ক্যাম্পাস

মায়ের ছাগল ও মুরগি বিক্রির টাকায় পড়তেন সিদ্দিকুর

 

পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে আন্দোলনে নেমে পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেলের আঘাতে দৃষ্টিশক্তি হারাতে বসা সরকারি তিতুমীর কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. সিদ্দিকুর রহমান ছিলেন তার পরিবারের আশার আলো।

Advertisement

গ্রামের বাড়িতে মায়ের পালিত ছাগল ও মুরগি বিক্রির টাকায় ও অতি কষ্টে পড়াশোনা করে এতদূর এসেছেন সিদ্দিকুর রহমান। তিনি দৃষ্টিশক্তি হারালে তার পরিবারের আশার আলো নিভে যাবে।

পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশসহ সাত দফা দাবিতে গত ২০ জুলাই আন্দোলনে নেমে পুলিশের ছোড়া টিয়ার শেলে চোখে আঘাত পান সিদ্দিকুর রহমান।

এরপর থেকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সিদ্দিকুর।

Advertisement

শনিবার রাতে হাসপাতালের করিডোরে তার মা সোলেমা আক্তারের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, তার দুই ছেলের মধ্যে সিদ্দিকুর ছোট, বড় এক মেয়েও রয়েছে। বড় ছেলে নায়েব আলী এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করে।

সোলেমা আক্তার জানান, ২৫ বছর আগে তার স্বামীর মৃত্যুর সময় ছেলে-মেয়েরা খুবই ছোট ছিল। সে সময় থেকে অতিকষ্টে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে দিন যাপন করে আসছেন। তার বড় ছেলে এখন গ্রামের বাড়িতে রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘সবকিছু ছাপিয়ে সিদ্দিকুরকে নিয়ে আমাদের অভাবের দিন শেষ হবে বলে স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু তা আর হবে না। আমার সন্তান বিসিএস পরীক্ষা দিতে আর পারবে না। চোখে দেখবে না। আর চাকরিও পাবে না। কত কষ্ট করে ছাগল-মুরগি বিক্রি করে সিদ্দিকুরের পড়াশোনার খরচ জোগাতে হয়েছে বাজান। আমাদের সব কষ্ট বৃথা গেল।’

তিন বছর বয়সে বাবাকে হারানো ময়মনসিংহের সিদ্দিকুরের এখন চিকিৎসা চলছে সহপাঠীদের আর্থিক সহায়তায়। তবে সরকার কিংবা কলেজের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি সিদ্দিকুরকে হাসপাতালে দেখতে আসেননি বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তার মা।

Advertisement

শনিবার সকালে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সিদ্দিকুরের দুই চোখে অস্ত্রোপচার করার পর তাকে অবজারভেশন কক্ষে রাখা হয়েছে। সিদ্দিকুর এই হাসপাতালে ৬২৪ নং কেবিনে ভর্তি রয়েছেন।

সিদ্দিুকুরের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে তার ভাগ্নে মো. সেলিম রোববার সকালে জাগো নিউজকে বলেন, ‘মামার কী হয়েছে তা তো পত্রিকায় দেখতে পেয়েছেন। মামা এখনও অবজারভেশন কক্ষে রয়েছেন।’

তিনি জানান, আজ পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড বসার কথা রয়েছে। তারপর জানা যাবে সিদ্দিকুরের চিকিৎসা সম্পর্কে।

অস্ত্রোপচারের পর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ইফতেখার মনির গণমাধ্যমকে বলেন, আঘাতে সিদ্দিকুরের দুই চোখ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার ডান চোখের ভেতরের অংশ বের হয়ে আসছিল; তা যথাস্থানে বসানো হয়েছে। বাঁ চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; রক্ত ছিল, তা পরিষ্কার করা হয়েছে। তবে চোখের আলো ফিরে আসার সম্ভাবনা কম।

জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালের আবাসিক সার্জন সহযোগী অধ্যাপক ড. শ্যামল কুমার জাগো নিউজকে বলেন, আমি রোগী দেখছি, পরে কথা বলছি।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক চিকিৎসক বলেন, সিদ্দিকুরের চোখ আর ভাল হবে না। কর্নিয়া নষ্ট হলে তা রিপ্লেসমেন্ট করা যেত। কিন্তু সিদ্দিকুরের সম্পূর্ণ চোখ নষ্ট হয়ে গেছে।

ঢাবির অধিভুক্ত রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজ ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও সরকারি বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থীরা রুটিনসহ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে গত বৃহস্পতিবার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন।

একপর্যায়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। এ সময় শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করা হয়। ওইদিন পুলিশের ‘কাঁদানে গ্যাসের শেলে’ চোখে গুরুতর আঘাত পান তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর।

এ ঘটনায় পরদিন উল্টো পুলিশ শাহবাগ থানায় ১২০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে। এজাহারে সিদ্দিকুর আহত হওয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে, মিছিলকারীদের ছোড়া ফুলের টবের আঘাতে তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সিদ্দিকুরের দুই চোখ জখম হয়।

এসএম/এসআর/এমএস