক্ষার ফল খারাপ হয়েছে।
কারো উপর কিছু চাপিয়ে দিলে তা থেকে ভালো ফল পাওয়া যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, সৃজনশীলের উপর যথাযথ শিক্ষা দিতে না পারলেও এমসিকিউতে নম্বর কমিয়ে সৃজনশীল নম্বর বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এটি রেজাল্টের উপর বড় প্রভাব ফেলেছে। এসব পরিবর্তন করা না হলে আগামী বছরেরও এমন বিপর্যয় ঘটবে।
তিনি আরও বলেন, মানসম্মত শিক্ষা দিতে না পারলে শতভাগ পাস করলেও তা কাজে আসবে না। ভালো ফল পেতে হলে ক্লাসে সঠিকভাবে পাঠের বিষয় শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে দিতে হবে।
দেশের পাবলিক পরীক্ষায় নানা ক্রটি রয়েছে। এসব ত্রুটিপূর্ণ পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে মানসম্মত শিক্ষা ও পরীক্ষা পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য নতুন কোনো পদ্ধতি চালুর আগে তা দুই বছর পর্যন্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে, কোনো পদ্ধতি চালু হলে তা নুন্যতম পাঁচ বছর বহাল রাখতে হবে, ৫ম শ্রেণির সমাপনী ও জুনিয়ার স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি-জেডিসি) পরীক্ষা বাতিল করতে হবে, পাবলিক পরীক্ষা থেকে শারীরিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষা বাতিল করে তা ক্লাসে নিতে হবে বলেও মত দেন তিনি।
Advertisement
এছাড়া পরীক্ষা ফল খারাপের কারণ খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি গঠন করারও পরামর্শ দিয়েছেন এ শিক্ষাবিদ।
তবে ফল খারাপের বিষয়টিকে ইতিবাচক মনে করছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
তিনি বলেন, মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়নে নতুন নতুন পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে। পরীক্ষা পদ্ধতিতে আনা হয়েছে পরিবর্তন। যা শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনবে।
সরকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই রাতারাতি পাবলিক পরীক্ষা পরিবর্তনের চেষ্ঠা করছেন বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষাবিদ ও অ্যামিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, হটাৎ করে পাবলিক পরীক্ষার ফল চূড়ায় উঠছে আবার হটাৎ তাতে ধস নামছে। এর জন্য নীতিনির্ধারকরা দায়ি।
তিনি বলেন, সরকার মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়নের কথা বলে নানা ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থা বহাল রেখেছে। শিক্ষার্থীদের কোচিংমুখী থেকে সরিয়ে আনতে ব্যর্থ হচ্ছে। শিক্ষকরাও কোচিং ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন। তাই শিক্ষকদের ক্লাসে মনোযোগ না থাকায় সঠিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
তিনি বলেন, মানস্মত শিক্ষা ও ভালো ফলাফল করতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থার গোড়া থেকে পরিবর্তন আনতে হবে। নতুবা বর্হিবিশ্ব থেকে ছেলেমেয়েরা পিছিয়ে পড়বে।
এমএইচএম/এমআরএম/এএইচ