অর্থনীতি

সাইবার ঝুঁকি রোধে ব্যবস্থা নেয় না ২৬ শতাংশ ব্যাংক

সাইবার ঝুঁকি রোধে দেশের ২৬ শতাংশ সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের পাঁচ হাজারের বেশি শাখায় সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে কোনো ধরনের ট্রেনিং বা সচেতনতামূলক বার্তা পৌঁছায় না। এ অবস্থায় দেশব্যাপী ব্যাংকের শাথা যত বাড়ছে সাইবার ঝুঁকি তত বাড়ছে।

Advertisement

রোববার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) অডিটোরিয়ামে ‘ব্যাংকের তথ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি প্রস্তুতি’ শীর্ষক কর্মশালায় এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।

যৌথভাবে কর্মশালার আয়োজন করে বিআইবিএম ও ট্রান্স আইটি সলিউশন। কর্মশালায় মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন তথ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ রুবাইয়াত আকবর।

প্রতিবেদন বলা হয়, প্রতি ৩৯ সেকেন্ডে বিশ্বের কোনো না কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে একবার সাইবার হামলা চালাচ্ছে হ্যাকাররা। শুধু র‌্যান্সামওয়ারের (মানব সৃষ্ট ভুল) কারণেই ২০১৬ সালে ক্ষতি হয়েছে এক বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সাল নাগাদ সাইবার অপরাধজনিত ক্ষতির মাত্রা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ছয় ট্রিলিয়ন ডলার।

Advertisement

মূল প্রতিবেদনে বলা হয়, হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে হ্যাকাররা প্রথমেই টার্গেট করে ব্যাংকের সাধারণ কর্মীদের। তাদের ভুলের ফাঁদে ফেলে গ্রাহক তথ্য চুরি এবং পেমেন্ট সিস্টেমে অনধিকার প্রবেশ করার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালায়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৭ সালে সাইবার ঝুঁকি মোকাবেলা করতে ব্যাংকের সর্বস্তরে অধিকতর সচেতন করার কোনো বিকল্প নেই। হ্যাকারদের আক্রমণের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে আর্থিক ও ব্যাংকিং খাত, বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। সে ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোতে কর্মরত সবাইকে সাইবার আক্রমণের ধরন সম্পর্কে ধারণা লাভ ও এর প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ক্রমবর্ধমান সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবেলায় ও নিরাপদ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে ব্যাংকের সকল কর্মীকে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। সাইবার নিরাপত্তা বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান আইটি কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে। একই সঙ্গে আইটি নিরাপত্তা বিষয়ে একটি গাইডলাইনও প্রস্তুত করেছে। বিশ্বব্যাপী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আক্রমণের শিকার হচ্ছে। এজন্য স্থানীয় ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্ক হতে হবে। প্রত্যেকটি ব্যাংককে আলাদাভাবে সাইবার সিকিউরিটি স্ট্রাটেজি প্রণয়ন করতে হবে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান আনিস এ খান বলেন, ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। ব্যাংকারদের সচেতনতা বাড়ানো ও প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে।

Advertisement

ট্রান্স আইটি সলিউশনের সিইও আমিরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে তথ্য নিরাপত্তায় সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুধু ঢাকা বা বড় শহরে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রতিটি জেলা পর্যায়ে ব্যাংক কর্মীদের জন্য কর্মশালার আয়োজন করতে হবে।

ট্রান্স আইটির পক্ষ থেকে দেড় ঘণ্টাব্যাপী সেশনে সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর কয়েকটি সাইবার ঝুঁকি র্যান্সামওয়ার আর ফিশিং আক্রমণ কীভাবে পরিচালিত হয়, তার বাস্তব নমুনা প্রদর্শন করা হয়। অনিরাপদ ওয়াইফাই ব্যবহার করে ল্যাপটপ হ্যাক করার মাধ্যমে হ্যাকাররা কীভাবে দুর্বলতার সুযোগ নেয় তা উপস্থিত অংশগ্রহণকারীদের সামনেই তুলে ধরা হয়।

বিআইবিএম’র মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইবিএমের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব।

এমএ/জেডএ/জেআইএম