দুদিন হোক আর ১০ দিন, বাইরে থেকে দেশে ফিরলে, বিমান যখন ল্যান্ড করে, তখন অদ্ভুত একটা অনুভূতি হয় আমার। তীব্র আবেগের একটা ঢেউ খেলে যায় শরীরে-মনে। টের পাই বাংলাদেশকে কতটা ভালোবাসি। শুধু আমি নই, অল্প কিছু দেশবিরোধী ছাড়া, দেশের অধিকাংশ মানুষই বাংলাদেশকে ভালোবাসেন। আমি নিশ্চিত, কোটি কোটি মানুষ আছেন, যারা আমার চেয়ে দেশকে অনেক বেশি ভালোবাসেন। একেকজনের ভালোবাসার প্রকাশ একেকরকম। কেউ কথায় ভালোবাসেন, কেউ কাজে। কেউ কথা কম বলেন, কাজ বেশি করেন। নীরবে হোক, সরবে হোক; দেশের জন্য কাজ করা, দেশকে এগিয়ে নেয়াই হলো সত্যিকারের দেশপ্রেম। দেশ নিয়ে কারো আবেগ কম, কারো বেশি। আবেগ থাকতেই হবে, এমন কোনো কথা নেই। নীরবে কাজ করে যাওয়ার গুরুত্বও কম নয়। দেশ নিয়ে আমার আবেগ একটু বেশিই। বাংলাদেশ কোনো খেলায় জিতলে আমি ছেলে মানুষের মত উৎফুল্ল হই। কোনো সূচকে বাংলাদেশের উন্নয়ন ঘটলে মন ভালো হয়ে যায়, খারাপ করলে মন খারাপ হয়ে যায়। জাতীয় সংগীত ছেলেবেলা থেকে অনেকবার শুনেছি, গেয়েছি। কিন্তু এখনও যতবার শুনি, ততবারই, চোখটা জলে ভরে যায়। যেখানেই যাই, দেশে ফিরলে, বুকটা ফুলে যায় গর্বে, এই আমাদের বাংলাদেশ। এই অনুভূতিটা আমাকে কখনো বিদেশে থিতু হতে উদ্বুদ্ধ করেনি। সুখে-দুঃখে বাংলাদেশে মাথা উঁচু করে থাকাটাই আমার জন্য সবচেয়ে আনন্দের। তবে কেউ ভাববেন না, যারা দেশের বাইরে থাকেন, বিশেষ করে প্রবাসী শ্রমিকদের দেশপ্রেম আমার চেয়ে কম। বরং আমি দেখেছি, যারা দেশের বাইরে থাকেন, দেশ নিয়ে তাদের আবেগ আমার চেয়ে অনেক বেশি। ২০-৩০ বছর দেশের বাইরে আছেন, এমন মানুষও বাংলাদেশের জন্য হৃদয়ে গভীর আবেগ পোষণ করেন। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সেই ফুলে ফেঁপে উঠছে দেশের অর্থনীতি।
Advertisement
আজকের লেখার বিষয় দেশপ্রেম নয়। বলছিলাম দেশে ফেরার অনুভূতির কথা। ৫ দিন পর শুক্রবার দেশে ফিরে আবার সেই অনুভূতিটা হলো- সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি। কিন্তু এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়েই ভালো লাগার অনুভূতি পাল্টে তার জায়গা নিল বিবমিষা- এ কোন বাংলাদেশ? এ দেশ তো আমার চেনা নয়। গত সপ্তাহে যাওয়ার সময়ও দেখেছি, পত্র-পত্রিকা টিভিতে এর পক্ষে-বিপক্ষে নানা কিছু দেখেছি-শুনেছি। কিন্তু বনসাইয়ের সারি দেখে যে এমন কুৎসিত অনুভূতি হতে পারে, নিজের না হলে বুঝতে পারতাম না। বনসাই নিয়ে অনেকদিন ধরেই সামাজিক ও গণমাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষে নানা লেখালেখি হচ্ছিল। আমি কিছুই লিখিনি। কারণ এয়ারপোর্ট রোডে বনসাইয়ের ছবি দেখলেও নিজের চোখে দেখার আগে বুঝতে পারিনি, বিষয়টি কী, দেখতে কেমন?
