মতামত

যানজটের ক্ষতির দায় নেবে কে?

যানজট এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুঃখজনক হচ্ছে দিন দিন তা বাড়ছে বৈ কমছে না। বর্ষা মৌসুমে রাজধানী প্রায় স্থবির হয়ে থাকছে। থেমে চলছে সব ধরনের যানবাহন। মানুষের দুর্ভোগের কোনো অন্ত নেই। কিন্তু এ থেকে পরিত্রাণের সহসা কোনো পথ দেখা যাচ্ছে না। উন্নয়ন অগ্রগতিতে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার। কিন্তু অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র রাজধানী ঢাকাকে অচল রেখে কোনো উন্নয়নই আখেরে গতি পাবে না। উন্নয়ন অগ্রগতির সর্বাগ্রে রাখা উচিত যানজটমুক্ত সচল ঢাকার মহাপরিকল্পনা। 

Advertisement

উন্নয়ন অগ্রগতির সঙ্গে গাড়ির সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু বাস্তার বেহাল দশা যদি পূর্বাবস্থায় থাকে তাহলে গাড়ি-ঘোড়া বাড়লেই কী লাভ। প্রতিদিনই রাস্তায় নামছে অসংখ্য গাড়ি। কিন্তু সে অনুযায়ী রাস্তাঘাট কি বাড়ছে। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কি নিশ্চিত হচ্ছে। ট্রাফিক ব্যবস্থা কি আধুনিকায়ন হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা তো কম হলো না। অটো সিগন্যাল বাতি লাগানো হল। কদিন পরই সব নষ্ট। আবার ম্যানুয়াল। হাতের ইশারায় গাড়ি থামে আর চলে। একই রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের গাড়ি। রিক্সা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাক, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। জ্যামে পড়লে সবারই একই দশা। যদিও গুরুত্বভেদে জরুরি ভিত্তিতে কিছু গাড়ি চলাচলের কথা। কিন্তু রাস্তা তো একই। কিভাবে চলবে? ব্যতিক্রম দেখা যায় শুধু ভিআইপি, ও ভিভিআইপিদের বেলায়। তখন রাস্তা ফাঁকা হয়ে যায় মুহূর্তেই। আর এর জের টানতে নগরবাসীকে দুর্বিষহ যানজটে আটকা থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। 

সাম্প্রতিক এক গবেষণা রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে,  রাজধানী ঢাকায় যানজটের কারণে দিনে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। গত ১০ বছরে যানচলাচলের গড় গতি প্রতি ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার থেকে ৭ কিলোমিটার পর্যন্ত নেমে এসেছে। যা পায়ে হেঁটে চলার গড় গতি (৫ কি.মি.) হতে একটু বেশি। বাংলাদেশের শহুরে জনসংখ্যার ৩৬ শতাংশ বৃহত্তর ঢাকায় বাস করে। ঢাকা এখন হয়ে উঠেছে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর অন্যতম। উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে বাংলাদেশকে অবশ্যই ঢাকার শহরায়ন সম্প্রসারণে যথাযথ ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে। গত বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ২০৩৫ সালে ঢাকার উন্নয়ন শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ‘টোয়ার্ডস গ্রেট ঢাকা: এ নিউ আরবান ডেভেলপমেন্ট প্যারাডাইম ইস্টওয়ার্ড’ শীর্ষক খসড়া প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মহানগরীর দ্রুত সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার নগর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সামঞ্জস্য রাখা হয়নি। ফলে একটি বিশৃঙ্খল ও অসম নগরায়ণ প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে উঠছে ঢাকা। যথেষ্ট পরিকল্পনার অভাবে অত্যধিক ঘনবসতি, নিম্নমানের বসবাসযোগ্যতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এবং বন্যা ও ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় ৩৫ লাখ বস্তিবাসীসহ অনেক অধিবাসী প্রায়ই মৌলিক সেবা, অবকাঠামো এবং সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

যানজট নিয়ে কথা কম হয়নি। এবার সময় এসেছে কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়ার।  প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ করেও যানজট কমানো যায়। সবকিছু ঢাকাতেই হতে হবে-এই পুরনো ধ্যানধারণা থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে। শরীরের সকল মাংসপিণ্ড মুখে চলে আসার নাম যেমন স্বাস্থ্য নয় তেমনি রাজধানীতেই সবকিছু করার নামও উন্নয়ন নয়। যানজটে জট পাকিয়ে যাচ্ছে সবকিছুর। এটি  আমাদের নীতি নির্ধারকরা যতো তাড়াতাড়ি বুঝবেন দেশ ও জাতির জন্য তা ততোই মঙ্গলজনক হবে।

Advertisement

এইচআর/এমএস