বনানী ওভারপাস থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার রাস্তায় বিউটিফিকেশনের কাজ চলছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভিনাইল ওয়ার্ল্ডের তত্ত্বাবধানে এ প্রকল্পে আধুনিক যাত্রী ছাউনি নির্মাণ, ফুটপাতে আলোকসজ্জা এবং গাছ লাগানো হচ্ছে। এ প্রকল্পের অংশ হিসেবেই ফুটপাতকে দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তুলতে চীন থেকে আনা ১২০টি ফাইকাস বনসাই লাগানো হচ্ছে। এই বনসাই গাছগুলোর একেকটির দাম দেড় থেকে ২ লাখ টাকা। চীন থেকে অনেক কষ্টে ফ্রিজার কন্টেইনারে আনা এই গাছগুলো রোপণ করা হয়েছে। বিউটিফিকিশেন নিয়ে আমার আপত্তি নেই। আমিও চাই এয়ারপোর্ট রোডটি সুন্দর থাকুক। যাতে বিদেশ থেকে কেউ ঢুকেই বাংলাদেশ সম্পর্কে একটা ইতিবাচক ধারণা পান।
আমার এক বন্ধু বলেছেন, এয়ারপোর্ট রোডে বসনাই লাগানোর পর নাকি দেখতে বিদেশের মত লাগে। হতে পারে। কিন্তু আমি তো বিদেশ দেখার জন্য বাংলাদেশে আসি না। আমি বিমানবন্দর থেকে বেরিয়েই বাংলাদেশ দেখতে চাই, বিদেশ নয়। শুধু আমি বা বাংলাদেশের কেউ নয়, বিদেশি যারা বাংলাদেশে আসে, তারাও তো প্রথম দর্শনে বাংলাদেশকেই চিনতে চাইবে। বনসাই কি তার কাছে বাংলাদেশকে চেনাবে।
Advertisement
বনসাই নিয়েই অনেকের আপত্তি আছে। প্রকৃতিপ্রেমী অনেকে বনসাই বিরোধী। তারা চান না প্রকৃতিতে কোনো বাধা দেয়া হোক। তারা চান, গাছ বেড়ে উঠুক গাছের মতই। তবে আমি কোনো বিষয়েই অত কট্টর নই। বনসাই নিয়েও আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে বনসাই আপনার ড্রইং রুমে থাকুক, বাসায় থাকুক; বাংলাদেশের গেটওয়ে এয়ারপোর্ট রোডে নয়।
জনগণের টাকায় এয়ারপোর্ট রোডে বনসাই লাগানো হয়েছে, ফেসবুকে এ কথা লেখার পর কেউ কেউ আমার তথ্যের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। জানিয়েছেন, জনগণের টাকায় নয়, ভিনাইল ওয়ার্ল্ড নামে একটি প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ নিজ খরচে এয়ারপোর্ট রোডে বিউটিফিকিশনের কাজ করছেন। শুনে মনটা ভালো হয়ে গেল। এমন প্রকৃতিপ্রেমী প্রতিষ্ঠানও তাহলে বাংলাদেশে আছে! এমন একটি প্রতিষ্ঠানের নাম আগে কখনো শুনিনি বলে নিজেকেই অভিশাপ দিলাম। তবে নিজে খারাপ মানুষ তো, তাই এমন নিঃস্বার্থভাবে কেউ দেশের উপকার করছেন, বিষয়টা ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিল না। আরো একটু খোঁজখবর নিয়ে জানলাম, ভিনাইল ওয়ার্ল্ড নিজেদের টাকায় কাজটি করছে বটে, তবে পরবর্তী ১০ বছর এই রাস্তা থেকে সব ধরনের বিজ্ঞাপনের টাকা তারা পাবে। এতক্ষণে ব্যাপারটা বিশ্বাসযোগ্য হলো বটে। ইন্টারনেট ঘেটেঘুটে যা জানলাম, বনসাই এই প্রকল্পের ছোট্ট একটি অংশমাত্র। বনানী ওভারপাস থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত মোট ৬ কিলোমিটার রাস্তার সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য মোট বাজেট ১৪০ কোটি টাকা, সেখানে বনসাইয়ের বাজেট মাত্র ৩ কোটি টাকা। বনসাই ছাড়াও এই রাস্তায় আরো সাড়ে ৫ লাখ দেশি গাছ লাগানো হবে।
বিউটিফিকেশনের জন্য ইতোমধ্যে এয়ারপোর্ট রোডের সব গাছ কেটে ন্যাড়া করে ফেলা হয়েছে, নতুন করে ঢেলে সাজানো হচ্ছে পুরো রাস্তা। আগের গাছগুলো কেটে ফেলায় মন খারাপ হয়েছে। তবু ভালো কিছুর জন্য আমি ধৈর্য ধরতে রাজি আছি। যেহেতু রাস্তাটি নতুন করে সাজানোই হচ্ছে, তাই সুযোগ থাকছে তা পরিকল্পিতভাবে সাজানোর। পরিকল্পিতভাবে গাছ লাগালে, একটি এলাকা কেমন মোহনীয় রূপ ধারণ করতে পারে, তা দেখতে খুব বেশি দূর যাওয়ার দরকার নেই। রমনা গ্রিন তো না হয় পুরোনো উদাহরণ, সংসদ ভবন এলাকা তো আমাদের অনেকের চোখের সামনে গড়ে উঠেছে। সংসদ ভবনের এক পাশে কৃষ্ণচূড়া, একপাশে কনকচূড়া, এক পাশে সোনালু, এক সারিতে রাধাচূড়া, এক সারিতে পাম ট্রি, এক সারিতে খেজুর গাছ, এক সারিতে দেবদারু- পরিকল্পনার দারুণ ছাপ। গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদে সংসদ ভবনের চারপাশের রঙের খেলা দেখতে ছুটে যাই আমি। শুধু আমি নই, দিনভর সেখানে ভিড় লেগে থাকে। এমন আরেকটি রাস্তা পেলে তা সাজানো সম্ভব মনের মত করে। ভিনাইল ওয়ার্ল্ড পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের আগে নিসর্গীদের সাথে কথা বলতে পারে। বাকি সব কাজ তারা তাদের পরিকল্পনা মত করুক। খালি গাছ লাগানোর কাজটি করা হোক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে। আমি প্রকৃতি ভালোবাসি। তবে বিশেষজ্ঞ নই। তবু আমার সুযোগ থাকলে জারুল, কৃষ্ণচূড়া, ছাতিম, সোনালু, লাল সোনালু, কাঠগোলাপ, নাগেশ্বর, নাগলিঙ্গম, পলাশ, শিমুল, বট, দেবদারু দিয়ে সাজাতাম এয়ারপোর্ট রোড। বড় গাছের ফাঁকে ফাঁকে লাগাতাম কামিনী, গন্ধরাজ, হাস্নাহেনা, বেলি, জুঁইয়ের মত গন্ধ বিলানো ফুলের গাছ। একই সঙ্গে বর্ণ, গন্ধ, ছায়ায় রচিত হতে পারে মায়াময় পরিবেশ। বাংলাদেশকে আমরা চিনি, ভালোবাসি ‘কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো, কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে।’ এই গানের মত করে। বিমান থেকে নেমে বাংলাদেশে ঢুকেই যেন যে কেউ সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশের মায়াটা টের পায়। আপনি অনেক বড় বড় সাইনবোর্ড দিয়ে, বিজ্ঞাপন দিয়ে বাংলাদেশকে যতটা না চেনাতে পারবেন; একটি রাস্তা দিয়ে তারচেয়ে বেশি পারবেন। একটি পাতা দিয়েও কখনো কখনো একটি দেশকে চেনা যায়। জাপানিরা যেমন চেরি ফোটার উৎসব করে, আমরা তেমন কৃষ্ণচূড়া, পলাশ ফোটার উৎসব করতে পারি।
প্রসঙ্গ যখন এয়ারপোর্ট রোড, তখন আরেকটা বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। মহাখালী থেকে বনানী পর্যন্ত রাস্তার পশ্চিমপাশের অংশ বড্ড দৃষ্টিকটু। কোনো সৃষ্টিশীলতা নেই, টানা বিল্ডিং। ঢাকায় এখন অনেক দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীর ভবন আছে। কিন্তু কেউ ঢাকায় ঢোকার পরেই যখন এমন টানা ইটের সারি দেখা খুবই বিরক্তিকর এবং বিভ্রান্তিকর। ঢাকা তো এই এলাকার মত অত খারাপ নয়। স্থাপত্যকলার শিক্ষার্থীরা বিষয়টি ভেবে দেখতে পারেন। যদিও ভবনগুলো ব্যক্তিমালিকানার। তবুও সিটি করপোরেশন তাদের বাধ্য করতে পারে, অন্তত বাইরের অংশটুকু দৃষ্টিনন্দন করে পুনঃনির্মাণে।
Advertisement
শুধু এয়ারপোর্ট রোড নয়, পুরো ঢাকাকেই একটি পরিকল্পনার আওতায় এনে সাজানো যেতে পারে। গাছ লাগালে শুধু যে দেখতে ভালো লাগবে তাই নয়, ইট-কাঠের জঙ্গলে পরিণত হওয়া এই ঢাকা আরো বাসযোগ্য হবে। পুরো ঢাকাকে সবুজ বানিয়ে ফেলা কিন্তু খুব খরচের ব্যাপার হবে না। বিদেশ থেকে বনসাই আনতে না হয় লাখ লাখ টাকা খরচ হয়; দেশি গাছ লাগাতে নিশ্চয়ই অত খরচ হবে না। প্রয়োজনে ভিনাইল গ্রুপের মত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা সবুজায়নের দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। সামনে বর্ষাকাল। ঢাকায় শুরু হয়েছে বৃক্ষমেলা। ঢাকাসহ সারাদেশে গাছ লাগানোর এখনই সময়।
কদিন জীবনে প্রথমবারের মত ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি গিয়েছিলাম। সবাই এই সময়ের দিল্লির উত্তাপ নিয়ে আমাকে ভয় দেখিয়েছেন। দিল্লিতে পৌঁছে আমি তাপমাত্রা মাপিনি। হয়তো তাপমাত্রা ঢাকার চেয়ে বেশি। কিন্তু মরুপ্রবণ দিল্লি ঢাকার চেয়ে অনেক বেশি সহনীয়। রহস্যটা কোথায়? দিল্লির সহনীয় হওয়ার রহস্য উদ্ধারে আপনাকে মাসুদ রানা হতে হবে না। আপনিই দেখতে পাবেন, দিল্লির প্রতিটি রাস্তার দুই পাশই গাছে ঢাকা। মূল দিল্লির এমন অনেক রাস্তা দেখেছি, যেখান থেকে আকাশ দেখা যায় না, আকাশ ঢেকে যায় গাছে। ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের সামনের রাস্তা ছাড়া সবুজে আকাশ ঢেকে যাওয়া কোনো রাস্তা নেই। ধরুন শাহবাগ থেকে জাহাঙ্গীর গেট পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশ যদি গাছে ঢাকা থাকতো, দেখতে কেমন লাগতো একটু ভাবুন। গাছ যে আপনার শহরকে আরো বেশি শীতল, আরো বাসযোগ্য রাখবে, এটা বুঝতেও তো নিশ্চয়ই আপনাকে পরিবেশবিজ্ঞানী হতে হবে না। কড়া গ্রীষ্মে ঢাকার মতিঝিল আর ধানমন্ডি লেকের তাপমাত্রা কিন্তু এক রকম থাকে না। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে আমি বছর দেড়েক দৈনিক জনকণ্ঠে কাজ করেছি। তখন জনকণ্ঠের অফিস ছিল মতিঝিলে, আমার বাসা ছিল রাজাবাজার। মধ্যরাতে যখন অফিসের বেবি ট্যাক্সিতে বাসায় ফিরতাম, কাকরাইল মসজিদের মোড় ঘুরে গাড়ি মিন্টো রোডে ঢুকলেই ঝুপ করে শীত নেমে আসতো।
সরকার এবং সিটি করপোরেশন মিলে ঢাকাকে নিয়ে ভাববে। কিন্তু সব দায়িত্ব সরকারকে দিয়ে বসে থাকলে হবে না। এই ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী যেমন থাকেন, মেয়র যেমন থাকেন; আপনি-আমিও কিন্তু থাকি। তাই ঢাকাকে বাসযোগ্য রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার। সরকার রাস্তা সাজাক, পার্ক বাড়াক। আপনি আমি চেষ্টা করি, আমাদের চারপাশটা সবুজ রাখতে। আপনার বাসার সামনের খালি জায়গা, আপনার বাসার ছাদ, এমনকি আপনার বারান্দাও হতে পারে আপনার সবুজায়নের ক্ষেত্র। আমি মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোড এলাকায় থাকি। এলাকাটি আমার খুবই পছন্দ। ইকবাল রোডে দুটি বড় মাঠ আছে, চওড়া রাস্তা আছে। আর আছে প্রচুর গাছ। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং হলো, ইকবাল রোডের সবগুলো বাসার সামনে ছোটবড় বাগান রয়েছে। এই সবুজের ছোঁয়া বদলে দিয়েছে ইকবাল রোডের চেহারা। ঢাকার সবগুলো আবাসিক এলাকাই এভাবে বদলে যেতে পারে। এলাকাভিত্তিক ছোট্ট উদ্যোগ বদলে দিতে পারে আপনার বাসের আমেজ। নগরায়নের চাপে প্রতিদিন আরো কম সবুজ হচ্ছে ঢাকা। আজ যেটা সবুজে ঢাকা একতলা ভবন। দুই বছর পর সেটাই হয়ে যায় সবুজশূন্য ১২ তলা ভবন। এভাবে চলতে থাকলে একসময় আপনার ঢাকা আর বাসযোগ্য থাকবে না। হয়তো আপনি ভাবছেন, ততদিন তো আমি থাকবো না। কিন্তু ঢাকাকে বাসযোগ্য রাখতে হবে আপনার সন্তানের জন্য, আপনার উত্তরসূরির জন্য। নইলে একসময় উত্তরসূরিরা আমাকে-আপনাকে অভিশাপ দেবে। উত্তর প্রজন্মের অভিশাপ নয়, বেঁচে থাকতে এই ঢাকার সবুজ রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আমি গাইতে চাই ‘সবুজ সবুজে মেশা নীল নীলিমায়, পাবে না আমায়’। আমি হারিয়ে যেতে চাই সবুজে।
এক পাগল গুলতি দিয়ে শহরের বিভিন্ন বাড়ির গ্লাস ভাঙতো। তাকে পাগলা গারদে রেখে চিকিৎসা দেয়া হলো। মোটামুটি ভালো হওয়ার পর ডাক্তাররা তাকে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। ছাড়ার আগে মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তারা তার সাথে কথা বলছিলেন। ডাক্তার জিজ্ঞাসা করলেন, ছুটি পেলে আপনি কোথায় যাবেন? তিনি তার প্রিয় এক বান্ধবীর কাছে যাওয়ার কথা বললেন। ডাক্তাররা ভাবলেন, যাক সুস্থ মানুষের মতই আচরণ। ডাক্তাররা জানতে চাইলেন, তারপর কী করবেন? তিনি বললেন, তার সাথে ঘনিষ্ঠ হবো। খুশী গোপন করে ডাক্তার বললেন, তারপর? তিনি বললেন, এরপর তার পোশাক খুলবো। ডাক্তাররা তার সুস্থতা নিশ্চিত হয়ে তাকে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। পাশ থেকে এক দুষ্টু ডাক্তার জানতে চাইলেন, এরপর কী করবেন? এবার ক্ষেপে গিয়ে সেই পাগল বললেন, তার ব্রা’র ফিতা দিয়ে গুলতি বানিয়ে জানালার গ্লাস ভাঙবো। আমার অবস্থাও সেই পাগলের মত। যত যা-ই করেন, যত টাকাই খরচ হয়ে থাকুক, আমি দাবি করছি, আজই, সম্ভব হলে এক্ষুণি এয়ারপোর্ট রোডে লাগানো বনসাইগুলো উপড়ে ফেলা হোক। প্রয়োজনে বনসাইগুলো মন্ত্রীদের বা মেয়রদের গিফট করা হোক, তারা তাদের বাসায় সাজিয়ে রাখুন, আপত্তি নেই। তাতে ভিনাইল গ্রুপের ভবিষ্যতে লাভ হবে। এমনিতে বাংলাদেশে কত টাকা অপচয় হয়, বনসাইয়ের পেছনের তিন কোটি টাকাও না হয় জলেই গেল।
আমরা চাই আমাদের চেনা ঢাকা, সবুজ ঢাকা। বিদেশের মত দেখতে অচেনা ঢাকা নয়।
পুনশ্চ: এই লেখা শেষ করার পর দেখলাম, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, এয়ারপোর্ট রোডে আর বনসাই না লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ধন্যবাদ ওবায়দুল কাদেরকে। জননেতা জনগণের আবেগটা ধরতে পেরেছেন। তবে যে বনসাইগুলো লাগানো হয়েছে, সেগুলোও উপড়ে ফেলার দাবি জানাচ্ছি।
এসইউ/এমএস